ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ ও খায়রুল বাসার নির্ঝর

বব ডিলান ॥ মানবতার গানওয়ালা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২১ অক্টোবর ২০১৬

বব ডিলান ॥ মানবতার গানওয়ালা

বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিকদের পিছনে ফেলে ২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী বব ডিলান। মার্কিন নাগরিক ডিলান পুরস্কৃত হয়েছেন মূলত তার গীতিকাব্যের জন্যই। যদিও তিনি একাধারে গীতিকার, কবি, লেখক, সুরকার, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা। বব ডিলানের অসামান্য গীতিকাব্য ও অনবদ্য গায়কী ও তার যুদ্ধবিরোধী অবস্থান বিশ্বব্যাপী গত ছয় দশক থেকে প্রতিনিয়ত শান্তি ও শক্তির যে বাণী প্রচার করে চলেছে তার অসামান্য অবদান হিসেবেই তাকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হলো বলেই মনে করা হচ্ছে। তার গানের কথায় যে গীতিকাব্যরস ও ব্যঞ্জনা বিদ্যমান, সেটাই তাকে গণমানুষের কাছে গানের কবি হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। মহাকবি হোমারের ইলিয়াড-এ আমরা যে ছবি দেখতে পাই, সেই সময়কালের মানুষের যে-সব সমস্যা ও সঙ্কটের মুখোমুখি হতে দেখি, একইভাবে হুবহু মিলে যায় আজকের দিনের আমাদের এই আধুনিক সমাজ ও সময়ের সঙ্গে। যুদ্ধ, যুদ্ধ ও যুদ্ধের দামামা চারদিকে। ক্রোধ, কাপুরুষতা, কাম, প্রতিশোধ স্পৃহা, বীরত্বের প্রতি মোহ এসব আজও বিদ্যমান আমাদের সমাজে। হোমার যেমন দেবদেবীদের বিশাল ও নির্দয় ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে ইলিয়াড গেয়েছেন পরম মায়া ও মানবিকতা দিয়ে, সেই একই গীতিকাব্যের ছায়া দেখা যায় বব ডিলানের গানে। সুমনের কণ্ঠে ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়’ শোনার পর জেনেছিলাম মূল গানটি বব ডিলানের- ‘ ঐড়ি সধহু ৎড়ধফং সঁংঃ ধ সধহ ধিষশ ফড়হি’ থেকে নেয়া। কেবল সুমন নন, অঞ্জন দত্তের গানেও উঠে এসেছে তাঁর কথা। অঞ্জনের জনপ্রিয় গান পুরনো গিটারের সেই লাইনটির কথা মনে পড়ে? ‘জন লেননের সোচ্চার ভালোবাসা, বব ডিলানের অভিমান!’ ডিলানের প্রথম দিককার গানের কথা ছিল মূলত রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব সংবলিত। এগুলো তখনকার জনপ্রিয় ধারার কথিত নিয়ম বহির্ভূত ছিল এবং এ ধারার বিপরীত হিসেবে ধরা হতো। নিজস্ব সঙ্গীত ধারা প্রসারের পাশাপাশি তিনি আমেরিকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছেন। তিনি আমেরিকান লোকগীতি ও কান্ট্রি/ব্লুজ থেকে রক এ্যান্ড রোল, ইংরেজ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ সঙ্গীত, সুইং, ব্রডওয়ে, হার্ডরক এবং গসপেলও গেয়েছেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন বাঙালী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর শতবর্ষ পরে সাহিত্যে ১১৩তম নোবেল প্রাইজ পেলেন মার্কিন গায়ক ও গীতিকার রবার্ট এ্যালেন জিমারম্যান তথা বব ডিলান। রবিঠাকুরের গান লিখে নোবেল জয় আর ডিলানের একই ধারার কৃতিত্বে নোবেল জয়টা সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে ১৩ দিয়েই যেন একইসূত্রে গাঁথা হয়ে গেল। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এতদিন মূলত গল্পকার, ঔপন্যাসিক বা কবিদের জন্যই রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের কবিগুরু গীতিকাব্যের জন্য নোবেল পেলেও সাহিত্যের সামগ্রিক শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। তাই তাঁর নোবেল নিয়ে বিতর্ক নেই। কিন্তু বিতর্ক উঠছে বব ডিলানের বেলায়। যেসব লেখক সাহিত্যের সমগ্রতায় বিশ্বাস না করে খন্ডিত চিন্তাধারায় বিশ্বাসী তাঁরা ডিলানের নোবেল প্রাইজকে হেলাফেলায় উড়িয়ে দিতে চান। আবার ঊষর সাহিত্যভূমির বিশালতায় নাটক, উপন্যাস, গল্প, কবিতা, বা গান চর্চা করে যাঁরা একই আঙ্গিকের উদারশিল্প চাষ করেন তারা এই পুরস্কারকে