ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২০ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট আজ শুরু হবে। এর মধ্যদিয়ে ২০১০ সালের পর সাড়ে ছয় বছর পর দুই দলের মধ্যকার টেস্ট সিরিজও মাঠে গড়াবে। ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় টেস্টটি শুরু হবে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। ২০০০ সাল থেকে মাত্র ৭টি টেস্টে জিতেছে। ৭১টি টেস্টেই হেরেছে। ১৫টি টেস্টে ড্র করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ে ছাড়া টেস্ট খেলুড়ে কোন দলের বিপক্ষেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে দুটি ম্যাচ জিতেছে। আর ২০০৫ সালে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম জয়টি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মিলেছে। এর সঙ্গে ২০১৩ সালে একবার, ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়েকে তিনবার হারিয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে ৫ বারই হারিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, ১৬ বার। ১৪ বারই হেরেছে। ২ বার ড্র করেছে। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৪ বার খেলে ৫ বার জয়ের বিপরীতে ৬ বার হেরেছে ৩ বার ড্র করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ বার খেলে ২ বার জিতেছে। ৮ বার হেরেছে। আর ২টি ম্যাচ ড্র করেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১বার মুখোমুখি হয়ে ৮ বার হেরেছে। ৩ বার ড্র করেছে। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ বার করে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮ বারই হেরেছে। ২ বার ড্র করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ বার হারের বিপরীতে ১ বার ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ৮ বার খেলে ৬ বার হেরেছে। ২ বার ড্র করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ বার খেলে ৮ বারই হেরেছে। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ৪ বার খেলে, প্রতিবারই হার হয়। তবে ৫ ম্যাচের বেশি খেলে শতভাগ হার হয়েছে শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। বৃষ্টির সুবাদে হোক, যেভাবেই হোক; ৫ ম্যাচের বেশি কোন দলের বিপক্ষে খেলে শতভাগ হার নেই বাংলাদেশের। শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আছে। সেই দলটিই এবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ যে ১৫টি ম্যাচে ড্র করেছে, এরমধ্যে ৬টি ম্যাচে নিজেদের যোগ্যতাতেই ড্র করতে পেরেছে। বাকি ৯টি ম্যাচেই বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে। ২০০১ ও ২০০৪ সালে জিম্বাবুইয়ে, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে ভারত, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড, ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০১৫ সালে দুইবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টির সুবাদে ড্র করে বাংলাদেশ। তবে বাকি ৬টি ম্যাচ যে ড্র হয়, সেটি ক্রিকেটারদের যোগ্যতা বলেই হয়। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ বছর হয়ে গেল। এই ১৬ বছরে বড় কোন শক্তিকে বাংলাদেশ যে টেস্টে হারাতে পারল না, সেটি হতাশাই জাগে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, টেস্টে তার ধারে কাছেও বলতে গেলে নেই। হঠাৎ হঠাৎ বিশেষ কোন মুহূর্ত তৈরি হয়। যা ইতিহাস রচনাও করে। কিন্তু তাতে জয় ধরা দেবে যে কবে, তা সময়ই বলবে। তবে ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ে, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড, ২০১৪ সালে আবার শ্রীলঙ্কা ও ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েই ড্র করে বাংলাদেশ। অবশ্য জয় আসবেই বা কি করে। বছরে যে খুব কম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এবারই যেমন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামার আগে ১৪ মাস টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে ছিল বাংলাদেশ। এভাবে হলে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে কী উন্নতি করা সম্ভব? কোনভাবেই নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট জিতে সিরিজও নিজেদের মুঠোয় করে নেয়, সেটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নৈপুণ্য কোনভাবেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাও ‘বোর্ড-ক্রিকেটার’ ঝামেলায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলই ছিল। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন বাংলাদেশ খেলতে নামছে, তখন সবারই জানা, ইংল্যান্ডের চেয়ে টেস্টে অনেক দুর্বল দল বাংলাদেশ। আর তাই হারের সম্ভাবনাই বেশি। তবে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখাতে পারলে ড্র করা অসম্ভব কিছু নয়। পারবে বাংলাদেশ তা করে দেখাতে? ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক অবশ্য কন্ডিশনকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছেন। এছাড়া তিনিও জানেন, তার দলে জেতার মতো সব রসদই আছে। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি। অন্যদিকে আমরা গত কিছুদিন বাইরের কন্ডিশনে খেলিনি। বিশেষ করে উপমহাদেশের কন্ডিশন আমাদের জন্য আদর্শ নয়। তারপরও এর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। গত এ্যাশেজে কন্ডিশন আমাদের পক্ষে না থাকা সত্ত্বেও আমরা জিতেছিলাম। আশাকরি ভাল উইকেটে খেলা হবে। ২০১০ সালে আমরা এখানে খেলেছিলাম। সেবার উইকেট খুব ভাল ছিল। আশাকরি সেবারের মতোই আচরণ করবে চট্টগ্রামের উইকেট। আমার মনে হয় উইকেট অবশ্যই স্পিন সহায়ক হবে। উপমহাদেশের উইকেটে সবসময় বাড়তি টার্ন হয়ে থাকে। প্রথম কয়েকদিন এখানে ব্যাটিং স্বর্গ হলেও এরপর উইকেটে আস্তে আস্তে ভাঙ্গন ধরবে। বিশেষ করে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের উইকেট থেকে বোলাররা বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ভাল খেলার দিকেই মনোযোগী। বলেছেন, ‘ফলাফল দিনশেষে একটা হবেই। ইংল্যান্ডের সাথে জিতে গেলেই আমরা বিশ্বের সেরা টেস্ট দল হয়ে গেলাম না। আমাদের মূল ফোকাসটা থাকবে ধারাবাহিক খেলা। গত ২ বছরে আমরা ওয়ানডেতে অনেক ধারাবাহিক ছিলাম। তার মানে এই নয় যে সবম্যাচই জিতেছি। কিছু হেরেছিও। তবে গ্রাফটা উন্নতির দিকে ছিল। আমরা এটাই চাই যে টেস্টেও যেন এরকম একটা দল হতে পারি। যেন প্রতিটি টেস্টে আগের চেয়ে ভাল খেলতে পারি। এভাবে যদি একটা ভাল অবস্থানে থাকতে পারি পাঁচটা দিনে, তাহলে হয়তো জয়ের কাছাকাছি থাকতে পারি। সেদিক থেকেও হয়তো কোচ বলেছে যে জয়টা বোনাস হবে। আর যদি নাও হয়, অন্তত আমরা যেন পাঁচটা দিন লড়াই করে ভালভাবে বোঝাতে পারি যে আগের চেয়ে আমদের লড়াই করার মানসিকতা আছে।’
×