ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাংক প্রধানের স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

বিশ্বব্যাংক প্রধানের স্বীকৃতি

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ কতটুকু সফল তা সরেজমিনে দেখে গেলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তার দুইদিনের এই সফরে পালন করে গেলেন বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবসও। দীর্ঘ এক দশক পর বিশ্বব্যাংকের কোন প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর। এই সফরে তিনি কয়েকটি স্থান পরিদর্শন শেষে বক্তব্যও রাখেন। পরিবার পরিকল্পনা, ক্ষুদ্র ঋণ, স্যানিটেশন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার প্রশংসা করেন জিম ইয়ং কিম । নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। নারীর ক্ষমতায়নকে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। নারীদেরও সক্ষম করে তুলছে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফলতার প্রশংসা করেন তিনি। দারিদ্র্য বিমোচনে এসব সাফল্যের প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্যপীড়িত অন্য দেশগুলোকে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় ২শ’ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিমের এই সফর বিশ্লেষকদের কাছে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের আজকের গতিশীল অগ্রযাত্রায় অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। আজকের বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েক বছর আগের বাংলাদেশের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন ও সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক বেশি দৃঢ়। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় তা বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের এই অর্জনই আজকে বিশ্বব্যাংক প্রধানকে বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী করেছে। পদ্মা সেতু থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্যাংক প্রধানের এই সফরের মধ্য দিয়ে তা অনেকটা দূর হবে তা সহজেই বলা যায়। মানুষের মৌলিক চাহিদাসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। শিশুমৃত্যু এবং মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করায় স্বাস্থ্যসেবা মানুষের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম, তারপরও শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়েছে। দেশে বিশেষায়িতসহ নতুন নতুন অনেক হাসপাতাল চালু হয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে মানসম্পন্ন হাসপাতাল চালু হওয়ায় ভাল মানের চিকিৎসা অনেকটাই সহজ। উন্নতমানের বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ঢাকার বাইরে ছোট-বড় শহরে গড়ে উঠেছে। পোশাক শিল্পখাতে নারীদের কাজের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা খাতেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে হতদরিদ্রের হার কমছে। দারিদ্র্য বিমোচনের এ সাফল্য দেখতেই এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য অর্জন খুব একটা সহজ কাজ নয়। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের এই সাফল্য উন্নয়নকামী বিশ্বেও অনুকরণীয়। এজন্য পরিকল্পনা, বাস্তবায়নে আরও কর্মোদ্যোগী হওয়া দরকার। তবে এই প্রশংসা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে থেমে থাকা ঠিক হবে না। এখনও আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, লক্ষ্য প্রথমে মধ্যম আয়ের দেশ ২০২১ এবং উন্নত বিশ্বের সমকক্ষ হওয়ার স্বপ্ন ২০৪১। সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত থাকলে সেই সাফল্যও হাতের মুঠোয়।
×