ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

প্রবাসে বাঙালী নারীর সাফল্য ও সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২১ অক্টোবর ২০১৬

প্রবাসে বাঙালী নারীর সাফল্য ও সম্ভাবনা

বিদেশে বাঙালী নারীর সাফল্যময় অগ্রযাত্রা প্রবহমান। রাজনীতি, অর্থনীতি , ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রিড়াসহ সকল ক্ষেত্রে আজ বাঙালী নারীদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। একসময় ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করেছিল। আর আজ তিন বাঙালী নারী সেই ব্রিটিশদেরই পার্লামেন্টে এমপি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেইন গত বছর বিবিসির রান্নাবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ জিতে সাড়া ফেলেন। এরপর রানীর জন্মদিনে কেক বানিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন তিন সন্তানের এই জননী। আর এবার বাংলাদেশের গল্প দিয়ে বাজিমাত করলেন যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে জন্ম নেয়া নাদিয়া। বিবিসির জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন ‘দ্য ক্রনিকলস অব নাদিয়া’ শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্রে কোন চাকচিক্য ছাড়াই তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতি আর মানুষের গল্প। আরেক বাঙালী কন্যা তাসমিন মাহফুজ যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউএইচএজি নিউজ চ্যানেলের প্রযোজক ও সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে তিনি বিসি-ফোর ইউটাহর সাউদার্ন ইউটাহ ব্যুরো চিফ ছিলেন। তিনি ছয়টি ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। তাসমিন নিজেকে বিশেষ কোন গোত্র অথবা অঞ্চলের মধ্যে আটকে রাখতে চান না। নিজেকে বিশ্বের নাগরিক হিসেবে গণ্য করেন এবং মানবতার কল্যাণে সাংবাদিকতাকে প্রাধন্য দিচ্ছেন। আপন যোগ্যতায় অনুকরণীয় সফল একজন নারী ড. নীনা আহমেদ। কর্মজীবী মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে আলোচনায় আসেন। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর নিজের কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের দেখা পান। আমেরিকায় বাঙালী কমিউনিটিতে তার সেবা করার মানসিকতা প্রশংসনীয়। একই সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব সবার সামনে চলে আসে। এরপর বারাক ওবামা তাকে এশিয়ান-আমেরিকান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেন। এখান থেকেই আমেরিকার রাজনীতিতে এই বাঙালী কন্যার সাফল্যের গল্প নতুন মাত্রা লাভ করে। আরেক বাঙালী কন্যা সুমাইয়া কাজী। তার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের জেলা শহর ফেনীতে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেসে। ২০১২ সালে সুমাইয়া স্থান করে নেন বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ক্লাউট ওয়েবসাইটের তৈরি করা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার তালিকায়। এখানে তার অবস্থান ছিল ১৬তম। এটিই তার প্রথম অর্জন নয়। এর আগে ২০০৬ সালে প্রভাবশালী সাময়িকী বিজনেস উইক ২৫ বছরের কম বয়সী সেরা মার্কিন উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাঁকে রেখেছিল। পরের কয়েক বছর সিএনএন, সিলিকন ভ্যালির নানা সাময়িকী হয়ে ২০১২ সালে ফোর্বস, ওয়াইএফএস হয়ে রয়টার্সের তালিকায়। যদিও তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে, তবে শিকড়ের টান তাঁর গভীর। সময় সুযোগ পেলেই শাড়ি পরেন। কারণ শাড়ি তাঁর প্রিয় পোশাক। ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন আরেক বাঙালী কন্যা। ব্রিটেনে বিচারক পদে তিনিই প্রথম কোন বাংলাদেশী হিসেবে নিয়োগ পান। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের মোল্লাগ্রামের নিম্বর আলীর কন্যা। এছাড়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী ১০০ প্রভাবশালী বাংলাদেশীর নতুন তালিকায় উঠে আসেন তিনি। গত বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিন বাঙালী কন্যা রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক। টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার কন্যা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করছেন। রুশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেয়া রুশনারা সাত বছর বয়সে বাবা মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। তিনি লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে তার মন্ত্রী হবার সম্ভাবনাও ছিল যথেষ্ট। ২০১০ সালে প্রথম বাঙালী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হন। অপর এমপি রূপা হক কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন নিয়ে। আর কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও অধ্যায়নের মতো বিষয়। এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসেবে স্থানীয় সরকারেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
×