ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরাজের স্পিন ভেল্কিতে বেশিদূর এগোতে পারেনি ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ অক্টোবর ২০১৬

মিরাজের স্পিন ভেল্কিতে বেশিদূর এগোতে পারেনি ইংল্যান্ড

মিথুন আশরাফ ॥ দুইজন দুইরকম রেকর্ড গড়লেন। দুইজনের আবার দুইরকম অনুভূতিও হলো। একজন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়লেন। কিন্তু অনুভূতি হলো ফিকে! ব্যাটিংয়ে তাকে নিয়েই ইংলিশদের ভরসা। অথচ তিনিই কিনা দ্রুত সাজঘরে ফিরলেন। রেকর্ডের দিনে বিমর্ষ কুককেই মিলল। আরেকজন স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই বাজিমাত করলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের প্রথমদিনেই ৫ উইকেট তুলে নিলেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন বোলার অভিষেক টেস্টেই যা করতে পারেননি, তাই করে দেখালেন মিরাজ। মহা আনন্দের অনুভূতি! তার স্পিন ঘূর্ণিতেই যে প্রথমদিনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিল। আসলে বলতে গেলে, দিনটিতে মিরাজ ছাড়া আর কিছুই যেন আলোচনা করার মতো নেই। ২৩৭ রান করতেই ৭ উইকেট হারাল ইংল্যান্ড। এরপর প্রথমদিন শেষে ব্যাট হাতে থাকা ক্রিস ওকস (৩৬*) ও আদিল রশিদের (৫*) জুটিতে ২৫৮ রানে পৌঁছাল ইংল্যান্ড। প্রথমদিনও শেষ হলো। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট নেয়ারও রেকর্ড আছে। ডানহাতি স্পিনার সোহাগ গাজী (৬/৭৪), বামহাতি পেসার মনজুরুল ইসলাম (৬/৮১), বামহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি (৬/৯৪), সাবেক ডানহাতি স্পিনার নাঈমুর রহমান দুর্জয় (৬/১৩২) ৬ উইকেট করে নিয়েছেন। আছে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও। সেই তালিকায় আছেনÑ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৫/৫১), তাইজুল ইসলাম (৫/১৩৫) ও মিরাজ (৫/৫৯)। তবে এখনও মিরাজের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইংল্যান্ডের হাতে এখনও ৩ উইকেট আছে। যেহেতু দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব আল হাসান (২/৪৬) মিলেই প্রথমদিনে ইংল্যান্ডের সবকটি উইকেট তুলে নিয়েছেন, তাই স্পিন স্বর্গই বলা চলে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটকে। তাহলেতো আজ দ্বিতীয়দিনেও স্পিনারদের দাপটই দেখা যাবে। তাই যদি হয়, তাহলে মিরাজ আরও ২টি উইকেট পেলেই অভিষেকে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি বোলার হয়ে যাবেন। তা না হলেও ৫ উইকেট নিয়েই রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন মিরাজ। কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের প্রথমদিনেই বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। এ রেকর্ড গড়েই মহা আনন্দের অনুভূতি হয়েছে মিরাজের। প্রথমদিন শেষে টিভিতে কথা বলতে গিয়ে প্রথমদিনেই ৩৩ ওভার করা মিরাজ জানান, ‘আমি ক্লান্ত নই। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময় এভাবে অনেক ওভার বল করতে হয়। এ অভিজ্ঞতা আমার আছে। এদিক থেকে আমার কোন সমস্যা হয়নি। আমি ভাল জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করছি। উইকেটে বেশ টার্ন ছিল। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়েছি। এ কারণেই পাঁচ উইকেট পেয়েছি। আগামীকাল (আজ) আমাদের অনেক কিছুই করতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শুরুতেই ইংল্যান্ডের তিন উইকেট নিয়ে নিতে হবে। তাহলে আমাদের কাজটি সহজ হবে।’ শুরুতেই ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে ইংল্যান্ড। কুক (৪), বেন ডাকেট (১৪) ও গ্যারি ব্যালান্স (১) আউট হওয়াতে বিপাকে পড়ে যায় ইংলিশরা। সেখান থেকে মঈন আলী ও জো রুট মিলে দলকে একটু এগিয়ে নিয়ে যান। চতুর্থ উইকেটে দুইজন মিলে ৬২ রানের জুটি গড়েন। যেই ইংল্যান্ড ৮৩ রানে পৌঁছে, রুটকে (৪০) সাজঘরে ফেরান মিরাজ। ইংল্যান্ডের চার উইকেটের পতন ঘটে। মনে করা হচ্ছিল, প্রথমদিনেই গুটিয়ে যাবে ইংল্যান্ড। ১০৬ রানে গিয়ে বেন স্টোকসকেও (১৮) যখন আউট করে দেন সাকিব, তখন সেই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে মঈন ও বেয়ারস্টো মিলেই যেন ৮৮ রানের জুটি গড়ে সেই সম্ভাবনা ফিকে করে দেন। এ দুইজনের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল, দিনটি তারাই শেষ করবেন। কিন্তু ১৯৪ রানে যেতেই পাঁচবার রিভিউ থেকে বাঁচা মঈনকে (৬৮) আউট করে দেন মিরাজ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আসল কাজটি করেন। এরপর ছোট্ট দুটি জুটিও হয়। সঙ্গে মিরাজ আরও একটি উইকেটও পান। বেয়ারস্টোকে আউট করেই ৫ উইকেট শিকার করেন। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে প্রথমদিনেই অলআউট করা না গেলেও মিরাজ ঠিকই দিনটি নিজের করে নেন। বাংলাদেশেরও করান। মিরাজের ঘূর্ণির পর, দ্যুতির পর এবার বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের পালা। দ্রুত ইংল্যান্ডকে অলআউট করার পর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদেরই যা করার করতে হবে। টেস্ট বাঁচাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদেরই উইকেট আঁকড়ে থাকতে হবে।
×