ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইংলিশদের বিপক্ষে আবারও উজ্জ্বল তামিম

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০১৬

ইংলিশদের বিপক্ষে আবারও উজ্জ্বল তামিম

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ তামিম ইকবালের প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। বাঁ-হাতি ওপেনার এমনিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। ইংলিশদের পেলে বেশি করে জ্বলে ওঠেন, সেটি আরও একবার দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। জন্মস্থানে দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন। তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি, তবে চট্টগ্রাম টেস্টে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৭৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। যার ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস পাচ্ছে টাইগাররা। প্রিয় প্রতিপক্ষ, প্রিয় মাঠÑ দ্বিতীয় দিন সকালে এ্যালিস্টার কুকদের ২৯৩ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যখন ওপেনিংয়ে নামেন, গ্যালারিতে ভক্তদের হাতে তামিম-লেখা প্ল্যাকার্ড। ছোট্ট ছেলের গালেও-তামিম, টিভি ক্যামেরা বারবারই সেটি দেখাচ্ছিল। ঘরের মাটিতে ন্যাটা ওপেনার কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন, ভাষ্যকাররা বার বার সেটি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। প্রথম দিন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ঘূর্ণি বিষে নীল করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব-আল হাসানরা। কাল সকালে অতিথিদের শেষ তিন উইকেটের দুটিই নেন অপর স্পিনার তাইজুল ইসলাম, অপরটি মেহেদীর। যথারীতি পিচের এমন টার্ন দেখে দ্রুতই স্পিন আক্রমণে আনেন কুক। মঈন আলী ও আদীল রশিদদের বিরুদ্ধে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে এগোচ্ছিলেন ইমরুল। সে কারণেই ২১ রান করে মঈনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলের রান তখন ২৯। একই রানে টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক (০) আউট হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তখনই মাহামুদুল্লাহ রিয়াদকে (৩৮) নিয়ে তামিমের প্রতিরোধ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৯.৩ ওভারে ৯০ রান যোগ করেন। ধৈর্যের সঙ্গে দারুণ খেলতে থাকেন। মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ১১.২ ওভারে দলকে আরও মূল্যবান ৪৪ রান এনে দেন। মনে হচ্ছিল, ‘লোকাল বয়’ ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিটা পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু ৫৫তম ওভারে ভাঙ্গে তামিমের-প্রতিরোধ। ঘাতক দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর টেস্টে ফেরা ৩৯ বছর বয়সী স্পিনার গ্যারেথ বেটি। ডানহাতি অফস্পিনারের জোরের ওপর করা বলটা তামিমের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে জনি বেয়ারস্টের গ্লাভসে জমা হয়। টাইগার তারকা তার ১৭৯ বলের ইনিংসটি ৭টি চার দিয়ে সাজিয়েছেন। স্ট্রাইক রেট ৪৩.৫৭Ñ মোটেই তামিমসুলভ নয়। তবে মঈন, রশীদ আর বেটিত্রয় যেভাবে স্পিনের জাল বুনে চেপে ধরছিলেন, তার বিপরীতে শক্ত ভিত গড়ে দিতে ইনিংসটির মূল্য অনেক। ৪৩তম টেস্টে তামিমের এটি ১৯ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। এই টেস্টের আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪টি ম্যাচ খেলেছেন। সবই সেই ২০১০ সালে। দুটি দেশে ও দুটি প্রতিপক্ষের মাটিতে। ৮ ইনিংসে ক্যারিয়ারের ৭ সেঞ্চুরির দুটিই করেছেন এই ইংলিশদের বিপক্ষে। কালকেরটি নিয়ে মোট হাফ সেঞ্চুরি ৫টি। গড় ৬৪.৭৭। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১০৮। এতেই বোঝা যায়, ২৭ বছর বয়সীর প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংলিশরা কতটা প্রিয়! আর ভেন্যু? এ নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের শেষ ৮ ইনিংসের ৬টিতেই হাফ সেঞ্চুরি পেলেন তামিম। ইনিংসগুলো দেখুনÑ ১০৯, ৬৫, ৫, ৭৬, ৬১*, ৫৭, ৪৫ ও ৭৮! শেষ পাঁচ টেস্ট ইনিংসে ৩ হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি ১টি!! এই চট্টগ্রামেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিমের প্রথম টেস্ট ইনিংসটা ছিল ৮৬ রানের। সেটা ২০১০ সালের মার্চে। ইংলিশদের বিপক্ষে ওই বছরই জুনে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন। ম্যানচেস্টারে করেন ১০৮ রান! ঘরের মাঠ, কী পরের মাঠ? তার আগে ১০৩ রান করে নাম লেখান লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। আফসোস, এমন প্রিয় দলের বিপক্ষে হাতের কাছে এসেও আরেকটি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ছোঁয়া হলো না! তবে এই ৭৮ রানের ইনিংসের মধ্য দিয়ে মুশফিকুর রহীমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরের মাটিতে ২ হাজার টেস্ট রান পূর্ণ করেন তামিম (২০৫৪)। সাদা পোশাকের অধিনায়কের রান ২১০৫। ডুনেডিনে ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই ৫৩ ও ৮৪ রানের চমৎকার দুটি ইনিংস খেলে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তামিম। ৪৩ ম্যাচে করেছেন ৩১৯৬ রান।
×