ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণিল সাজে পুরো ঢাকানগরী;###;দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ;###;সারাদেশ থেকে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এসেছেন;###;১২ দেশ থেকে বিদেশী অতিথিরা যোগ দিচ্ছেন;###;আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযুক্ত নতুন নেতৃত্ব গঠন করা হবে;###;সভাপতি পদ

সমৃদ্ধির রোডম্যাপ ॥ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু আজ, ঘোষণা হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ অক্টোবর ২০১৬

সমৃদ্ধির রোডম্যাপ ॥ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু আজ,  ঘোষণা হবে

উত্তম চক্রবর্তী ॥ জমকালো আয়োজন। চোখ ধাঁধানোও বটে। বাঙালী জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ শনিবার ও আগামীকাল রবিবার দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন। সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬৭ বছর বয়সী এ প্রাচীন দলটি ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’- এই মূল সেøাগান ধারণ করে আয়োজন করেছে এবারের রাজসিক সম্মেলন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যে দলটি নেতৃত্ব দিয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দলের সঙ্গে জন্মলগ্ন থেকেই আত্মিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন- এই আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে পুরো ঢাকা নগরী। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযুক্ত নতুন নেতৃত্ব গঠনের পাশাপাশি এবারের সম্মেলন থেকে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যেতে সুনির্দিষ্ট ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে প্রণীত গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে একদিকে দলের নেতাকর্মীদের জন্য যেমন থাকছে সাংগঠনিক পরিকল্পনা ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিক-নির্দেশনা, তেমনি দেশবাসীর জন্য থাকবে ‘ভিশন-২০২১ ও ২০৪১’ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ কী কী করতে চায় তার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বহুমাত্রিকতা, নান্দনিকতার এমন সমাহার ঘটেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশের অনুপম শৈল্পিক দৃশ্যপট ফুটে উঠেছে সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ, উপকণ্ঠ, জেলা-উপজেলায়। বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় এখন উদ্ভাসিত পুরো রাজধানী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, লেজার শোÑ আরও কত কিছু! কাউন্সিল ঘিরে দলটিতে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের জন্য পক্ষকালব্যাপী প্রস্তুতিপর্ব শেষ করেছে দলটি। আজ উদ্বোধনের পর আগামীকাল রবিবার গঠিত হবে তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। টানা অষ্টমবারের মতো সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনঃনির্বাচিত হচ্ছেনÑ এটি শতভাগ নিশ্চিত। তবে শেষ সময়ে সাধারণ সম্পাদক পদে নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বে থাকা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েই আলোচনা এখন তুঙ্গে। এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছেÑ একথা বেশ জোরের সঙ্গেই বলছেন কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতা। সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবর্তে এখন সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের পাল্লাটাই বেশি ভারি। দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কাউন্সিলর-ডেলিগেটরাও বলাবলি করছেন ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পুরনো না ‘নতুন রক্ত সঞ্চালনের’ জন্য অন্য কেউ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পদটিতে আসছেন তা আগামীকালই জাতির সামনে স্পষ্ট হবে। সূত্রগুলো বলছে, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আগামী নতুন নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও অনেক ‘চমক’ আনবেন। এমনকি গত কাউন্সিলে ‘সংস্কারপন্থী’ ইস্যুতে বাদ যাওয়া কিছু প্রবীণ নেতাও এবারের সম্মেলনে সম্মানিত হবেনÑ এমন গুঞ্জনও দলটির সর্বত্র। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণতান্ত্রিকভাবে পথচলা দেশের প্রাচীন এ দলটির সম্মেলন উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে, রাজসিক সাজে। ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সম্মেলন ঘিরে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা, ব্যানার, ফেস্টুন ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় বড় প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। নৌকাসদৃশ সুবিশাল মঞ্চ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ৬ হাজার ৫৭০ কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেটসহ প্রায় ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটবে আজকের সম্মেলনে। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানোর মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন ঢাকায়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের টেনশন এতটুকুও কমেনি। বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনার গুঞ্জনে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে গত কাউন্সিলের ঘটনা মাথায় রেখে ততই ঘুম হারাম অবস্থা হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থাকা নেতাদের। কার কপালে শেষ পর্যন্ত কী জুটবে, কেউ-ই তা নিশ্চিত নন। সবাই এখন তাকিয়ে আছে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আওয়ামী লীগের আজকের সম্মেলনের দিকে। একটানা ৩৫ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমানে মহীরুহে পরিণত হওয়া সুবিশাল এ দলে আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেমন ধরনের নেতৃত্ব আনছেন, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে পুরো দেশের মানুষ। কে পদোন্নতি পাচ্ছেন, কে পদ হারিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়বেনÑ এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভাপতি পদে কাউন্সিলররা মেনে নেবেন নাÑ এটা সর্বজনবিদিত। তাই আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা অষ্টমবারের মতো দলের সভানেত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হচ্ছেন। