ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক সূচকে উন্নতির তাগিদ দিলেন গবর্নর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ অক্টোবর ২০১৬

আর্থিক সূচকে উন্নতির তাগিদ দিলেন গবর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খেলাপী ঋণ, লোকসান, লোকসানি শাখা, মূলধন ঘাটতি বেড়েই চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বড় চারটি ব্যাংকের। ফলে কমে আসছে বিতরণকৃত ঋণ থেকে আদায়। এসব সূচকে উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) রয়েছে ব্যাংকগুলোর। ওই চুক্তির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকগুলোর ক্রমশ অবনতিতে হতাশার প্রকাশ করে তিনি আর্থিক সূচকে দ্রুত উন্নতির নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে প্রতি বছর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। এমওইউতে খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ প্রবৃদ্ধি, লোকসানি শাখা, পরিচালন ব্যয়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার আলোকে অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এসব ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে বৈঠক করে। ২০১৬ সালের জুনভিত্তিক প্রতিবেদনের আলোকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্বাহী পরিচালক নির্মল চন্দ্র ভক্ত, সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুস সালাম, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস-উল-ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে গবর্নর ফজলে কবির ব্যাংকগুলোর অগ্রগতি পরিবর্তে অবনতিতে হতাশা প্রকাশ করেন। তবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে অবস্থার উন্নতি করার আশা প্রকাশ করা হয়েছে। চারটির মধ্যে ৩টি ব্যাংকের এমডি নতুন। আগামী সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদনে উন্নতি হবে বলে তারা গবর্নরকে আশ্বস্ত করেছেন। তবে এজন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য গবর্নরের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে জানানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন শেষে চার ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৫৮৯টি। ডিসেম্বরে লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ১৮৩টি। ছয় মাসের ব্যবধানে লোকসানে শাখা বেড়েছে ৪০৬টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ত্রৈমাসিকে আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় লোকসানি শাখা কমিয়ে আনতে হবে। অথচ ব্যাংকগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১২৪টি থেকে বেড়ে ২৯০টি, অগ্রণী ব্যাংকের ৩৪টি থেকে বেড়ে ৯৯টি, জনতা ব্যাংকের ১৫টি থেকে বেড়ে ৭৪টি এবং রূপালী ব্যাংকের ১০টি থেকে বেড়ে লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬টি। চুক্তি অনুযায়ী খেলাপী ঋণের পরিমাণও ক্রমশ কমে আসার কথা। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে। জুনে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা, গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ডিসেম্বরের ৪ হাজার ২২৪টি কোটি টাকা থেকে বেড়ে জুনে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে জুনে হয়েছে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। খেলাপী ঋণ বাড়লেও এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আদায় বাড়ছে না। খেলাপী ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আদায়ের হার মাত্র ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। নিয়মিত ঋণের আদায়ের হার মাত্র ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। অথচ চুক্তি অনুযায়ী ঋণের আদায়ের হার অনেক বেশি বাড়ানোর কথা। আদায় বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় ফিরে আসার কথা। অথচ জুনভিত্তিক হিসেবে চারটি বাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৩৪৬ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংক ১৪৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এছাড়া জনতা ব্যাংক ১৪১ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। কাক্সিক্ষত হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এছাড়া অগ্রণীর ১৯৯ কোটি টাকা, জনতার ৬৬৪ কোটি টাকা ও রূপালীর ১ হাজার ৫২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। বৈঠক সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট চার ব্যাংকের কোন এমডি মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, বৈঠকে সব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে গবর্নর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অবস্থার উন্নতির নির্দেশ দিয়েছেন গবর্নর।
×