সাধুবাদই জানাচ্ছেন। এর আগেও এসব ক্ষেত্রে এই ধরনের বিতর্কের নজির রয়েছে। এই মহান শিল্পীকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করতে গিয়ে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, ‘আমেরিকার সঙ্গীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির’ জন্য ৭৫ বছর বয়সী রক, ফোক, ফোক-রক, আরবান ফোকের এই কিংবদন্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে তারা। ডিলানকে উল্লেখ করা হচ্ছে, ইংরেজী বাচন রীতির ‘এক মহান কবি’ হিসেবে, নোবেল পুরস্কার যার প্রাপ্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সহযোগিতায় নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ পারফর্ম করেছিলেন বব ডিলানও। এতে তার সঙ্গী ছিলেন বিখ্যাত দ্য বিটল্স ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসন ও ভারতীয় সেতার বাদক পন্ডিত রবি শংকর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে, গণহত্যার প্রতিবাদে সেই সময়ের বিশ্ব কাঁপানো সঙ্গীত শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন এই কনসার্টে। মূলত শরণার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাহায্যার্থে এই কনসার্টের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেতার সম্রাট রবি শংকর। জর্জ হ্যারিসনের ‘বাংলাদেশ...বাংলাদেশ’ গানে ফুটে উঠেছে এই কনসার্টের কারণ এবং মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা। তাঁর সেই উদ্যোগ শুধু আর্থিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বের কথা, গণহত্যার কথা, লাখ লাখ শরণার্থীর যন্ত্রণার কথা ফুটে উঠেছে। ইউনিসেফ জর্জ হ্যারিসনের সেই অবদানের স্মরণে একটি বিশেষ ফান্ড তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘দ্য জর্জ হ্যারিসন ফান্ড ফর ইউনিসেফ’। সে সময় এই কনসার্টে অংশ নেন প-িত রবি শংকরের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত সরোদ শিল্পী ওস্তাদ আলি আকবর খান ও কিংবদন্তি তবলিয়া ওস্তাদ আল্লারাখা। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমের সঙ্গীতজগতের উজ্জ্বল সব নাম। এরিক ক্লাপটন, বব ডিলান, রিঙ্গো স্টার, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, টম এভান্সসহ আরও অনেকে। ২০০৫ সালে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র ডিভিডি প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশনায় ইউএসএ ফান্ড ফর ইউনিসেফের সভাপতি চার্লস জে. লিওনস জানান, কনসার্টের টিকিট থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার সংগ্রহ হয়েছিল। রবার্ট এ্যালেন জিমারম্যান (শাবতাই জিসেল বেন আব্রাহাম) ১৯৪১ সালের ২৪ মে তিনি আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের ডুলুথ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম বিটি স্টোন ও বাবার নাম আব্রাহাম জিমারম্যান। সঙ্গীতের প্রতি জিমারম্যান ওরফে ডিলানের আগ্রহ ১১ বছর বয়সে পিয়ানো বাজানোর মধ্য দিয়ে। ১৯৬০ সালের শুরুতে জিম হাইস্কুল শেষ করে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম গানের দল গড়ে তোলেন জিম, আর নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করেন বব ডিলান নামে। অবশ্য এ নামটি তার নিজের দেয়া নাম। ওয়েলসের বিখ্যাত কবি টমাস ডিলানের ‘টহফবৎ গরষশ ডড়ড়ফ, অ ঈযরষফ’ং ঈযৎরংঃসধং রহ ডধষবং প্রভৃতি কবিতা দ্বারা প্রভাবিত ও মুগ্ধ হয়ে তিনি প্রকৃত নাম রবার্ট আল্যান জিমারম্যান বদল করে বেছে নেন বব ডিলান নামটি। ওই সময়েই ডিলান এ্যাকুয়েস্টিক গিটার বাজিয়ে গাইতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গানের টানেই ডিলান চলে আসেন নিউজার্সিতে। সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সেই ১৯৫৯ সালে। মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউজে গান