ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ অক্টোবর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ভালই সাজানো হয়েছে ঢাকা। রাজধানী শহরের চেহারা মোটামুটি বদলে গেছে। প্রধান প্রধান সড়ক, সড়কদ্বীপ, খোলা চত্বর সবখানেই উৎসবের রং মাখা। উপলক্ষ ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে সবার। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। শনিবার দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হচ্ছে। নেতাকর্মীদের জন্য এটি অনেক বড় ঘটনা। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি নিয়ে অন্যরকম আবেগ অনুভূতি কাজ করে রাজধানীবাসীর মনে। তারাও সম্মেলনের বিভিন্ন খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বেশ কৌতূহলী। সব মিলিয়ে সম্মেলন ঘিরে দারুণ সরগরম একটি অবস্থা। এত এত মানুষের সমাবেশ। বিশাল আয়োজন। প্রস্তুতিও ব্যাপক। গত বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে সাজসজ্জা উপকমিটি। মূল ভেন্যু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকোর আদলে মঞ্চের নকশা করেছেন ইউসুফ আলী হিরা। মঞ্চের উচ্চতা ২৫ ফুট। এর পেছনে থাকছে ৩৫ ফুট উঁচু এলইডি স্ক্রিন। মঞ্চের সামনের দিকে বিশেষ গ্যালারি। আকার ২৩০ ফুট বাই ১২৫ ফুট। এখানে সাত হাজার অতিথির আসন গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বিশাল জায়গাজুড়ে চলছে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ। ৪০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যান্ডেল এরই মাঝে দৃশ্যমান হয়েছে। সম্মেলনে ‘স্যান্ড আর্ট’র ভাষায় তুলে ধরা হবে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের সেই কালো রাত। থাকছে আরও নানা আয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কাউন্সিলের প্রধান কেন্দ্র হলেও, আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা শহরে। ২০তম জাতীয় কাউন্সিল জাঁকজমকপূর্ণ করতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। অসংখ্য মরিচ বাতি জ্বলছে, নিভছে। দেখতে বেশ লাগে। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোও চমৎকার সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে স্থান পেয়েছে আওয়ামী লীগের কিংবদন্তি নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। পাশেই বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাসি মুখ। আছেন সজীব ওয়াজেদ জয়ও। ব্যানার ফেস্টুনে তুলে ধরা হয়েছে সরকারের উন্নয়ন চিত্র। তবে, এত কিছুর পরও একটি অভাব অনুভূত হয়। সাজসজ্জার কোথাও আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্জনের কথা কোন মাধ্যমেই তুলে ধরা হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ যে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল, সে কথা সাজসজ্জার কোথাও সেভাবে বলার চেষ্টা করা হয়নি। চাকচিক্য আছে। গাম্ভীর্যের একটা অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই বিষয়টির দিকে এখনও নজর দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী ও রাজধানীর সচেতন মহল। আজকের পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির শক্তিই বড় শক্তি। খাতটি নিয়ে তাই বিশেষভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড।’ তথ্য প্রযুক্তির বৃহৎ প্রদর্শনী এখন চলছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। ‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ সেøাগানে উৎসবের আয়োজন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বেসিস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। তিন দিনব্যাপী আয়োজনের বৃহস্পতিবার ছিল দ্বিতীয় দিন। এদিনও কৌতূহলী মানুষের ভিড় ছিল কনভেনশন সেন্টারে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখেছেন তরুণরা। কৌতূহলী চোখে বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থেকেছেন। বিগত দিনের তুলনায় এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আরও বড় আরও বিস্তৃত হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এতে যোগ দিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এমন খ্যাতিমান দুই শতাধিক ব্যক্তি উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। নেপাল, ভুটান, সৌদি আরবসহ ৭ দেশ থেকে এসেছেন ৭ জন মন্ত্রী। মাইক্রোসফট, ফেসবুক, জেডটিই, একসেন্সার, হুয়াওয়েসহ পৃথিবী বিখ্যাত বহু প্রতিষ্ঠান উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। উৎসবে সফটওয়্যার কোম্পানি আছে ৪০০টি। এছাড়া রাখা হয়েছে সফটওয়ার শো-কেসিং, ই-গভর্নেন্স এক্সপোজিশন, মোবাইল ইনোভেশন, ই-কমার্স এক্সপো ও স্টার্টআপ জোন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে বিশেষ উপস্থাপনা পেয়েছে বাংলাদেশ। সরকারের মন্ত্রণালয়, দফতর অধিদফতরগুলো কীভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে কীভাবে জনগণকে সেবা দিচ্ছেÑ সংশ্লিষ্ট স্টলগুলো থেকে পরিষ্কার ধারণা নেয়া যায়। সরকারের ৪০টি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। স্টল সাজিয়েছে শতাধিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ডিজিটাল কার্যক্রম দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছে। আয়োজক সূত্র জানায়, উৎসবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ার বিষয়ক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো থাকছে ডেভেলপার সম্মেলন। উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেমিনার। এবারও বিভিন্ন বিষয়ের উপর ১২টি সেমিনার আয়োজনের কথা রয়েছে। ৪০ জন বিদেশীসহ ২০০ বক্তা বিভিন্ন দিনে বক্তব্য রাখবেন। আয়োজন করা হবে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স কনফারেন্স, আইসিটি এডুকেশন সম্মেলন। এসবের বাইরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে মহাযজ্ঞ। কোন প্রবেশ ফি ছাড়াই ঘুরে দেখা যাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন, আজ মেলার শেষ দিন। দূরত্ব যানজট ইত্যাদি কারণে যারা যেতে পারেননি, একটিবার তারা ঘুরে আসতে পারেন।
×