ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আয়তি নাহার

দর্শকনন্দিত আয়নাবাজি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২০ অক্টোবর ২০১৬

দর্শকনন্দিত আয়নাবাজি

চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য নতুন এক আয়োজন নিয়ে হাজির হলো সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি আয়নাবাজি। অনেকদিন পর একটি ব্যতিক্রমী, দর্শক মাতানো বাংলা ছবি উপহার দেয়ার জন্য পরিচালক থেকে শুরু করে সমস্ত কলাকৌশলীকে আন্তরিক অভিনন্দন। সাধারণ বিষয়বস্তু থেকে অসাধারণ গল্প, কাহিনীর গতি পাওয়া আয়নাবাজি সত্যিই দর্শকদের বাজিমাত করেছে। বিষয়বস্তু সাধারণ হলেও অভিনবত্ব, চমকপ্রদ এবং ব্যতিক্রমের ধারায় আয়নাবাজি দর্শক নন্দিত হতে পেরেছে। এক সময় বাংলা ছবির প্রচুর জনপ্রিয়তা ছিল। মানের দিক থেকেও বাংলা ছবি দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করেছে। সর্বোপরি খ্যাতনামা এবং কিংবদন্তি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আজও দর্শকদের হৃদয় স্থায়ীভাবে আসন গড়তে পেরেছেন। তবে বাংলা ছবির মান একেবারে কমে গেছে তা বলা ঠিক হবে না। ক্লাসিক্যাল ছবি, দর্শক নন্দিত ছবি আজও বাংলার সিনেমা জগতকে নানা মাত্রিকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে। সমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিচ্যুতিও ঘটে যায় অনিবার্যভাবে। সুস্থ চলচ্চিত্রের ধারাও মাঝে মাঝে বিচ্যুতির শিকারে পড়ে, অপসংস্কৃতির মোহজালে আবিষ্ট হয়। আবার আপন বৈশিষ্ট্যে নিজস্ব ধারায় সে বিপর্যয় কাটিয়েও ওঠে। ফলে কয়েকটা ছবি দর্শকদের সেভাবে হয়ত আলোড়িত করতে পারে না ঠিক। তার মানে এই নয় যে, একেবারে বিপন্ন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। ক্রুটি-বিচ্যুতি, ভাল-মন্দের এই কাতারে আয়নাবাজি ছবিটি তার অভিনব কাহিনী এবং অভিনয় কৌশলতায় দর্শকদের হৃদয়ে এক স্পর্শকাতর অনুভূতি জাগায়। দর্শকরা মুগ্ধ হয় কাহিনীর বৈচিত্র্যে, অভিনয় শিল্পীদের নান্দনিক দ্যোতনায়। আয়নার ভেতর আপন প্রতিবিম্ব দেখার যে চমকপ্রদ অনুভব, তা নায়ক চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শকরা ভীষণভাবে উপভোগ করেছেন। আয়নায় আপন অবয়বকে উপস্থাপন করে চঞ্চল চৌধুরী দর্শকের সারিকেও আয়নার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছেন। মুগ্ধ, বিস্মিত দর্শক-শ্রোতা এক অনাবিল উচ্ছ্বাসে নায়ককে নিজেদের প্রতিবিম্বে দেখারও তাগিদ পেয়েছেন। বিচিত্রভাবে চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থাপনা দর্শকদেরও ভাল লাগার শীর্ষে নিয়ে যায়। কখনও বা মানসিক প্রতিবন্ধীর চরিত্রে নায়কের অসাধারণ ভূমিকা, কখনও বা একজন ধর্ষকরূপে চঞ্চলের অভিনয় দক্ষতা শ্রদ্ধামিশ্রিত ভাল লাগা তৈরি করেছে। কাহিনীর গতি এত স্বচ্ছন্দ এবং নিরন্তর ছিল যে দর্শকরা টেরও পেলেন না কখন শুরু হলো আর কখনই বা শেষ হলো সিনেমার গল্প। অভিনয়, গল্প এবং কাহিনীর গতিপথ এত সাবলীলভাবে এগোচ্ছিল যে দর্শকরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো একেবারে আবিষ্ট হয়ে থাকল। ছবিতে আরও একটি চমকপ্রদ ব্যাপার ছিল কণ্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার অভিনয় দক্ষতা। সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে পার্থ বড়ুয়া তার অভিনয় কৌশলে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। একেবারে দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কাটার মতো। নায়িকার চরিত্রে নাবিলা মানানসই। কাহিনীর গতিপথ এমনই যে ছিল নাবিলার এর চেয়ে বেশি কিছু দেখানোর সুযোগও ছিল না। পরিচালক অমিতাভ রেজাকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাতে চাই দর্শকদের হৃদয়কাড়া এমন একটি সুস্থ ও ব্যতিক্রমী ছবি উপহার দেয়ার জন্য। আমাদের শিল্প-সাংস্কৃতিক বলয় এমন ধরনের রুচিশীল দর্শক মাতানো ছবিতে যদি সব সময় তৎপর থাকে তাহলে যে কোন অপশক্তিই আমাদের সুস্থ সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হবে। যার প্রভাব পড়বে গোটা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। সমাজে অগ্রহণযোগ্য ঘৃণ্য অপসংস্কৃতিকে রোধ করার জন্য আয়নাবাজির মতো আরও অনেক দর্শক নন্দিত, ভাল লাগার ছবি আশা করতেই পারি।
×