ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেআইনী এ্যাম্বুলেন্স!

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

বেআইনী এ্যাম্বুলেন্স!

শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি ঘাতক এ্যাম্বুলেন্স রোগীসহ চারজনকে চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে কেন্দ্র করে একে একে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ঢামেকের সামনে হন্তারক এ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ওই হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয়। সে এখন পলাতক। দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল তার সহকারী, যে এখন পুলিশ হেফাজতে। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছিল সিলেটে। তদুপরি এটির প্রকৃত তথা আসল এ্যাম্বুলেন্স নয়। এ্যাম্বুলেন্সটি তৈরি করা হয়েছে মাইক্রোবাস কেটে। রাজধানীতে চলমান এবং সারাদেশেও বটে, অধিকাংশ এ্যাম্বুলেন্সই নাকি আসলে মাইক্রোবাস কেটে তৈরি করা। চাঞ্চল্যকর ও শিউরে ওঠার মতো এই তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্রে। তদুপরি এহেন অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সরকারী সংস্থাটির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢামেকসহ রাজধানীর ৩টি সরকারী হাসপাতালের রোগী বহনের জন্য অন্তত ১০৫টি এরকম এ্যাম্বুলেন্সের তথ্য মিলেছে, যেগুলো পরিচালিত হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানায়। শুধু ঢামেকেই আছে ৭০-৭৫টি, যেগুলোর মালিক এই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, নার্স ও আয়া। অথচ বিআরটিএ’র ভাষ্য, ব্যক্তি মালিকানায় এ্যাম্বুলেন্স চালানো বেআইনী। একটি মানসম্মত এ্যাম্বুলেন্সে স্ট্রেচার, সাইরেন, জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম, সচল অক্সিজেন মাস্ক, সিলিন্ডার, রোগীর স্থায়ী শয্যা ও চিকিৎসক বসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এসব এ্যাম্বুলেন্সে সেসব প্রায় নেই। বছরের পর বছর ধরে একেবারে ফ্রি-স্টাইলে যথেচ্ছ ব্যবসা করে আসছে এসব এ্যাম্বুলেন্স। আর এদের কাছে একেবারে অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে আছেন অগণিত রোগী ও আত্মীয়-স্বজন। এসবই প্রায় নির্বিঘেœ হতে পারছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, যোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ ও স্থানীয় পুলিশ এবং নানা প্রশাসনের নাকের ডগায়। ঘাতক এ্যাম্বুলেন্স কর্তৃক কয়েকজনকে হত্যার পরই জানা গেল বেআইনী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের অবৈধ ব্যবসার খবরাখবর ও ফাঁকফোকর। ঢামেকের মতো সুবৃহৎ একটি হাসপাতালে রোগী ও লাশ আনা-নেয়ার জন্য জরুরী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। যেটা আশ্চর্যের তা হলো, ঢামেক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রায় নেই। নামমাত্র থাকলেও তা অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল। এই সুযোগে হাসপাতালেরই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেমিশে নিজেরাই গড়ে তুলেছে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এই চক্রের অধীনে মাইক্রোবাসের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ৭০-৭৫টি এ্যাম্বুলেন্স আছে। জরুরী সেবার নামে রোগী ও লাশ পরিবহনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ক্ষমতাধর এই চক্রটি। এর পেছনে ঢামেক কর্তৃপক্ষের সমর্থন থাকাও বিচিত্র নয়। তদুপরি এই চক্রটি ঢামেকের সামনে প্রায় প্রতিটি গাড়ি, সিএনজি, রিক্সা, ভ্যানের কাছ থেকে ‘চাঁদা’ আদায় করে থাকে। ‘ট্যাক্সি ও প্রাইভেটকার মালিক সমিতি’ নামে এদের একটি সংগঠনও আছে। নগদ টাকা না দিয়ে এখান থেকে কোন রোগী বা মৃতদেহ নিতে পারে না কেউ। অবশ্য শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই নয়, এরকম দুষ্টচক্রের সন্ধান মেলে প্রায় সব সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের সামনেই। এমনকি ক্লিনিকেও। তবে সরকারী হাসপাতালে এর উৎপাত-উপদ্রব বেশি মূলত দুষ্টচক্র, দলবাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে। এদের উৎখাত তথা নির্মূল করা না হলে এরকম দুর্ঘটনা ও অঘটন ঘটবে অদূর ভবিষ্যতেও। অনভিপ্রেত সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় থানা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। এর বাইরে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে। বেসরকারী খাতের জন্যও উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের পরিষেবা।
×