ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইমরানের ডাক্তারী পড়ায় বাধা শুধু অর্থ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২২ অক্টোবর ২০১৬

ইমরানের ডাক্তারী পড়ায় বাধা  শুধু অর্থ

শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে ॥ ইমরান জীবনে কোনদিন প্রাইভেট পড়েননি। একদিনের জন্য কোচিং করেননি। কেবলমাত্র নিজের মেধা আর অধ্যবসায়ের জোরে এবার নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে তার ভর্তি ও পড়াশুনা অনিশ্চিত। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন শুরুতেই ভেঙ্গে যেতে বসেছে। ইমরানের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের সতীরাম গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই কঠোর দারিদ্রের মাঝে বড় হয়ে উঠেছেন। বাবা আলমাছ হাওলাদার পেশায় দিনমজুর। নিজের এক শতক কৃষি জমি নেই। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে কোনমতে সংসার চালান। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। বাবা-মায়ের খোঁজ নেয় না। বড় দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। ইমরানের মা সেতারা বেগম আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ইমরান ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। কিন্তু দারিদ্রের কারণে শহরে থেকে পড়াশুনা করার সুযোগ হয়নি। নিজ গ্রামের পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাস করেছেন। গলাচিপা সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে গত বছর ৪.৮৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। পড়াশুনার শুরু থেকে স্বপ্ন দেখেছেন চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করার। সে লক্ষ্যে গত বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ঢাকায় প্রাইভেট পড়িয়ে নিজ পড়ার খরচ যোগাচ্ছিলেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে অটুট ছিলেন, তাই একদিনের জন্য কোচিং না করেও এবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ইমরান বলেন, ২০ অক্টোবর থেকে নোয়াখালী মেডিক্যালে ভর্তি শুরু হয়েছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি হতে হবে। কেবলমাত্র ভর্তি হতেই প্রয়োজন ২০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যাতায়াত ও বইপত্রসহ আনুষাঙ্গিক আরও টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমার কাছে কোন অর্থ নেই। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি হতে না পারলে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। ইমরানের বাবা আলমাছ হাওলাদার বলেন, গ্রামে দিনমজুরি করে এক- দেড় শ’ টাকার বেশি জোটে না। তাও প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। তাই ছেলেকে পড়াশুনার জন্য কোনদিন একটি টাকাও দিতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে স্কুলে যেতে প্রতিদিন ছেলে ইমরান ৪-৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছে। গলাচিপা ডিগ্রী কলেজে যেতে আরও বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইমরান ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে। এখন স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। মা সেতারা বেগম বলেন, মোরও ইচ্ছা আছেলে পোলাডা ডাক্তার হইবে। মাইনষের স্যাবা করবে। কিন্তু কি করুমু। মোগো নিজের বাড়িঘরও নাই যে, হেইয়া বেইচ্যা পোলারে ডাক্তার বানামু।
×