ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্পিন ভেল্কিতে বাংলাদেশের দিন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২১ অক্টোবর ২০১৬

স্পিন ভেল্কিতে বাংলাদেশের দিন

মিথুন আশরাফ ॥ এক এক করে সাতটি উইকেট পড়ল ইংল্যান্ডের। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের প্রথমদিনে শুধু বাংলাদেশ স্পিনাররাই ইংল্যান্ডের সাতটি উইকেট তুলে নিলেন। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসের প্রথমদিনেই ৫ উইকেট তুলে নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকি দুইটি উইকেট শিকার করলেন সাকিব আল হাসান। দুই স্পিনারের স্পিন ভেল্কিতে দিনটি বাংলাদেশেরও হলো। মঈন আলী ৬৮, জনি বেয়ারস্টো ৫২ ও জো রুট ৪০ রানের ইনিংস না খেললে ইংল্যান্ড ২৫৮ রানও করতে পারত না। তবে ৭ উইকেট যে হারাল, তাতে দিনটি বাংলাদেশেরই হয়ে গেল। ৮৩ রানেই নেই ৪ উইকেট। সেখান থেকে ১০৬ রানেই নেই ৫ উইকেট। দিনটিতো বাংলাদেশেরই হওয়ার কথা। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে যে মঈন আলী ও জনি বেয়ারস্টো মিলে ৮৮ রানের জুটি গড়লেন, সেখানে দিনটি ফিকে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগলো। যেই ১৯৪ রানে গিয়ে মঈন (৬৮) আউট হয়ে গেলেন, দিনটি বাংলাদেশেরই হতে থাকল। দিন শেষে ৯০ ওভারের পরেও আলো থাকায় ২ ওভার বেশি খেলান হলো। শেষ পর্যন্ত দিনটি বাংলাদেশেরই হয়ে থাকল। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে এমন কঠিন দিন এর আগে কখনই দেখতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। ২০০৩ সালে যখন প্রথমবার বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলে ইংল্যান্ড, তখনও প্রথমদিনে বিপাকে পড়েছিল। চট্টগ্রামেই প্রথমদিনে ২৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি। তবে উইকেট হারিয়েছিল ৪টি। এবারতো ৭ উইকেট হারিয়ে বসল। এখন দ্বিতীয়দিনে কি ঘটে, তাই দেখার অপেক্ষা। যদি সকালেই ১ ঘণ্টার মধ্যে ইংল্যান্ডকে অলআউট করা যায়, ৩০০ রানের নিচে বেঁধে রাখা যায়; তাহলে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তিই হবে। ইংল্যান্ডকে যে এরআগে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০৩ সালে প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রানের বেশি করতে দেয়নি বাংলাদেশ, সেটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের করা সবচেয়ে কম রানের সংগ্রহ। এবার তারচেয়েও কমে বেঁধে রাখতে পারলে অর্জনের খাতাতেই তা লেখা থাকবে। ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে তাও আবার শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমে এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি প্রথম ইনিংসে আর কি হতে পারে! ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। কেন এমনটি করল ইংলিশরা? বোঝাই গেল, প্রথম ইনিংসেই বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চায়। কিন্তু তা কী করতে পারল ইংল্যান্ড? অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুককে নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল। সেই কুক মাত্র ৪ রানেই সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরলেন। হতাশ করলেন ইংলিশ সমর্থকদের। তবে যখন টস করতে উইকেটে আসলেন তখনই দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়ে ফেললেন। এরপর ব্যাট হাতে নেমে রেকর্ডের ম্যাচেই বিবর্ণই থাকলেন কুক। স্বদেশী এ্যালেক স্টুয়ার্টের (১৩৩ টেস্ট) চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে রেকর্ড গড়ার ম্যাচের প্রথম ইনিংসে কিছুই করতে পারলেন না। তাকে করতে দিলেন না সাকিব। কুকের সঙ্গে ব্যাট হাতে ওপেনিং করতে নামেন বেন ডাকেট। ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করায় ডাকেটকে টেস্টেও খেলানো হয়। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেন ডাকেটও (১৪)। ইংল্যান্ডের হয়ে ৬৭২ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষিক্ত ডাকেটের উইকেটটি শিকার করলেন আবার বাংলাদেশের হয়ে ৮০তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হওয়া অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ঝলক দেখান মিরাজ। ৮৩ রানেই যে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড, চাপে পড়ে যায়; এর মধ্যে তিনটি উইকেটই শিকার করে নেন মিরাজ! ডাকেট আউটের পর কুককে আউট করে দেন সাকিব। ১৮ রানেই ২ উইকেট হারায় ইংলিশরা। আর ৩ রান যোগ হতেই যে গ্যারি ব্যালান্স (১) প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন, সেটি মিরাজের কল্যাণেই। ব্যালান্সকে এলবিডাবলিউ করে দেন মিরাজ। এ আউটটি প্রথমে আম্পায়ার দেননি। পরে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ‘রিভিউ’ নেন। তাতে আউট হন ব্যালান্স। তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ধুঁকতে থাকে ইংল্যান্ড। এমন সময় জো রুট ও মঈন মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও জাগান। তখন মনে হয়, টেস্টের দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা রুট ও মঈনই সব আশা হতাশায় পরিণত করে দেবেন। কিন্তু যেই ৮৩ রান ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে যোগ হয়, আবারও মিরাজ চমক দেখা যায়। রুট-মঈন মিলে চতুর্থ উইকেটে ৬২ রান যোগ করে ফেলেন। এমন মুহূর্তে মিরাজের বলে আউট হয়ে যান রুট (৪০)। জুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় বিপদেই পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড বিপদে পড়া মানেইতো বাংলাদেশের দিন! ১০৬ রান হতেই যখন আরেকটি উইকেটের পতন ঘটে, বেন স্টোকসকে (১৮) বোল্ড করে দেন সাকিব; তখনতো প্রথমদিনেই ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যাবে, সেই আশাই জাগে। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে গিয়ে মঈন-বেয়ারস্টো মিলে দলকে অনেকদূর নিয়ে যান। মঈন একের পর এক রিভিউ (৫টি রিভিউ) থেকে বাঁচেন। শেষ পর্যন্ত মিরাজই সাজঘরে ফেরান মঈনকে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মূল্যবান উইকেটটি নিয়ে নেন মিরাজ। ১৯৪ রানে গিয়ে ১৭০ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৮ রান করা মঈন সাজঘরে ফেরেন। তখন ৬ উইকেটের পতন ঘটে ইংল্যান্ডের। ৩০ ওভারের মতো দিনের খেলা বাকি থাকে। এই সময়ের মধ্যে গুটিয়েও যেতে পারে ইংল্যান্ড। সেই সম্ভাবনা উড়ে যায়নি। ২৩৭ রানে গিয়ে যখন জনি বেয়ারস্টোকেও (১২৬ বলে ৮ চারে ৫২ রান) বোল্ড করে দেন মিরাজ, তখনতো যেন ইংলিশদের অলআউটের অপেক্ষা থাকে শুধু। মিরাজও অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে নেন। কিন্তু প্রথমদিনেই অলআউট করে দেয়ার যে আশা, তা আর পূরণ হলো না। ক্রিস ওকস (৩৬*) ও আদিল রশিদ (৫*) মিলে অষ্টম উইকেটে ২১ রানের জুটি গড়লেন। সেইসঙ্গে দুইজন আজ দ্বিতীয়দিনে ব্যাট হাতেও নামবেন। তবে স্পিন ভেল্কিতে ইংল্যান্ডকে যে প্রথমদিনেই এমন বিপাকে ফেলা গেছে, তাতে দিনটি বাংলাদেশেরই হয়েছে।
×