ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের নৈপুণ্যে দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ অক্টোবর ২০১৬

তামিমের নৈপুণ্যে দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ স্পিনাররা কী ভেল্কিই না দেখালেন। মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামের স্পিন ঘূর্ণির সামনে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন। এ তিন স্পিনারই ইংল্যান্ডকে ২৯৩ রানে অলআউট করে দিলেন! এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। প্রথম দিনটিতে স্পিনারদের দাপটে দিনটি নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে আবারও দিনটি বাংলাদেশেরই হয়ে থাকল। তামিম ইকবালের ৭৮ রানের পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩৮, মুশফিকুর রহীমের ৪৮ ও সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৩১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষে ২২১ রান করে বাংলাদেশ। তবে হারায় ৫ উইকেট। বাংলাদেশ ৭২ রানে পিছিয়েও আছে। আজ সাকিবের সঙ্গে ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে ব্যাট হাতে নামা শফিউল ইসলাম তৃতীয় দিনের শুরুটা করবেন। দ্বিতীয় দিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ২৯ রানেই ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ছন্নছাড়া হয়ে পড়েননি। তামিম ইকবাল তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতাই বজায় রাখলেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ইনিংসে শতক করেছিলেন। সাড়ে ছয় বছর পর আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে ৭৮ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস উপহার দিলেন। শুধু কি তাই, এ টেস্টসহ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ পর্যন্ত তামিম ৫টি টেস্ট খেলে, সবটিতেই অন্তত একটি ইনিংসে ৫০ উর্ধ রান করার রেকর্ডও গড়েছেন। তামিম আবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রানের মালিকও হয়ে গেলেন। তার ব্যাটিংয়েই মূলত শক্ত ভিত গড়ে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও তামিমকে যোগ্য সঙ্গই দেন। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ৯০ রানের জুটি গড়েন। ১১৯ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ (৩৮) আউট হয়ে গেলে ছন্দপতন ঘটে। ১৬৩ রানে গিয়ে তামিমও আউট হয়ে যান। তবে ধৈর্যের পরিচয় দেন এ ওপেনার। ১৭৯ বলে ৭ চারে ৭৮ রান করেন তামিম। এরপর মুশফিক-সাকিব মিলে দিন শেষ করারই সম্ভাবনা জাগান। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসেই ঘটে বিপত্তি। আর তিন ওভার মুশফিক উইকেটে থাকতে পারলেই হতো। তাহলে বাংলাদেশ যে ২২১ রান করে ৫ উইকেটে দিন শেষ করেছে, সেখানে লেখা থাকত ৪ উইকেট। তাতে সাকিবের সঙ্গে মুশফিকও ব্যাটিংয়ে থাকতেন। কিন্তু ৩ ওভার বাকি থাকতে ৪৮ রান করে আউট হয়ে যান মুশফিক। তার উইকেটটি নেন বেন স্টোকস। স্পিন স্বর্গে প্রথম টেস্টে এই প্রথম কোন পেসার উইকেট পান। স্পিনার মঈন আলী ২টি, আদিল রশিদ ও গ্যারেথ বেটি ১টি করে উইকেট নেন। আর ইংল্যান্ড ইনিংসে তো সব উইকেটই নেন বাংলাদেশ স্পিনাররা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুধুই স্পিন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ স্পিনারদের মধ্যে মিরাজ শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট তুলে নেন। অভিষেক ইনিংসে সোহাগ গাজীর (৬/৭৪) পর দ্বিতীয় সেরা বোলার হয়েছেন। ৮০ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। চট্টগ্রামে ইলিয়াস সানিকে (৬/৯৪) পেছনে ফেলে সেরা বোলার হয়েছেন। সাকিব যে আগেরদিনই ২ উইকেট নিয়েছেন। সেখানেই আটকে ছিলেন। তবে দ্বিতীয় দিনে তাইজুল নেন ২ উইকেট। এ তিন স্পিনার মিলেই ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট তুলে নেন। ১৯৮৭ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন হাল হয়েছিল ইংল্যান্ডের। স্পিনাররাই অলআউট করে দেয় ইংল্যান্ডকে। প্রায় ২৯ বছর পর আবার ইংল্যান্ড স্পিনারদের ঘূর্ণিতেই গুটিয়ে গেল। আগেরদিন ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান করেছিল ইংল্যান্ড। মিরাজ ৫টি ও সাকিব ২টি উইকেট নিয়েছিলেন। শুক্রবার দ্বিতীয় দিন ১৪ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি ইংলিশরা। হারিয়েছে ৩টি উইকেটও। যোগ করতে পেরেছে ৩৫ রান। আগেরদিন ব্যাট হাতে থাকা ক্রিস ওকসকে (৩৬) দিনের প্রথম বলেই আউট করেন তাইজুল। এরপর আদিল রশিদকেও (২৬) ফিরিয়ে দেন। ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি নেন মিরাজ। স্টুয়ার্ট ব্রডকে (১৩) সাজঘরে ফেরান মিরাজ। সেই সঙ্গে অভিষেক ইনিংসেই ৬ উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব গড়েন। এখন মিরাজের সামনে অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে আর ৪টি উইকেট নিতে হবে। পারবেন মিরাজ তা করতে? তা সময়ই বলবে। অবশ্য মিরাজ যা করেছেন, তাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ উজ্জ্বল নৈপুণ্যই দেখিয়েছে। এর আগে দুই ম্যাচের চারটি টেস্ট সিরিজ খেলে কখনই ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ৩০০ রানের নিচে অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার স্পিনারদের দক্ষতায় তা করে দেখাল। প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে ব্যাটসম্যানরাও তো দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন। বিশেষ করে তামিমের ইনিংসের পর এখন আশাও দেখা হচ্ছে। সেই আশা এগিয়ে যাওয়ার। এখন পর্যন্ত টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে লিড নিতে পারেনি বাংলাদেশ। আর ৭৩ রান করতে পারলেই সেটিও হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দিনটিও নিজেদের করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। এবার তৃতীয় দিনের পালা।
×