ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

অনুভব করতে শিখছে রোবট

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ অক্টোবর ২০১৬

অনুভব করতে শিখছে রোবট

রোবট নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন অনেক দিন থেকেই। সিনেমায় রোবটের কারিশমা আমরা অনেক দেখেছি। তবে বাস্তবে রোবট এখনও আমাদের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেনি। তাই বিজ্ঞানীদের গবেষণাও থামেনি। রোবটের অনুভূতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করে তুলতে এদের ডিজাইন করা হয়েছে। মানুষের পেশিশক্তির কাজ তারাই করবে, দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করবে, সমাজে বয়স্ক মানুষদের সেবা করবে, যাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কথাও বলে রোবট। এই রোবটটির নাম ‘রোবয়’। এর ত্বক এবং মাংসপেশি মসৃণ। রোবট হ্যান্ডশেক করলে মনে হয় যেন কোন মানুষের সঙ্গেই হাত মেলানো হলো। এই রোবট কথা বলতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতো আবেগও প্রকাশ করে। জার্মানির তৈরি একটি রোবটের নাম ‘জাস্টিন’। ওকে তৈরি করা হয়েছিল মহাকাশযানের জন্য। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঁচ বছর ছিল সে। পৃথিবীতে ফিরে তাকে মানুষের মতো অনেক কাজই করতে হয়। এখন সে ঘরের জানালা পরিষ্কার করায় সে ওস্তাদ। বর্তমানে ‘বায়োস’ নামের এই রোবটটি পেশাদার লেখকদের চেয়েও দ্রুত লিখতে পারে। তার বাহুর সঙ্গে লাগানো আছে কলম। সেই কলমে প্রয়োজন মতো কালি জোগান দেয়ার ব্যবস্থাও আছে। কালিকলম হাতে সদাপ্রস্তুত ‘বায়োস’ ৮০ মিটার কাগজে মাত্র দশ সপ্তাহে হিব্রুতে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮০৫টি অক্ষর লিখে দেখিয়েছে। চীনের রেস্টুরেন্টে অর্ডার নেয়ার কাজে ইতোমধ্যে রোবট নেমে পড়েছে। কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খাবারের ‘অর্ডার’ নেয় এমন রোবট। খাবার পরিবেশনে মানুষের চেয়েও দক্ষ এরা। এই রোবটগুলো রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খাবার পরিবেশন করতে পারে। ‘ওয়েটার’ মানুষ হলে এক সময় তো ক্লান্ত হয়, কিন্তু রোবট কখনোই ক্লান্ত হয় না। রেস্টুরেন্ট বা ঘরে রান্নার কাজটুকু একবার করে দিলে তারপর যতবার খুশি সেই খাবার গরম করতে পারবে রোবট। খাবার গরম করার কাজে এই রোবট আসলেই খুব দক্ষ। ‘সোশাল রোবটিক্স’ আমাদের ভবিষ্যতের জানালা। তবে আরও যান্ত্রিক করে তোলার বদলে রোবটকে আমাদের সহযোগী করার চেষ্টা চলছে। মিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নতুন ধরনের রোবট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সান্ড্রা হিয়র্শে যতটা সম্ভব মানুষের আদলে রোবট তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘অচেনা পরিবেশে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া অত্যন্ত জটিল এক কাজ। আমরা যখন শহরের মধ্য দিয়ে অথবা একটা ঘরের মধ্যে হাঁটি, অথবা গাড়ি চালিয়ে কোন লক্ষ্যে পৌঁছাই, তখন অনেকগুলো প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলে। কোন রোবটকে তার জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করলে বোঝা যায়, সেই সব কাজ আসলে কতটা জটিল।’ রোবট যদি কোনদিন আমাদের বাড়ির চেনা পরিবেশের অংশ হয়ে ওঠে, তাদের সবার আগে উপলব্ধি করতে শিখতে হবে। মানুষ ও নানা বস্তু চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে। ফলে রোবটের নিজস্ব স্পেসও সমানে বদলে চলেছে। এখনও পর্যন্ত শিল্পক্ষেত্রের রোবট ও আমাদের মতো মানুষের পরস্পরের থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। তারা আমাদের শরীরে আঘাত করতে পারে, এমন বিপদের আশঙ্কা কম নয়। কোন কিছু কাছে এলে রোবটকে তা বুঝতে হবে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ইঞ্জিনিয়ার ফিলিপ মিটেনডর্ফার এক কৃত্রিম ত্বক তৈরি করছেন। ছোট ৬ কোণা প্লেটলেটের একটি গ্রিড রোবটের হাত ঘিরে রয়েছে। সেগুলোতে ইনফ্রারেড সেন্সর লাগানো আছে। এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম দূরত্বে কিছু এলেই সেন্সর টের পায়। কৃত্রিম ত্বক মানুষের ত্বকের নকল করবে, সেভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে। তবে এত জটিল কাঠামো নকল করা সত্যি কঠিন কাজ। লাখ লাখ ইন্দ্রিয় কোষের দৌলতে মানুষ বাতাসের সামান্য ছোঁয়াও টের পায়। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফিলিপ মিটেনডর্ফার এ বিষয়ে বললেন, ‘সম্প্রতি আমাদের শরীরে কিছু বিশেষ ধরনের রিসেপ্টর আবিষ্কৃত হয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ জড়িয়ে রয়েছে। হালকা করে হাত বোলানো বা আলিঙ্গনের মতো সামাজিক যোগাযোগ শনাক্ত করে সেগুলি। মানুষ কাছে এলে রোবটকেও এমন স্টিমুলাসের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শিখতে হবে।’ কৃত্রিম কোষের দৌলতে যন্ত্র তার শরীর সম্পর্কে অনুভূতি পাচ্ছে। এমন রোবট তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা সহযোগিতা করতে পারে এবং মানুষের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে। মানুষও অন্যের চেহারা দেখে তার মতলব বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে। একটি পরীক্ষার আওতায় রোবট ও মানুষ একসঙ্গে একটি টেবিল সরাচ্ছে। রোবটকে বুঝতে হবে, তার সহযোগী মানুষটি কোন দিকে এগোচ্ছে। একই সঙ্গে রোবট তার আশপাশের স্পেস বা জায়গা পর্যবেক্ষণ করে বাধা শনাক্ত করে চলেছে। কোন দিকে যেতে হবে, সে সেটাও দেখাচ্ছে। প্রো. সান্ড্রা হিয়র্শে বলেন, ‘কোন এক সময় রোবট বাসায় সারাদিন ভৃত্যের মতো আমাদের পাশাপাশি থাকবে, কারখানা বা কৃষিকাজেও সঙ্গে থেকে কাজ করবেÑ এটা একটা বড় স্বপ্ন। তবে কোন রোবট বাসায় ভাল কাজ করছে, এই দৃশ্য দেখতে সম্ভবত আরও ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’ ধাপে ধাপে যন্ত্র নতুন ক্ষমতা আয়ত্ত করছে ও আশপাশের পরিবেশ আরও নিখুঁতভাবে অনুধাবন করতে পারছে। তারা আমাদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদানও করছে। কোন এক সময় হিউম্যানয়েড রোবট আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে পড়বে।
×