ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্টে এক শ’ কেজি ওজনের তালা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২২ অক্টোবর ২০১৬

সুপ্রীমকোর্টে এক শ’ কেজি ওজনের তালা

আরাফাত মুন্না ॥ ‘তালা’ কোন কিছু আবদ্ধ বা বেষ্টনী করে রাখতে বিশেষ ধরনের একটি যান্ত্রিক বা বৈদ্যুতিক ডিভাইস যা কোন ভৌত বস্তু (যেমন চাবি, চাবিকার্ড, আঙ্গুলের ছাপ বা নিরাপত্তা টোকেন) বা গোপনীয় তথ্যের (যেমন কীকোড বা শব্দচাবি) দ্বারা খোলা যায়। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে মিশরীয়রাই প্রথম তালা-চাবির ব্যবহার শুরু করে। যদিও তা বর্তমান সময়ের মতো আধুনিক নয়, ছিল কাঠ নির্মিত। তালা নিয়ে অনেক ইতিহাসও রয়েছে। ফ্রান্সে পন দেস আর্ট ব্রিজ তালাবন্দী ভালবাসার নিদর্শনের কথা নিশ্চই অনেকেই জানেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে প্রেমকে চীরদিনের মতো বেঁধে রাখতে তালা ঝুলান যুগলেরা। তবে এবার একটু ভিন্ন কাজে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ১০০ কেজি ওজনের একটি তালার ব্যবহার শুরু করেছে। তালাটি কোন কক্ষের দরজায় ঝোলানো নেই, আবার নেই কোন আলমারির দরজায়। এই তালায় তালাবন্দী করে রাখা হয় সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন দফতরের চার হাজার চাবি। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ থেকে শুরু করে হাইকোর্ট বিভাগ এবং পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, আইনজীবী সমিতি ভবন, অতিরিক্ত (এ্যানেক্স) ভবনসহ প্রধান বিচারপতি, হাইকোর্ট শাখার বিচারপতি, রেজিস্ট্রারগণ, নেজারত এবং বিভিন্ন শাখার সব চাবি এই একটি তালার ভেতর (তালা আকৃতির আলমারি) আবদ্ধ থাকে। সেখান থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় চাবি বিতরণ শুরু করে চলে সারাদিন। আবার প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব চাবি জমা করা হয়। তারপর সব চাবি এক সঙ্গে তালাবদ্ধ করে প্রায় ১০ ফুট উঁচু ও পাঁচ ফুট চওড়া এই একশ কেজি ওজনের তালা আকৃতির আলমারির ভেতরে রাখা হয়। চাবিগুলো জমা দেয়া হয় এখানে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিকট। এখানে শিফট অনুযায়ী তিনজন পর্যায়ক্রমে (ডিউটি) দায়িত্ব পালন করে। তারা হলেন রাসেল আহমেদ (২), আরশাদুল আলম (বুলবুল) এবং দিলিপ কুমার দাস। এছাড়া এখানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন মোঃ খোকন কাজী। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোঁসাইরহাটে। খোকন জনকণ্ঠকে জানান, সম্ভত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তালা এটি। একশ কেজি ওজনের এই তালার ভেতরে চার হাজার চাবি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এই তালার (আলমারির) ভেতরের চাবির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন যারা তারা এর তদারকি করেন। শিডিউল নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন রাসেল আহমেদ, আরশাদুল আলম (বুলবুল) এবং দিলিপ কুমার দাস। বরিশালের পিরোজপুর জেলার সন্তান দিলিপ কুমার দাস বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টের মূল ভবনের নিচতলার ‘চাবি গেট’ সংলগ্ন বিশাল আকৃতির ধাতব তালাটির দায়িত্বে রয়েছেন। বিশাল আকৃতির ধাতব তালাটিকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখেন তিনজন মিলে। সারাদিন এই বিশাল তালার পাশে বসে চাবির পাহারায় নিয়োজিত থাকার অনুভূতি জানতে চাইলে দিলিপ কুমার দাস বলেন, খারাপ লাগে না। সময় কেটে যায় গল্প করে এবং চাবি জমা দিতে নিতেই। তবে কিন্তু মাথায় একটা দায়িত্ব ভারি করে রাখে। কারণ এখানকার প্রতিটি চাবিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই চাবিগুলোর পাহারার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের অধিবাসী রাসেল জানান, দেখতে তালার মতো হলেও এটি আসলে একটি আলমারি। এর ভেতরে সুপ্রীমকোর্টের মূল পুরাতন এবং এনেক্স ভবনের কোর্ট ও অফিস কক্ষের কয়েক হাজার হাজার চাবি সংরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, এখানে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তাদের নিকট থেকে সকাল ৯টার মধ্যেই চাবি বুঝে নেয়া শুরু হয়। আবার বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চাবি জমা দিয়ে যান সংশ্লিষ্টরা। আমরা এই বিশাল তালার মধ্যে সারিবদ্ধভাবে চাবিগুলো সাজিয়ে রাখি। সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকা খোকন কাজী বলেন, সব সময় মাথা ঠা-া রাখার চেষ্টা করি যাতে নির্দিষ্ট কোর্ট কক্ষের চাবি ঠিকভাবে দেয়া যায়।
×