ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলন মাস্ক বিজ্ঞানের মানবিক মুখ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ অক্টোবর ২০১৬

এলন মাস্ক  বিজ্ঞানের মানবিক মুখ

(১৪ অক্টোবরের পর) নিয়তি তখনও বোধকরি অপেক্ষায় মাস্ককে তার পূর্বসূরি নিকল টেসলা নামটির সঙ্গে জড়িয়ে নেয়ার। বলছি ‘টেসলা মোটরস’এর কথা, ‘টেসলা মটরস’-এর যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে মার্টিন এয়ারহার্ড ও পার্ক টারপেনিওর নেতৃত্বে। অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকা কোম্পানিটিতে মাস্ক ফেব্রুয়ারি ২০০৪ বিনিয়োগ করেন ও পরিচালকম-লীর সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি কোম্পানিটির প্রাত্যহিক কাজকর্মের সঙ্গে তেমনভাবে জড়িত ছিলেন না। ২০০৮ সালে মাস্ক সরসারি কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। এখনও সিইও এবং প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টেসলা মটরসের প্রথম প্রোডাক্ট বৈদ্যুতিক স্পোর্টস কার টেসলা রোডস্টের যা ৩১টি দেশে ২৫০০ বিক্রি হয়। জুন ২২, ২০১২ সালে তাদের দ্বিতীয় পণ্য চার দরজার সেভান ‘মডেল এস’ বাজারে আসে। তাদের মডেল ‘এক্স’ বাজারে আসে ২০১৫ সালে। নিজস্ব গাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি টেসলা মটরস এখন বিদ্যুত শক্তি নির্ভর পাওয়ার ট্রেন সিস্টেম বিক্রি করছে ‘ডিমলারের’ কাছে। এ ছাড়াও বিদ্যুতনির্ভর ‘মার্সিডিস এ ও বি ক্লাস এবং টয়োটাকে দিচ্ছে র‌্যাড-৪ ইডি। মাস্কের আরেকটি সাফল্য কোম্পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সংগ্রহ। গাড়ি নির্মাণে এলেন মাস্কের অবদান বিবেচনায় মূল ধারার প্রকাশনাগুলো তাকে অভিহিত করছে আধুনিক ‘হেনরী কোর্ড’ এর বিরল সম্মানে। ২০১৪ সালে স্টিভ জবস এবং আরও অনেকের মতো মাস্কের বার্ষিক বেতন ছিল মাত্র ১ ডলার। সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে ২০১৪ সালে এলেন মাস্ক টেসলা মটরসের প্রযুক্তির প্যাটেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন ‘ইলেকট্রিক গাড়ি’ নির্মাণ শিল্পে অগ্রগতির জন্য। ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে মাস্ক ঘোষণা করেন তিনি টেসলা ডটকমের মালিকানা স্টু গ্রসম্যানের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন যিনি ১৯৯২ থেকে এই স্বত্ব ধারণ করে আসছিলেন। মাস্ক এবার মনোনিবেশ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের যুদ্ধে। মাস্কের প্রাথমিক ধারণা ও বিনিয়োগ সম্বল করে ২০০৬ সালে তার চাচাত ভাই লিনডন ও পিটার রিড প্রতিষ্ঠা করেন ‘সোলার সিটি’ মাস্ক। কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক সোলার সিটি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম সোলার পাওয়ার সিস্টেম সরবরাহকারী কোম্পানি। মাস্ক সৌরশক্তি নির্ভর ব্যাটারি নিয়ে কাজ শুরু করেন। টেসলা মটরস ও সোলার সিটি মূল ভাবনা হচ্ছে ‘বর্তমান পৃথিবীতে শক্তির ব্যবহারে মৌলিক পরিবর্তন আনা। তার পাওয়ার ওয়াল ও পাওয়ার প্যাক সে লক্ষ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ। তিনি জানেন তাকে এখনও যেতে হবে বহুদূর, মোকাবেলা করতে হবে উৎপাদন ও সরবরাহ মূল্যের প্রতিযোগিতা সেই সঙ্গে রয়েছে পরিবেশভিত্তিক সমস্যাও। মাস্ক তার পাওয়ার ওয়াল প্রযুক্তিটিও উন্মোচিত করে দিয়েছেন সবার জন্য, যাতে আগ্রহী যে কেউ এটি নিয়ে কাজ করতে পারে আর এখানেই তিনি অনন্যÑ তিনি বিশ্বাস করেন প্রযুক্তি বৃহৎ মানব সমাজের কল্যাণের জন্য। আগস্ট ১২, ২০১৩ সালে মাস্কের কাজ শুরু তার নতুন ধারণা নিয়ে যার উদ্দেশ্য চলাচলে প্রচলিত রাস্তা এড়িয়ে নতুন টিউব পথটি সৃষ্ট করা। নাম হাইপারলুপ। প্রাথমিক ধারণাটিকে ভিত্তি দেয়ার জন্য মাস্ক তার কোম্পানির এক ডজন ইঞ্জিনিয়ার এ কাজে নিয়োগ করেন, নয় মাস নিরলস পরিশ্রমে তারা যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি প্রাথমিক ডিজাইন তৈরি করেছেন। মাস্কের কল্পনা সত্য হলে বদলে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। লস এ্যাঞ্জেলস থেকে ক্যালিফোর্নিয়াতে হাইপারলুপ স্থাপনের আনুমানিক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬ বিলিয়ন ডলার। মাস্কের সর্বশেষ ধারণা উন্মুক্ত ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উদ্ভাবনে অলাভজনক গবেষণা ধর্মী কোম্পানি স্থাপন। উদ্দেশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানব সমাজের জন্য নিরাপদ ব্যবহার। এটি তার নতুন যুদ্ধ বৃহৎ কোম্পাানি ও সরকারের বিরুদ্ধে যারা মুনাফা ও শক্তি অর্জনের জন্য একে ব্যবহার করবে। এলেন মাস্ককে নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। একজন মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তি জীবন আছে। আছে ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন, দাতব্য, ভিন গ্রহের বাসিন্দা নিয়ে আছে ভিন্ন মত। কিন্তু তার অর্জন উদ্ভাবন এবং আগামীর কল্পনা নিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত থাকতে চান বৃহত্তর মানব সমাজের পাশে। তিনি বর্তমান সময়ের এক স্বপ্নদ্রষ্টা যাকে বলাই যায় বিজ্ঞানের মানবিক মুখ।
×