ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ বছর পর চালু নেত্রকোনার ‘বাংলা’ রেলস্টেশন

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২২ অক্টোবর ২০১৬

২৫ বছর পর চালু নেত্রকোনার ‘বাংলা’ রেলস্টেশন

রাজন ভট্টাচার্য/সঞ্জয় সরকার ॥ জনকণ্ঠসহ একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার থেকে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেল পথের ‘বাংলা’ রেল স্টেশনটি পুনরায় চালু হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে এলাকাবাসীর দীর্ঘ পঁচিশ বছরের প্রতীক্ষার। পূরণ হয়েছে রেলমন্ত্রী, স্থানীয় এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীসহ রেলের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিও। জানা গেছে, টানা পঁচিশ বছর পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ২৬২নং লোকাল ট্রেনটি বাংলা রেল স্টেশনে থামে। এ সময় স্টেশনে অপেক্ষমাণ এলাকাবাসী ট্রেনটিকে স্বাগত জানায়। প্রথম দিনই বেশ কিছু যাত্রী টিকেট কেটে ট্রেনে চড়েন। অনেকেই যাত্রী না হয়েও আনন্দে টিকেট কাটেন। একইভাবে সকাল সাড়ে ১০টায় মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহগামী ২৬১নং লোকাল ট্রেনটিও এসে থামে। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ২৬৪নং লোকাল ট্রেন এবং সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে একই রুটের ২৬৩নং লোকাল ট্রেনটি বাংলা স্টেশনে থামানো হয়। রেলওয়ে মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, আপাতত স্টেশনটিতে চারটি লোকাল ট্রেন থামবে। এক শিফট অর্থাৎ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টেশনের কার্যক্রম চলবে। পরবর্তীতে পুরোপুরি চালু করা ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান তিনি। বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে এই মুহূর্তে স্টেশনটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। স্টেশনে বুকিং সহকারীর দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে একজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোঃ রোস্তম আলী নামে ওই কর্মচারীই স্টেশনটির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এছাড়া তাকে সহায়তা করবেন নেত্রকোনা কোর্ট স্টেশনের ইনচার্জ সৈয়দ রাকিবুজ্জামান। সৈয়দ রাকিবুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, আপাতত ওই দুই জোড়া লোকাল ট্রেনই বাংলা স্টেশনে থামবে। আন্তঃনগর ট্রেনের বিষয়ে রেল বিভাগ পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে স্টেশনটি পুনরায় চালু হওয়ায় এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রনি খান নামে বাংলা এলাকার এক কলেজ ছাত্র জানান, আমরা এখন সহজেই নেত্রকোনা শহরে যাতায়াত করতে পারব। স্টেশনটি বন্ধ থাকায় আমরা এতদিন রিক্সা, বাস বা ইজিবাইকে যাতায়াত করতাম। এতে আমার সময় এবং অর্থ দুটোরই অপচয় হতো। স্থানীয় বাসিন্দা সুজন তোপদার জানান, ট্রেন থামার খবরে ভোর থেকে অসংখ্য মানুষ স্টেশনে এসে ভিড় করেন। প্রথম দিনে যাত্রী সংখ্যাও ছিল সন্তোষজনক। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী নিতাই দাস জানান, স্টেশন চালু হওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত আরও সহজ হলো। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষ এখন এর সুফল পাবেন। অরেক ব্যবসায়ী সুকুমার সরকার জানান, ট্রেন থামবে। তাই ভোরে স্টেশনে চলে আসি। আনন্দে টিকেট কাটলাম। এখন থেকে আশাকরি সকল যাত্রী টিকেট কেটে ট্রেনে ওঠবেন। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে যখন ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রেল পথ চালু হয়Ñ তখনই নেত্রকোনা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাংলা বাজারের এ রেল স্টেশনটি স্থাপিত হয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি সম্পূর্ণ চালু ছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালে রেল কর্র্তৃপক্ষ অব্যাহত লোকসানের কারণে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় যাত্রী ওঠানো-নামানোর সুবিধাও। অথচ বছর চারেক আগেও (২০১২ সালে) স্টেশনটির পুরনো ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন এবং প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়। স্টেশনটি চালু করার দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা বহুবার মানববন্ধন করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। নেত্রকোনা জেলা সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে একাধিকবার এ বিষয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সাংবাদিক নেতাদের অনেকেই এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তা ফের কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
×