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৭৩-এর পরিবর্তে ৮১ জনে উন্নীত হওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা নিয়ে অতটা আগ্রহ নেই দলের নেতাকর্মীদের। বিগত সম্মেলনগুলোর ন্যায় এবারও সবার প্রবল আগ্রহ সাধারণ সম্পাদক পদটির দিকেই। আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি দলকে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং সারাদেশে নৌকার পক্ষে জনজোয়ার তুলতে প্রধানমন্ত্রী কার হাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পদটি তুলে দেবেনÑ এ নিয়েই সর্বত্র আলোচনা, গুঞ্জরন। প্রথমদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করছেনÑ এমনটা শোনা গেলেও তার নিষ্ক্রিয়তা, নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রবণতার কারণে সম্মেলনের প্রাক্কালে হঠাৎ করেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠেছে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা গুঞ্জন নয়, ওবায়দুল কাদেরই সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেনÑ এটি প্রায় জোরের সঙ্গেই বলছেন। বাকি নেতারা বলছেন, এখনও একটি দিন হাতে রয়েছে, শেষপর্যন্ত কী হয়, তা বলা যায় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ সভাপতিম-লীর দুই-তিনটি পদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সদস্যপদে নতুন কে স্থান পাচ্ছেন, কে বাদ পড়ছেনÑ এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই দলটিতে। সম্মেলনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, ভোটের বদলে সমঝোতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব গঠনে সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের কোন সম্ভাবনা নেই। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় এবং কাউন্সিলররা তা সমর্থন করেন। পরে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলররা সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠনের চাবিকাঠি দলের প্রধানের হাতেই থাকছে। অনুমাননির্ভর বিভিন্নজনের নাম এলেও নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রণে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। তিনি জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এ সময় ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকরাও একই সঙ্গে দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপনের পর ধারাবাহিকভাবে সংশোধিত গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রসহ গত কাউন্সিলের পর দলের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন নেয়া হবে। এছাড়া সাত বিভাগ থেকে একজন করে কাউন্সিলর বক্তব্য রাখবেন এবং ৭৩ সাংগঠনিক জেলার রিপোর্ট উপস্থাপিত হবে। এরপর অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম এবং কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। এরপর বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে আগত বিদেশী অতিথিদের বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেয়া হবে। সব শেষে সন্ধ্যায় খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মেলন কেন্দ্রের মূল প্যান্ডেলে স্থান সঙ্কুলানের অভাবে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের চতুর্দিকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বড় বড় ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আগামীকাল রবিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল ১০টায় শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী ওই অধিবেশনে বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তখন মূল মঞ্চ ছেড়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাদের সারিতে বসবেন শেখ হাসিনা। এরপর দলটির চারজন প্রবীণ নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করবেন। ওই দুই পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে নির্বাচন কমিশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। এরপর নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে দ্বিতীয় অধিবেশনের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। জানা গেছে, অষ্টমবারের মতো সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের কথা শুনবেন। এই দ্বিতীয় অধিবেশন থেকেই কাউন্সিলররা ৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ভার শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করবেন। এবার ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৮টি পদ যুক্ত করে ৮১ তে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান কমিটির বেশ কিছু পদ ফাঁকা আছে। নতুন পদ সৃষ্টি ও ফাঁকা পদ পূরণÑ সব মিলিয়ে এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় সংযোজনই আসছে। বাদও পড়তে পারেন অনেকে। কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা শুক্রবার বলেন, কে দলে আসবেন আর কে যাবেনÑ সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আজকের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিরবৈরী রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন চেম্বারের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। ১২টি দেশ থেকে ৫৫ বিদেশী অতিথি ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। বিদেশী অতিথিদের মধ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির নেতা বিনায়ক প্রভাকর, রাজ্যসভার সদস্য অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী, ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেসের গোলাম নবী আজাদ, বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর ছেলে অভিজিৎ মুখার্জী, তৃণমূল কংগ্রেসের পার্থ চ্যাটার্জী, চীনের ভাইস মিনিস্টার জেন শিয়াওসহ ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়ার এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি আজকের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে পুরো সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। দুই দিনের এ সম্মেলনে ৬ হাজার ৫৭০ কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নেবেন। গত দুই দিন ধরে প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টার থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিদের কার্ড দেয়া হয়। দুই দিনে তিন বেলা প্রায় ৫০ হাজার লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলেই এসএসএফ, সেনাবাহিনীসহ বিপুলসংখ্যক র‌্যাব সদস্য এবং প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে পুরো সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়েছে। এক-এগারোর ধাক্কার পর আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। ওই সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ একঝাঁক নতুন মুখ আসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এরপর সম্মেলন হয় ২০১২ সালে। দুই-একটা পরিবর্তন করে প্রায় আগের কমিটিই রেখে দেয়া হয়। ফলে বর্তমান কমিটির নেতারা প্রায় সবাই সাত বছর ধরে দায়িত্বে আছেন। সূত্রমতে, এবারের ২০তম সম্মেলনেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে একঝাঁক নতুন মুখ এনে চমক দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এবারের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর হয়ে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। দৃষ্টিনন্দন-সুবিশাল সম্মেলন মঞ্চ প্রস্তুত ॥ সম্মেলন ঘিরে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে। লম্বায় তা ১৫০ ফুট, চওড়ায় ৮৪ ফুট। মঞ্চের ছাদের উচ্চতা ৪২ ফুট। নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা জানান, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে। সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার পাতা হয়েছে। রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন। চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মঞ্চটি বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
×