ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২১ অক্টোবর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) ওয়েটার : ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। পুরুষ : কি বলছো তুমি! ওয়েটার : হ্যাঁ আসলেও তাই। ছেলে : (উঁচু গলায় ঘোষণা)। নাটক এখন ক্লাইম্যাক্সে। মহিলা চমকে উঠে দাঁড়ায়, পরে পুরুষটি ও মেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কাঞ্চু : ( বিস্মিত হয়ে ) আবু ওরাও কি এ্যাকটিং-এর মধ্যে? নির্দেশক : (ভীষণ উত্তেজিত হয়ে) আমাকে শেষ করে দিলো। আমি শেষ। ঠিক আছে আমিও দেখছি। মেয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। ছেলে তার হাত চেপে ধরে। ওয়েটার দুই যুগলের দিকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ছেলে : কোথায় যাচ্ছে? মেয়ে : তুমি, তুমি এভাবে অমন করে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে... ছেলে : তুমিও যে মেরে গেছো। মেয়ে : মানে আমি তো... ছেলে : বসো। (মেয়েটি বিষণœ মনে বসে পড়ে।) নির্দেশক : মেয়েটি বসে। মেয়ে : তুমিও বসো। ( ছেলে বসে না) নির্দেশক : ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়েটার : (আগন্তুক যুগলকে) এই যে মেনু। পুরুষ : (বসতে বসতে) পরে বলছি। ওয়েটার চলে যায়। মহিলাকে বসো। ( মহিলা বসে।) ছেলে : তুমিও বসো, আমি এখুনি আসছি। ( সে যুগলের দিকে এগিয়ে যায়।) কিছু মনে করবেন না। (মহিলাকে দেখিয়ে) এর সঙ্গে এককালে আমার বন্ধুত্ব মানে পরিচয় ছিল... পুরুষ : এখন কি সেটা ঝালাই করে নিতে চান? ছেলে : না মানে অনেক দিন পর দেখা, তাই একটু আলাপ করতে... পুরুষ : ও। মহিলা : আমি কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না। পুরুষ : তাতে কি। পর পুরুষের সঙ্গে আলাপ করলে তোমার তো এমন কিছু যাবে আসবে না। মহিলা : আহ্ থামো তো। পুরুষ : ঠিক আছে তুমি আলাপ করতে থাকো, আমি কিছু মনে করবো না। বরং আমি না হয় একটু সরেই যাচ্ছি। (সে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়।) ছেলে : তুমি কি আমাকে সত্যি... মহিলা : বসো। ছেলে বসে। (এদিকে পুরুষ প্ল্যাটফর্মের কাছে এসে যায়।) নির্দেশক : আপনি এখানে কেন? পুরুষ : আপনি আবার কে? কাঞ্চু : ওই তো নির্দেশক। ওর কাজই তো খবরদারি করা। পুরুষ : হোয়াট এ ফান। বেশ মজার নাটক তো করছো তোমরা। নির্দেশক অভিনেত্রীর কাছে বসে থাকে। এমন তো দেখিনি কখনো। হাউ ফানি। নির্দেশক রাগে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সে কিছু বলার আগেইÑ মেয়ে : (নির্দেশককে) প্লিজ আমাদের একটু সময় দিন। নির্দেশক ক্ষিপ্ত। কিছু বলতে যেয়ে না বলে উত্তেজিতভাবে বেরিয়ে যায়। ওদিকে ছেলে নির্দেশকের আচরণে নিঃশব্দে হাসে। বসো, পুরুষটি বসে। ছেলে ও মহিলার সংলাপকালে পুরুষ ও মেয়ে ফ্রিজ হয়ে যায়। অথবা মূকাভিনয়ের মাধ্যমে কথা বলে। পুরুষ ও মেয়ের সংলাপ চলাকালেও ছেলে ও মহিলার এ্যাকশনও অনুরূপ হবে। ছেলে : কেমন আছো? মহিলা : ভালো। তুমি! ছেলে : ভালো নেই বলতে পারলে খুশি হতাম, কিন্তু সরি বলতে পারলাম না। মেয়ে : অনেক দিন পর দেখা হলো। ভালোই আছ মনে হচ্ছে। পুরুষ অবশ্যই। দিব্যি আছি। তুমি! মেয়ে : আমিও খুব ফূর্তিতে আছি। মহিলা : বিয়ে করেছো? ছেলে : না। মহিলা : কেন? ছেলে : কারণ তুমি যাতে বলতে পারো, তোমার জন্যেই। পুরুষ : ওই লোকটি তোমার স্বামী? মেয়ে : ছি; কি যে বলো। তুমি