ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাটক সঙ্গীতসহ বর্ণাঢ্য পরিবেশনা, দুই বাংলার সেতুবন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২২ অক্টোবর ২০১৬

নাটক সঙ্গীতসহ বর্ণাঢ্য  পরিবেশনা, দুই  বাংলার সেতুবন্ধ

মোরসালিন মিজান ॥ দুই বাংলার নাটক। উন্নত প্রযোজনা। বিখ্যাত দলগুলো আছে। সুযোগ পেয়েছে অপেক্ষাকৃত নতুন কিছু দল। শিল্পকলা একাডেমির তিন তিনটি মঞ্চে একই সঙ্গে আলো জ্বলছে। ভেতরে যেমন উৎসবের রং, বাইরেও। জাতীয় নাট্যশালার সামনে আবার উন্মুক্ত মঞ্চ। এখানে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তির পরিবেশনা। সব মিলিয়ে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৬। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পঞ্চমবারের মতো উৎসব আয়োজন করেছে গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব পর্ষদ। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের উৎসব। বিকেলে উৎসবস্থলে গিয়ে দেখা যায় দারুণ সাজ সাজ রব। লোকজ ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে বহিরাঙ্গন। কাঁচা বাঁশের ফটক দূর থেকে দৃশ্যমান হয়। সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠলে গ্রামীণ জনজীবনের ছবি। আলোকসজ্জা। প্রথম দিন তার চেয়ে বেশি চোখে পড়ল সংস্কৃতিপ্রেমীদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি। বিভিন্ন অঙ্গনের পরিচিত মুখগুলোর ছোটাছুটি হৈ-হুল্লোড় গোটা এলাকায় নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। বরেণ্যরাও এসেছিলেন সময়মতো। সন্ধ্যার আগে আগে উৎসবস্থলে এসে পৌঁছান দেশের খ্যাতিমান মঞ্চ তারকা ফেরদৌসী মজুমদার ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন রামেন্দু মজুমদার। গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, নাটকের মানুষ ঝুনা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফসহ অন্যরা এসেছিলেন। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে এসেছিলেন সদ্যপ্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিণী লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক, পুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হকসহ পরিবারের সদস্যরা। তারও আগে কৌতূহলী চোখ নিয়ে একাডেমি চত্বর ঘুরে দেখেন ভারতের নাট্যদল ‘হ-য-ব-র-ল’র সদস্যরা। এভাবে ক্রমেই লোকসমাগম বাড়তে থাকে। এক সময় চলে আসেন উৎসবের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও। সকলের উপস্থিতিতে সাড়ে ছয়টার কিছু আগে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় বাংলার ঢোল বেজে ওঠে। শুরু হয় লোকনৃত্য। বিশাল একটি দল মঞ্চের বর্ধিত অংশ ও দর্শক সারির সামনের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে সুন্দর কোরিওগ্রাফি উপহার দেয়। ক্ষণকালের আয়োজন হলেও নাচের মুদ্রা আর গানের সুরে উৎসবের আবহটা তৈরি হয়ে যায়। ততক্ষণে অবশ্য মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তারা। উৎসবের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ অতিথিদের নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। এরপর নাতিদীর্ঘ আলোচনা। উৎসব উদ্বোধন করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারা নাটক। উৎসবের মাধ্যমে চমৎকার একটি আদান-প্রদান হবে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও নিবিড় হবে। গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেন রামেন্দু মজুমদার। বলেন, প্রযোজনাগুলো আগে দেখে তারপর ভারত থেকে নাট্যদল আনতে হবে। যদি প্রযোজনা খারাপ হয়, তাহলে ভারতের নাটক সম্পর্কে আমাদের খারাপ ধারণার জন্ম নেবে। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, নাটক ছিল সৈয়দ শামসুল হকের প্রাণ। স্বপনে-জাগরণে-বাস্তবে তিনি সব সময় নাটক নিয়েই মাতামাতি করতেন। দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, বাবা প্রথমে একজন কবি, তারপর একজন নাট্যকার। তিনি তার দুই ভালবাসাকে এক করেছেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের হ-য-ব-র-ল নাট্যদলের নাটক ‘ঈপ্সা’। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ছিল প্রাঙ্গণে মোর প্রযোজনা ‘ঈর্ষা’। স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় কণ্ঠশীলনের ‘যা নেই ভারতে’। আজ শনিবার মূল হলে মঞ্চস্থ হবে যশোরের বিবর্তন নাট্যদলের ‘রাজা প্রতাপাদিত্য’, পরীক্ষণ থিয়েটার হলে থাকবে সময়ের ‘শেষ সংলাপ’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে চারুনীড়মের ‘ডেড পিকক’। উৎসবের বিভিন্ন দিনে ভারতের ৩টি, ঢাকার ২৫টি ও ঢাকার বাইরের ২টি নাট্যদলসহ মোট ৩০টি নাট্যদলের নাটক মঞ্চস্থ হবে। উন্মুক্ত মঞ্চে থাকবে ৫৩টি সংগঠনের আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য ও পথনাটক পরিবেশনা। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব চলবে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। নাট্য মঞ্চায়ন হবে যথারীতি সন্ধ্যা ৭টা থেকে। উৎসব চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
×