ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

সৃজিতের জুলফিকার

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২০ অক্টোবর ২০১৬

সৃজিতের জুলফিকার

‘এই এলাকা কলকাতার মধ্যে ছোট্ট একটা দেশ। হ্যাঁ দেশ! কেবল জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকা বাদ দিয়ে...’ এমনি চাঞ্চল্যকর বক্তব্য মেধাবী পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘জুলফিকার’এর। মুক্তির আগে কেবল ট্রেলার দিয়েই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন সব মহলে। হিন্দীতে হায়দার, ইংরেজীতে ম্যাকবেথের পর এখন বাংলায় উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। ২০১৬ সালের শারদীয় দুর্গাপূজা এবং বিশ্ব সাহিত্য সম্রাট শেক্সপিয়ারের চতুর্থ মৃত্যুশতবার্ষিকী উপলক্ষে, জুলিয়াস সিজার এবং এ্যান্টনি এ্যান্ড ক্লিওপেট্রা চরিত্র ও কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা। গল্পে সাহিত্যের মিশেলে কলকাতা বন্দর এলাকার এক অন্ধকার বাস্তব দেখানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের একচেটিয়া প্রভাব, ত্রাসের কালো ছায়া, প্রশাসনের ভয়ে কাতুরে বিচরণ, সঙ্গে মিথ, ইতিহাস ও বর্তমান এক করে সাহিত্যের জুলিয়াস সিজারকে তুলে এনেছেন জুলিফিকারে। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বলতে গেলে টি-টাউনের প্রায় সব উজ্জ্বল তারকাকে নিয়ে আলোকিত করেছেন জুলফিকারের ক্যানভাস! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়,যিশু সেনগুপ্ত, অঙ্কুশ, কৌশিক সেন ও পাওলী দামের মতো শক্তিধররা রয়েছেন এই ছবিতে, স্ব-স্ব মহিমায়। দেবী দুর্গার আগমনে ষষ্ঠী পূজার দিন পশ্চিমবঙ্গসহ সমগ্র ভারতবর্ষে মুক্তি পায় ছবিটি। সিনেমাপ্রেমী আলোচক, সমালোচক প্রায় সকলে দেখেছেন এই ছবি। পরিচালক হিসেবে সৃজিত বেশ আগেই প্রমাণ করেছেন স্বীয় যোগ্যতা। অটোগ্রাফ, চতুষ্কোণ, বাইশে শ্রাবণ, হেমলক সোসাইটি, জাতিস্মর, মিসর রহস্য, রাজকাহিনীর মতো নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এর মধ্যে জাতিস্মর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি পুরস্কার জিতেছে। বাংলা সিনেমায় ঋত্মিক ঘটক, মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়দের মতো বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পর তেমন কেউকে মেধার ছাপ রাখতে দেখা যায়নি। তবে গৌতম ঘোষ, অর্পণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ ভাল গল্প ও নিজস্ব নির্মাণশৈলী দিয়ে হাঁটতে চেষ্টা করেছেন এই দীপ্তিময় পথে। তবে সে যাত্রাও দীর্ঘ হয়নি। কারণ অসময়ে প্রস্থান ঘটে ঋতুপর্ণের। পরবর্তীতে, বিশেষ করে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল গল্পের সিনেমা বানাতে। এ ক্ষেত্রে সৃজিত নিজেকে পরিশ্রমী নির্মতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। জুলফিকারে চেনা তারকাদের প্রায় অচেনা ভাবে পর্দায় উপস্থাপন করেছেন অচেনা চরিত্রের মধ্য দিয়ে। তবে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র জুলফিকার নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যেও পড়তে হয়েছে তাকে। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদয়ের একাংশ এই সিনেমাকে বিতর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের অভিযোগ, মুসলমানদের বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করাই ছিল পরিচালকের মূল উদ্দেশ্য। তা না হলে খোদা হাফেজ বলে পরের দৃশ্যেই কেন মানুষ হত্যা দেখানো হবে! আর কেনই বা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা রাজ্যের আলাদা অংশ বলে উপস্থাপন করা হবে! এমন সব বিতর্কিত দৃশ্যকল্প সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে তারা আপত্তি জানিয়েছে। সিনেমা হলে এর প্রদর্শন বন্ধ করতে প্রেসক্লাবে সভা করেছে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।এর প্রেক্ষিতে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমুন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এমন সব আলোচিত, সমালোচিত ও তারকাখচিত ঘটনাবহুল চলচ্চিত্রের নাম জুলফিকার। ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করছেন অনুপম রায়, সিনেমাটোগ্রাফিতে সৌমিক হালদার এবং সম্পাদনা করেছেন অনিন্দ্য ফিল্মস। এক পুরনো মসজিদে, আমি আজ ভাল আছিÑগানগুলোর সমৃদ্ধ কথা ও সুর ইতোমধ্যে দর্শক-শ্রোতা মহলে নন্দিত হয়েছে। সব কিছুর উর্ধে সৃজিত মুখোপাধ্যায় তার সৃজনশীল কর্মে সব সময় নিজস্ব আলোকরশ্মি ফেলতে চেষ্টা করেন। ছবিটির সাফল্য সেখানেই।
×