যা ছিলে, সে-ও তাই। পুরুষ : ওকি পালানোর কথা বলেছে? মেয়ে : হ্যাঁ তোমারই মতো। ছেলে : উনি কি তোমার স্বামী? মহিলা : হ্যাঁ। ছেলে : (দুঃখ পায়) ও। পালিয়ে গিয়েছিলে? মহিলা : হ্যাঁ তবে তোমারই মতো আইডিয়া ছিলো ওর। শেষে আমারটাই মেনে নিলো। দুঃখ পেলে। মেয়ে : তাহলে বিয়ে করতে হয়নি? পুরুষ : হ্যাঁ, হয়েছে। ওকে যখন পালানোর কথা বললাম ও রাজি হয়ে গেলো। তবে একটা শর্ত দিলো ও আমার গাইড হবে। মহিলা : তখন আমি ওর গাইড হয়ে সোজা নিয়ে কাজীর অফিসে। ছেলে : আর উনি কিছু বললেন না। মানে তোমাকে ছেড়ে ভেগে যেতে পারলেন না! মহিলা : ওকে আমি বুঝতেই দিইনি। পুরুষ : ও আমার প্যান্টের বেল্ট এমন করে ধরে রেখেছিলো যে ছাড়ানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো। তা ছাড়া কাজী অফিসে ঢুকেই নোটিশ দিয়েছিলো যে ভাগবার চেষ্টা করলেই ও চেঁচামেচি শুরু করবে। আর কাজী অফিসে সেদিন ভিড়ও ছিলো খুব। মেয়ে : তারাও বুঝি তোমাদের মতোই। পুরুষ : হ্যাঁ প্রায় সবাই আমাদের বয়সী। মহিলা : কেন হবে না, বলো। এই দিনে আয়োজন-ধুমধাম করে বিয়ে বসতে গেলে কতো খরচ বলো। ছেলে : ঝামেলাও কম নয়। মহিলা : সেজন্যই তো অমন ব্যবস্থা করে ফেললাম। পুরুষ : সেখান থেকে বেরিয়েই আমরা পলাতক। এদিকে দুজনের বাড়িতেই খোঁজ খোঁজ। আর আমরাও একটানা দু’সপ্তাহ এদিক-ওদিক কাটিয়ে পয়সা-কড়ি ফুরিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। মেয়ে : তোমার বাবা মা কিছু বলে নি? পুরুষ : বাবা নাকি বলেছিলেন, আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন। কিন্তু যেই আমরা দু’জন একসঙ্গে কদমবুসি করে ফেললাম ব্যাস সব ঠা-া। মেয়ে : বেশ মজা তো। পুরুষ : শুধু কি তাই। যেই বাবা শুনলেন, এই বিয়েতে মাত্র পঞ্চাশ টাকা খরচ হয়েছে। বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ছেলে : তোমার বাড়িতে এ নিয়ে আপত্তি উঠেনি? মহিলা : বাবা মা নাকি বলেছিলেন, অমন মেয়ের গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত। কিন্তু আমরা যখন কদমবুসি করলাম তখন সেকি দোয়া খয়রাতের ঘটা। বাবার কতো যে খরচ বেঁচে গেলো সেই কথা বলে মা খুশিতে কেঁদেই ফেললেন। নির্দেশক এতোক্ষণ রাগে অস্থিরতা প্রকাশ করছিলো। হঠাৎ উত্তেজিতভাবে উঠে দাঁড়ায়। একটুক্ষণ তাকায় দুই টেবিলের দিকে। তারপর খট খট করে বেরিয়ে যায়। (নির্দেশকের এই এ্যাকশনের সময় দুই টেবিলের কুশীলবরা ফ্রিজ হয়ে থাকবে।) মেয়ে : আমিও বলেছিলাম, আমাকে বিয়ে করে তারপর পালিয়ে যেতে। কিন্তু তুমি সেটা করলে না। পুরুষ : তুমি ওর মতো কাজ করিয়ে নিলেই পারতে। মেয়ে : (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমার কতো দিনের সাধ অমন একটা এ্যাডভেঞ্চার করবো কিন্তু... পুরুষ : এ্যাডভেঞ্চার বিয়ে দুটো তো এক সঙ্গে হয় না। মহিলা : ওকে নিয়ে তো পালিয়ে যেতে পারো। ছেলে : ওর ও বায়নাক্কা তোমারই মতো, বিয়ে তারপরে পালানো। মহিলা : মেয়েরা যতোই এদিক-ওদিক করুক না কেন পালানোর ব্যাপারে হিসেবটা অন্যরমই কষে থাকে। ছেলে : অথচ আমার কতোদিনের ইচ্ছে, অমন একটা এ্যাডভেঞ্চার করবো, আজো হলো না। পুরুষ : এ্যাডভেঞ্চার করতে চাইলে চলো না হয় এখন পালিয়ে যাই। মেয়ে : ওকে ডিভোর্স করো তাহলে। পুরুষ : ডিভোর্স! অনেক টাকার কাবিন! ছেলে : এখন পালানো যায় না। মহিলা : মানে আমাকে ইলোপ করবে? তারপর কি হবে! ছেলে : তারপর ফিরে আসবে। এমন তো... (চলবে)
×