ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা আগের মতোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬

জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা আগের মতোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাজের ক্ষেত্রে শিক্ষাসংক্রান্ত দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা আবার স্পষ্ট হলো অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা ঘিরে। পরীক্ষার মাত্র ১২ দিন আগে হঠাৎই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানালো, আগামী ১ নবেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা তারা নিতে পারছে না। এর ফলে আসন্ন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা আগের মতোই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার অনীহা দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে বহু আগেই। দায়িত্ব পাওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো অষ্টম শ্রেণীর এ পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে বলে ঘোষণাও দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুসারে এ মন্ত্রণালয় কমিটি করে এক দফা বৈঠকও করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এখন পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১২ দিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছিলÑ তারা জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ পরীক্ষা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যাস্ত করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন শেষ মুহূর্তে এসে তারা ওই পরীক্ষা না নিলে নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এক আধাসরকারী পত্রে (ডিও লেটার) এ বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এ পরীক্ষাটি নিতে বলেছিল। কিন্তু যেহেতু মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে তাদের কর্তৃত্ব দেয়নি তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ? মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ?এ পরীক্ষা পদ্ধতি আগের মতোই বহাল থাকবে। এদিকে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানার পরই কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত হলেও কোন অসুবিধা হবে না। কারণ পরীক্ষা দুটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায়ের অধীনে হলেও সেটি নেয়া হতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমেই। এখনও বোর্ডের মাধ্যমেই সেটি নেয়া হবে। ফলে খুব সমস্যা হবে না। এছাড়া ইতোমধ্যে এ পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে দ্রুত প্রস্তুতি সভার আয়োজন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে বলে যে খবর প্রচার হয়েছে তা ঠিক নয়। মন্ত্রণালয় ফেসবুক বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরীক্ষা কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, এর আগে গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধের খবর প্রকাশ হচ্ছিল। গণমাধ্যমে পরীক্ষা কমিটির সূত্রের বরাদ দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে এ সংবাদ প্রকাশ হলেও মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এতদিন কোন বক্তব্যও দেয়নি। তবে নানা বিতর্কের পর এখন পরীক্ষা কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই-একটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে আমরা নাকি ফেসবুক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ খবর তো ঠিক নয়। এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আগামী ১ নবেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি এবং ২০ নবেম্বর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মাহববুর রহমান বলেছেন, পরীক্ষার সব প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হবে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১ নবেম্বর। চলবে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টা থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষায় সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।
×