ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রস বর্ডার বাণিজ্য নীতিমালা তৈরি করছে নয়াদিল্লী

ভারতের যে কোন কোম্পানি থেকে বিদ্যুত কিনতে পারবে পিডিবি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ অক্টোবর ২০১৬

ভারতের যে কোন কোম্পানি থেকে বিদ্যুত কিনতে পারবে পিডিবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারত ক্রস বর্ডার বিদ্যুত বাণিজ্য নীতিমালা তৈরি করছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে ভারতের যে কোন কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুত কিনতে পারবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুত জ্বালানি বাণিজ্য নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত দুইদিনের এক কর্মশালায় শুক্রবার এ কথা জানানো হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড গবর্ন্যান্স (আইপেগ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইনস্টিটিউট যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবাধে বিদ্যুত এবং জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। কর্মশালায় বলা হয় কেবলমাত্র আঞ্চলিক সহযোগিতা দ্রুত উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হতে পারে। দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় সার্কভুক্ত ৮ দেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট ৩০ সরকারী কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ মশিউর রহমান বলেছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা গেলে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পাবেন। এই ধরনের বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা থেকে বড় দেশগুলোর তুলনায় ছোট দেশগুলো বেশি উপকৃত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিদ্যুত ও জ্বালানি সহায়তা সম্প্রসারণে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যুত বিনিময়কে উদাহরণ হিসেবে দেখছেন এই অঞ্চলের রাষ্ট্র প্রধানরা। অপেক্ষাকৃত কম জ্বালানি মজুদের দেশগুলো পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছে। নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যৌথভাবে জলবিদ্যুত উৎপাদনে ভারত এবং বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু জলবিদ্যুত উৎপাদনই নয় সঞ্চালনে দেশগুলো নিজস্ব ভূখ- ব্যবহার করার বিষয়েও সম্মত হয়েছে। সম্প্রতি ভারত থেকে দেশে ফিরে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ভারতের বেসরকারী খাত থেকে বাংলাদেশ আরও বিদ্যুত ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতের খোলাবাজারে প্রতিইউনিট বিদ্যুত বিক্রি হয় দুই টাকা ২০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে। বিদ্যুতের ক্রেতা প্রতি ঘণ্টায় সর্বনিম্ন এক মেগাওয়াট খোলাবাজার থেকে কিনতে পারে। তবে উভয় দেশের সরকারকে ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড’ বা আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্য উন্মুক্ত করতে হবে। এখন ভারত থেকে বাংলাদেশ যে বিদ্যুত ক্রয় করছে তা ওই দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত। দেশটি থেকে বাংলাদেশ এখন ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট খোলাবাজার থেকে কেনা হয়। ভারতের সরকারী প্রতিষ্ঠান এই বিদ্যুত কিনে দেয় বাংলাদেশকে। কোন ক্রেতা ভারতের কোন বেসরকারী উৎপাদনকারীর কাছ থেকে বিদ্যুত ক্রয় করলে ক্রেতাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান সরবরাহ লাইন থেকে ওই বিদ্যুত সরবরাহ করে নির্দিষ্ট বিতরণ কোম্পানি। কর্মশালায় প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা দ্রুত উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ গভীর সম্পর্ক বজায় রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ভারত ক্রস বর্ডার বিদ্যুত বাণিজ্য নীতিমালা করার পর পিডিবি ভারতের যে কোন কোম্পানি হতে বিদ্যুত ক্রয় করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যতম গতিশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল বিধায় দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের চাহিদা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের একটি আঞ্চলিক বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। নসরুল হামিদ বলেন, ভুটান বা নেপাল হতে জলবিদ্যুত আমদানির বিষয়টিও অনেকটা এগিয়েছে। তুর্কমেনিস্তান-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ভারত বা চীন-মিয়ানমার-ভারত গ্যাস নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইনস্টিটিউটের ডিন নায়োকী ইয়োশিনো। আইপেগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মুনীর খসরুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুত বিভাগের চেয়ারম্যান জেনারেল মোঃ আবদুল মুবীন বক্তৃতা করেন।
×