ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হিলারির বিকল্প প্রমাণে ব্যর্থ

শেষ সুযোগ হাতছাড়া ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ অক্টোবর ২০১৬

শেষ সুযোগ হাতছাড়া ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় ও চূড়ান্ত বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বীদের আচরণ ভালই ছিল। কক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেস অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করেন। এতে দৃষ্টি দেয়া হয় নীতির দিকে এবং তা ট্রাম্পকে তিনি যে হিলারি ক্লিনটনের এক বিশ্বাসযোগ্য রক্ষণশীল বিকল্প, তা প্রমাণের সুযোগ দিয়েছিল। বিশ্বাসযোগ্যতার ঝলকও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার ব্যক্তিত্বের কালোমেঘের নিচে সেগুলো তালিয়ে যায়। মধ্যপন্থী রক্ষণশীলদের জন্য এ নির্বাচন অন্য যে-কেউ যেমন সহজ মনে করেন তেমনি সহজ বিষয় নয়। হ্যাঁ, ট্রাম্প এক ভয়াবহ ব্যক্তি। তার নিজের ভাষায় বলতে গেলে ‘বিরক্তিকর’। কিন্তু হিলারির রয়েছে এক ভীতিপ্রদ এজেন্ডা। অমরা তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিতে শুনি। কেন? ২০১৬ সাল কি ১৯৪০-এর দশকের সর্বাত্মক যুদ্ধের সমান? তিনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার খর্ব করতে এবং প্রগতিশীল সক্রিয়বাদের অনুকূলে সুপ্রীমকোর্টের গঠনরীতিতে নতুন করে ভারসাম্য আনতে চান। এর অর্থ হলো করদাতাদের অর্থে চাহিদামতো গর্ভপাত। রক্ষণশীল ও অনেক মধ্যপন্থীর মতে, তিনি এক ভয়ঙ্কর ও সন্দেহজনক বিকল্প। তিনি বলছেন যে, তিনি বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াবেন। অথচ, একই সময়ে তিনি লাখ লাখ ডলারের বিনিময়ে কোম্পানির নির্বাহীকর্তাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তার বক্তৃতাবাজির এক বিরক্তিকর ও পুনরাবৃত্তিমূলক দিক রয়েছে। হিলারি কেবল আকর্ষণহীন, আবেগশূন্য বুলিই উপহার দিতে পারেন। সমস্যা হলো নীতির বাইরে গেলে ট্রাম্পের প্রার্থিতার সফল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি প্রার্থিতা ঘোষণার আগেই এর মৃত্যু হয়েছে। তার অতীতে কেলেঙ্কারি, পরচর্চা ও বক্রোক্তির এক পচনশীল মৃতদেহ সমাহিত রয়েছে, যা তাকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সহজেই অযোগ্য করে তোলে। হিলারি এটি বের করে এনে এক চমৎকার কাজ করেছেন। তিনি ঠাট্টা করে বলেন, যখন তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ওবামাকে সহায়তা করছিলেন, তখন ট্রাম্প সিলেব্রিটি এ্যাপ্রেন্টিস বাছাই করছিলেন। তার ঐ রকম মুহূর্তে ট্রাম্প তার মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এবং মাইকের দিকে ঝুঁকে বলে ওঠেন : ভুল। শুরু হয় ভিন্ন দিকে দৃষ্টি ফেরানো, অস্বীকৃতি, অভিযোগ ও অসংলগ্ন ব্যাখ্যা দেয়ার পালা। নির্বাচনী তৎপরতা কেমন চলছে এ নিয়ে ট্রাম্পের আশ্চর্যজনক মন্তব্যের পর আসে : তিনি জয়ী হতে চলেছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই জয়ী হতে যাচ্ছেন। কিন্তু সমগ্র বিষয়টিই কারচুপিপূর্ণ, আর তাই তিনি হারতে পারেন। আর নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, তিনি তা মেনে নেবেন কিনা, এ প্রশ্নে তিনি জবাব দেন যে, তিনি আপনাদের উদ্বেগের মধ্যে রাখবেন’। প্রসঙ্গত বলতে গেলে, মার্কিন নির্বাচনে এটি প্রায়ই ঘটেÑলোকজন সব সময়েই ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্পের অপরাধ হলো ভোটাভুটি না হতেই এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা। সাধারণত কেউ না হারা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ট্রাম্প যে নির্বাচনে হারতে যাচ্ছেন, এটি কি সেটিরই স্বীকারোক্তি? স্পষ্টতই। দুঃখজনক বিষয়ে হলো ট্রাম্প কিছু মূলধারার আলোচনার বিষয়ের প্রতি এক প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জই ছুঁড়েছেন। আমেরিকার উচিত রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলা-একথা বলায় ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন হিলারি। তিনি ট্রাম্পকে পুতিনের ‘হাতের পুতুল’ হওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু মাত্র চার বছর আগে রাশিয়া অন্যতম প্রধান সামরিক হুমকিÑএকথা বলাতেও মিট রমনির প্রতি উপহাস করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঐ নির্বাচনের পর বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে আমেরিকার সরে যাওয়াই পুতিনকে রুশ শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ দিয়েছে। ক্রেমলিনের সঙ্গে কোন সমঝোতায় আসতে চাওয়া কি আসলে খুব ভুল হবে? মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অনবরত হস্তক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা কি অন্যায় হবে? যুক্তরাষ্ট্র সিরীয় বিদ্রোহীদের সহায়তা দিয়েছে ট্রাম্পের একথা সম্পূর্ণ সঠিক। এ পরিকল্পনা এক সর্বাত্মক বিপর্যয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন এ নির্বাচনে এক নব্য-রক্ষণশীল প্রার্থী। উদারপন্থীরা যখন তার পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, তখন তারা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আরও ডানপন্থী ব্যক্তির পক্ষেই ভোট দিচ্ছেন। Ñটেলিগ্রাফ
×