ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

পালিয়ে গেল ২০০ সাপ! চীনের জ্যাং সু প্রদেশের যান জিং-এর একটি সাপের খামার। সাপের চাষ হয় সেখানে খামারের মালিক লাভের মুখও দেখেছেন বহুবার এতে। তাঁরা খামারটি দিয়ে খুব খুশি। হঠাৎ সেদিন ঘটে গেল এক মহাবিপত্তি। দেখার কেউ ছিল না। কি-করে কি-করে যেন পালাবার একটা সুযোগ পেয়ে গেল সাপগুলো। তারপর একে একে পালাতে শুরু করল বন্দী সাপগুলো। পালাতে লাগল একের পর এক। এইভাবে চলছে- হঠাৎ এক সময় খামারের লোক জনের চোখে পড়ল ঘটনাটি। ছুটে গিয়ে তারা বন্ধ করল পালাবার পথ। পালানো বন্ধ হলো। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখা গেল ২শ’র মতো সাপ ভেগেছে! সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল খবরটা। আর ঐ খবর ছড়ানোর আগেই লোকজন দেখতে পেল এখানে একটা সাপ, ওখানে একটা। অতি দ্রুত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। পুরো এলাকায় মানুষ পথে বেরুতে ভয় পাচ্ছে। কোথাও থাকতেও ভয় পাচ্ছে। ঘরেও ভয়, বাইরেও ভয়! যারা সাহসী, তারা লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়ল সর্পনিধনে। এখানে-ওখানে চলল আঁতিপাতি করে খোঁজ। মারাও পড়ল বেশকিছু সাপ। কিন্তু সবাই তো আর লোকের চোখের সামনে নেই। সুযোগ বুঝে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। হয়ে গেছে বেমালুম লাপাত্তা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লোকজন ছুটে এলো। যে কোন সময় যে কোন লোককে কামড়ে দিতে পারে। এতগুলো সাপ। কখন যে কাকে কামড়াবে কে জানে! আর এরা যে-সে সাপ নয়Ñ বিষধর গোখরো! কাউকে কামড়ালে তাকে বাঁচানোর ওষুধ কোথায়! সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের লোক ছুটল সাংহাইতে। সাপের বিষের ওষুধ লাগবে, তাও আনা হলো অনেক। এদিকে শুরু হলো হিসাব নিকাশ। দেখা গেল ২শ’র মতো সাপ পালিয়েছে, তবে তার মধ্যে কিছু মারা পড়েছে, ধরাও পড়েছে। এগুলোর সংখ্যা দেড়শ’র মতো। বাকিগুলোর খোঁজ নেই। ঘটনাটি দিনকয় আগের। সম্প্রতি কাগজে খবরও বেরিয়েছে এরপর আর কি হয়েছে জানা যায়নি। জানা যায়নি শেষ পর্যন্ত আর কয়টা সাপ ধরা পেড়েছে, কিংবা ক’জনকে ওরা কামড়েছে! অন্যের প্রাণ সংহারের চিন্তা না করে ধরা পড়ার ভয়ে কিংবা নিজেরা জান বাঁচাতে ভয়ে কোন গর্তে গিয়ে সেঁধিয়েছে কিনা কে জানে! তাদেরও খুঁজে মারা হবে- এই ভয়ও তাদের ছিল কিনা কে জানে! তবে কোন কোন দেশের কেউ কেউ সাপ জাতীয় প্রাণী ভক্ষণ করে এটা শোনা যায়। গোখরো সাপ কেউ খায় বলে শোনা যায় না। গোখরো মারাত্মক সাপ। একবার কামড়ালে তার বিষ সহজে নামানো যায় না। তার যে কী যন্ত্রণা সেটা বোঝে যাকে কামড়ায় সেই। সে কথা তো সেই বিখ্যাত কবিতাতেই বলা হয়েছে : ‘কী যাতনা বিষে/বুঝি বে সে কিসে/কভু আশীবিষে/ দংশেনি যারে।’ সাপের বিষ সাংঘাতিক কিন্তু তাই বলে ভয় পেয়ে বা তাকে ঘৃণা করে বিষবৎ পরিত্যাগ করাও ঠিক না। সাপের বিষেরও অনেক দাম। অনেক কাজে লাগে অনেক ওষুধও তৈরি হয় এ দিয়ে। মানুষ সাপের খামার এমনি এমনি করে না! কবি অতুল প্রসাদ তাঁর এক কবিতায় বলে গেছেন : ‘যারে তুই ভাবিস ফনী/তারো মাথায় আছে মণি।’ সাপের মাথার মণি সম্পর্কে অনেক গল্প-কাহিনী-রূপকথা রয়েছে গল্পে ওদের প্রচলিত আছে। চীনের ঐ খামারের ‘পালিয়ে যাওয়া তথা মানুষের হাতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সাপগুলোকে পাওয়া গেছে কিনা, কিংবা আর কোন দিন পাওয়া যাবে কিনা বলা যায় না। তবে এদেরকে একটি বিষয় পরিষ্কার পৃথিবীর কোন প্রাণী, সে পশুই হোক বা তার থেকে অধম কোন প্রাণীই হোক, কেউ বন্দী জীবন পছন্দ করে না, বিশ্বের জলে-স্থলে আলো বাতাসে তথা প্রকৃতিতে বাস করতে চায়। যাই হোক, এ ব্যাপারে আমাদের যাই হোক পলাতক সাপগুলোর ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কবির কবিতার সেই ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ সত্যি সত্যি থাকলে, তাকে ‘কোথা যাও বাপুরে’ না বলে ‘চীনে যাও বাপুরে বলা যেত! কিন্তু সে তো আর সম্ভব নয়। কুষ্মা- সংবাদ ঠিক সময়ের আগে কোন ফল পেকে গেলে সাধারণত বলা হয় অকালপক্ব। কোন ছেলে বড়দের মতো কথা বলতে থাকলে তার হাবভাবে বুড়োমি লক্ষ্য করা গেলে, তাকেও অনেক সময় অকালপক্ব বলা হয়। তবে কোন ছেলে বেশি দুষ্টুমি তথা বাঁদরামি করলে তাকে বলা হয় এঁচোড়ে পাকা বা ইঁচড়ে পাকা। এঁচোড় ছোট কচি কাঁঠাল, কিন্তু কচি অবস্থায় কাঁঠাল পাকে না। তবু শব্দটি ইচড়ে পাকা। এদিকে মজার ব্যাপার হলো, কাঁচা আম, কাঁচা কলা, কাঁচা পেপে, কাঁচা কাঁঠাল ইত্যাদি ফলকে ‘কেমিক্যাল’ দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করলে তাকে ইঁচড়েপাকা বা অকালপক্ব বলা হয় না। এসব ফল পাকা বলে খেতে গেলে দেখা যায়, আসলে এগুলো বিস্বাদ, একই সঙ্গে হয় টক, নয়তো খেতে গেলে কাঁচা ফলের মতো কচকচ করছে। যাই হোক, উপরের ঐ শব্দ দুটি এসব ফলের জন্য নয়, ওগুলো ছেলেদের গাল দেয়ার জন্য। এমনি আরেকটি শব্দ হচ্ছে অকাল কুষ্মা-। কোন ছেলে বেশি বখে গেলে এটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এই অকাল কুষ্মা-রূপী গুণধর ছেলেটিকে যেমন ভাল চোখে দেখা হয় না, তেমনি খোদ ঐ কুষ্মা-টিকেও দেখা হয় না ভাল চোখে। কুষ্মা- তথা কুমড়ো কোনঅ ভিজাত বংশীয় ফল নয়। বাড়িতে কোন সম্মানিত অতিথিকে ‘কুমড়ো দিয়ে আপ্যায়ন করার কথা কেউ ভাবতেও পারেন না। সাহিত্যে কুমড়ো উচ্চ স্থান পেয়েছে বলা যাবে না। তা সুকুমার রায়ের ‘বোম্বাগড়ের রাজা’র পিসি কুমড়ো দিয়ে ক্রিকেট খেলেন বলা হয়েছে। আর এমন জিনিস আছে কিনা সন্দেহ যেখানে কবিগরুর চোখ পড়েনি। সেখানে বেচারা কুমড়া বাদ যাবে কেন? তাঁর কলমে কুমড়োও এসেছে। ‘কুষ্মা-ের মনে মনে বড় অভিমান’ বাঁশের মাচাটি তার পুষ্পক বিমান।’ সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। মনে করে আকাশের সূর্য তার মিত্র। কিন্তু বোঁটাটি কাটা পড়লেই সে বোঝে পৃথিবীর মাটিই তার আপন, তার সবকিছু। এহেন কুমড়োর কথাই জানা গেল, আন্তর্জাতিক এক খবরে। মার্কিন মুল্লুকের ওয়াশিংটনস্থ এক শিক্ষিকা। নাম সিনডি তোবেক। তার একটি কুমড়ো ক্যালিফোর্নিয়ার বড় এক প্রতিযোগিতার পুরস্কার জিতেছে। কুমড়োটি যেমন- তেমন নয়! ৮৬৬ কেজির! কাঁধে করে কেউ বাড়ি নিয়ে যাবেন সেটা সম্ভব নয়। ক্রেন লাগবে। এই কুমড়োর জন্য বিশেষ খ্যাতি পেয়েছেন ঐ শিক্ষিকা। ঐ শিক্ষিকা নিজের বাগানে কুমড়া লাগিয়েছিলেন সেই গাছে এমন কুমড়ো হয়েছে যে তাতে জগতজুড়ে খ্যাতি এসেছে তাঁর। আগে কোন মোটা সাইজের মুলাকে বলা হতো বোম্বাই মুলা বা রাক্ষুসে মুলা। এখন যা হচ্ছে তাতে ওগুলো শিশুর পর্যায়ে। এখনই ফলমূল তথা তরিতরকারির যে অবস্থা তাতে কদিন পরেই হয়ত দেখা যাবে আলু ফলেছে এমন যার একেকটির ওজন দশ কেজি, পিঁয়াজের ওজন আধ মণ! পিচ্চিদের যুগ শেষ!
×