ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মান্দায় চেয়ারম্যানের সালিশে দম্পতিকে গ্রামছাড়া!

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ২১ অক্টোবর ২০১৬

মান্দায় চেয়ারম্যানের সালিশে দম্পতিকে গ্রামছাড়া!

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ॥ নওগাঁর মান্দায় আপত্তিকর ঘটনার অভিযোগে আটক করে এক যুবকের কাছে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। ঘটনায় ওই ইউনিয়নের আন্দারিয়াপাড়া গ্রামের এক দম্পতিকে গ্রামছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ৫শ’ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই দম্পতিকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেছে চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী। স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা আন্দারিয়াপাড়া গ্রামে এক গৃহবধূর ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় রেজাউল ইসলাম নামে এক যুবককে আটক করে। আটক রেজাউল ইসলাম উপজেলার নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের বারিল্যা গ্রামের হুরমত আলীর ছেলে। তাকে মারপিটের পর রাত ১২ টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান গ্রামপুলিশ সামশুদ্দীন ও ইয়াদ আলীর মাধ্যমে ধরে নিয়ে গিয়ে রেজাউলকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটক করে রাখে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে এনিয়ে সালিশের আয়োজন করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সালিশে সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম ও আফসার আলী শাহ, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম, আহসান হাবীব ও তোফাজ্জল হোসেন, মাতবর আবু বাক্কার, আলমগীর হোসেন আলমসহ এলাকার অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, সালিশে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে রেজাউল ইসলামের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন, আবুল কালাম আজাদ, ইসমাইল হোসেন, আলিমুদ্দীন শেখ, আবুল কাসেমসহ আরো অনেকে জানান, বাদির অভিযোগ ছাড়াই চেয়ারম্যান একতরফা সালিশ করে রেজাউল ইসলামের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। অন্যদিকে ঘটনার শিকার গৃহবধূ ও তার স্বামীর সই-স্বাক্ষর নিয়ে তাদের অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করেন চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী। যাবার সময় তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে মাত্র ৫শ’ টাকা। এদিকে অভিযুক্ত যুবক রেজাউল ইসলামের শ্বশুর এনায়েতপুর গ্রামের শমসের আলী জানান, জামাইকে ছাড়াতে তিনি একমাত্র সম্বল ৩ কাঠা জমি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ওই টাকা নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলম শিলালের মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানকে দেয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়ে তিনি জিম্মায় ছাড়িয়ে নিয়েছেন রেজাউলকে। ভিকটিম ওই গৃহবধূ জানান, আত্মীয়তার সুত্র ধরে বুধবার সন্ধ্যায় রেজাউল ইসলাম তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাতে বিছানা করে দেয়ার সময় প্রতিবেশিরা সন্দেহের বশে তাদের আটক করে মারপিট করে। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন ওই গৃহবধূ। ভিকটিমের স্বামী মন্টু জানান, তিনি ভটভটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘটনার রাতে তিনি ধানের ভাড়া নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বয়লারে গিয়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তিনি বাড়ি ফেরেন। তার আগমনের সংবাদ জানতে পেরে চেয়ারম্যান দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে একটি কাগজে স্ত্রী ও তার স্বাক্ষর নেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই রাতেই চেয়ারম্যান ও তার লোকজন বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এসময় তার হাতে পথ খরচ ৫শ’ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। সালিশ বৈঠকে আদায় করা টাকা তাদের দেয়া হয়নি দাবি করেন তিনি। নিরাপত্তার অভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন নি বলেও জানান ঘটনার শিকার ওই দম্পতি। ওই দম্পতিকে হুমকি দিয়ে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, গ্রাম আদালতের ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করার এখতিয়ার রয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ চেষ্টার কোনো ঘটনায় দন্ড-জরিমানা করার এখতিয়ার গ্রাম আদালতের নেই। ঘটনায় এজাহার পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×