গাইতেন। সত্তরের দশকে তার লেখা ও গাওয়া গান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সঙ্গীত জগতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর ‘ব্লোইং ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ট রেইন’স এ-গনা ফল, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ গানগুলো দ্রোহ ও স্বাধীনতার ভাব বহন করে। এই গানগুলো যুদ্ধবিরোধী ও নাগরিক আন্দোলনের অনেক সংগঠন মর্ম সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৬১ সালে নিউইয়র্কের পথে যাত্রা শুরু করেন এবং তার পরের বছরে ১৯৬২ সালের ১৯ মার্চ ‘কলোম্বিয়া রেকর্ডস’ থেকে তার প্রথম এ্যালবাম ‘বব ডিলান’ প্রকাশ পায় এবং এ্যালবামটি প্রথম বছরেই ৫০০০ কপি বিক্রি হয়ে যায়। ষাটের দশকের শুরু থেকেই ডিলান খ্যাতির তুঙ্গে অবস্থান করতে থাকেন। সে সময় তার গাওয়া গান ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’, ‘দ্য টাইমস দে আর আ চেইঞ্জিং’ হয়ে ওঠে তরুণ সমাজের গণসঙ্গীত যা যুদ্ধবিরোধী গান হিসেবেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে। ডিলানের হাতের এক্যুস্টিক গিটার ও গলায় ঝোলান হারমোনিকা হয়ে ওঠে তার ট্রেডমার্ক। আর তিনি হয়ে ওঠেন তারুণ্যের অস্থিরতার প্রতীক, তার গান হয়ে ওঠে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রেরণা। তিনি তার স্বরচিত গীতিকবিতা গাওয়া ছাড়াও গেয়েছেন আমেরিকান কান্ট্রি সং, ফোক, ব্লুজ, ইংলিশ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, জ্যাজ মিউজিক, এমন কি হার্ডরকও। ডিলানের গানের লিরিকের আবেদন নিজ দেশ ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। তার যুদ্ধবিরোধী ও শান্তিকামী গানের প্রতিটি পঙক্তি মানুষের মনে আশার উদ্বেল জাগায় আর তাই তার গান হয়ে ওঠে অনন্য, অসাধারণ। তার গীতিকবিতাতে দর্শন, সাহিত্য, সমাজ ও রাজনীতি একাকার হয়ে মিশে গেছে। আর তাই সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার সময় সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস বলেছেন, “গত পাঁচ দশক ধরে আমেরিকার সঙ্গীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির জন্য ৭৫ বছর বয়সী সঙ্গীতশিল্পী বব ডিলানকে তারা বেছে নিয়েছেন।” ডিলান তার ৭৫ বছরের জীবদ্দশায় রচনা করেছেন ছয়শ’র বেশি গীতিকাব্য আর তাতে দিয়েছেন সুর, গেয়েছেন নিজের সৃষ্টি করা সেসব গান। তিনি তার গানের সুরের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছেন তার লক্ষ কোটি শ্রোতাকেÑ যারা আজ তার নোবেল প্রাপ্তিতে গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছেন। একজন মহৎ গায়ক হিসেবে মানব সমাজে ডিলানের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তার প্রতিবাদ ও নিপীড়নবিরোধী গান রচনা করে মানবাধিকার কর্মীদের মনে সব সময় সাহস যুগিয়েছেন। তার গানের কথায় যে তীব্র দ্যোতনা সৃষ্টি হয় তাতে শ্রোতার হৃদয়ে এক বিস্ময়কর চাঞ্চল্য তৈরি হয়। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছেন সঙ্গীত জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পী। নিপীড়িত জনতাকে তিনি শিখিয়েছেন কি করে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়তে হয় ও সাহস ধরে রাখতে হয়। তিনি তার সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন আমেরিকার লোকসঙ্গীত, লোকগাঁথার ওপর গবেষণামূলক গীতিকাব্য রচনা করে। আর তাই তিনি নিজেকে প্রথমে কবি ও পরে সঙ্গীতশিল্পী ভাবেন। ডিলানের গান পাশ্চাত্যের তরুণসমাজ তথা সমগ্র পৃথিবীর তরুণ সমাজকেই গত পাঁচ দশক থেকে সমানভাবে আলোড়িত করে রেখেছে। নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের উইলে বলা আছে, সাহিত্যে নোবেল পাবেন সেই লোক, যিনি ‘সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি আদর্শ অভিমুখে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’ বব ডিলান ‘টারানটুলা’ নামে একটি গদ্যকবিতার বইসহ নানা রকম নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন। ‘ক্রনিকলস’ নামে আত্মজীবনীও রচনা করেছেন তিনি। এর বাইরে ডিলান একজন সক্রিয় পেইন্টার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে নোবেল প্রাইজ দেয়া শুধু যৌক্তিকই নয়। ঔচিত্যের মধ্যেই পড়ে। ষাটের দশকে আমেরিকায় যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়েছিল বব ডিলানের যে গানটি সেই ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে বাংলা গানের কিংবদন্তি কবির সুমন লিখেছিলেন- কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়? কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা? কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়? প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা। কত বছর পাহাড় বাঁচে ভেঙে যাবার আগে? কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শেকল পরে? কবার তুমি অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে? বলবে তুমি দেখছিলে না তেমন ভালো করে। কত হাজারবারের পর আকাশ দেখা যাবে? কতটা কান পাতলে তবে কান্না শোনা যাবে? কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে? বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে। ববের এই আকুতিরা এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। প্রশ্ন চলছেই, কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে? জীবন্ত কিংবদন্তি বব ডিলান সঙ্গীত জগতের এক অসাধারণ চেতনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি বিশ্বজুড়ে তার ভক্ত কোটি কোটি শ্রোতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের চিন্তায় গভীর চেতনায় আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ পর্যন্ত ডিলানের ঝুড়িতে যোগ হয়েছে ১১টি গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড, ১টি গোল্ডেন গ্লোব, ১টি একাডেমি পুরস্কারসহ ১৯৯১ সালে পাওয়া ‘গ্র্যামি লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’। এছাড়াও ২০০০ সালের মে মাসে তিনি পোলার মিউজিক প্রাইজ ও তার বিখ্যাত গান ‘থিংগস হ্যাভ চেঞ্জড’ এর জন্য অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন। টাইম ম্যাগাজিনের বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে তার নাম। ২০০৭ সালে তাকে সংস্কৃতিতে ‘প্রিন্স অফ অস্ট্রিয়াস’ পুরস্কার ও ২০০৮ সালে পুলিৎজার কমিটি সঙ্গীতকর্ম ও সমাজের প্রতি বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করেন। তিনি সঙ্গীত লেখক হিসেবে ২০১২ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাত থেকে গ্রহণ করেন আমেরিকার সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘প্রেসিডেন্ট মেডেল অব ফ্রিডম’ পদক। বিশ্বব্যাপী বহুল স্বীকৃত, আলোচিত কবি ও সঙ্গীতশিল্পী বব ডিলানের গানের বিক্রীত রেকর্ডের সংখ্যা ১০ কোটিরও অধিক। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর বব ডিলান সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত হলেন নোবেল লোরিয়েট। এ দিকে গানের কবি বব ডিলান নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। তবে তিনি সত্যিই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নোবেল পাওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বব ডিলান কোন মন্তব্য করেননি। এমনকি নোবেল কমিটির কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি। উল্লেখ্য, একটি ওয়েবসাইটে তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের খবর দিয়ে জানানো হয়, বব ডিলান শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানাবেন। তার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
×