ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে ১৪ ছাত্র গুলিবিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০১৬

হবিগঞ্জে ১৪ ছাত্র গুলিবিদ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ১৯ অক্টোবর ॥ হবিগঞ্জের বাহুবলে দ্বীননাথ ইনস্টিটিউট মডেল হাইস্কুলকে সরকারীকরণ এবং এক শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে বুধবার সকালে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও এবং ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভের পর থানায় হামলা চালালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আর অভিভাবকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে ১৪ ছাত্র গুলিবিদ্ধ এবং শিক্ষক-অভিভাবক ও পুলিশসহ আহত হয়েছে আরও ৫০ জন। গুরুতর আহত ৯ম শ্রেণীর ছাত্র রেজাউল করিম ও আব্দুর রহমান, ১০ম শ্রেণীর ছাত্র আনহার আলী ও বিল্লাল হোসেনসহ ১৪ ছাত্র এবং বেশ কয়েকজন অভিভাবককে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালসহ স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর স্কুলের সহকারী শিক্ষক অশোক দাশ, গোলাম মহিউদ্দিন ও ১০ শ্রেণীর ছাত্র জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত আরও একজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে ঘটনার পরপরই এসপি জয় দেব কুমার ভদ্র ও এএসপি হেড কোয়ার্টার সুদীপ্ত রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থী-জনতার ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় বিকেলে সংশ্লিষ্ট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন এসপি। এই ঘটনার পর স্কুল ও আশপাশের গ্রামগুলোতে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। যে কোন সময় পুলিশের সঙ্গে আবারও বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পুলিশ ও ছাত্র-শিক্ষকগণ জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামসুন্নাহার পারভীনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে বুধবার বেলা ১১টায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় শত শত মানুষ শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও এবং ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ওপর জুতা নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাইসহ এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে সরিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ এক শিক্ষককে আটক করেছে খবর আসার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। ফলে দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় সংঘটিত ছাত্র-জনতা থানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুরে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশ চড়াও হয় বিক্ষোভকারীদের ওপর। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতেও কাজ না হওয়ায় মুহুর্মুহু শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে ছাত্র-অভিভাবকসহ অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বুলেটবিদ্ধসহ গুরুতর আহত অনেককেই দ্রুত হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এলাকাবাসী। এএসপি হেড কোয়ার্টার সুদীপ্ত রায় জনকণ্ঠকে জানান, এই ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ বিক্ষুব্ধ লোকজনের ওপর অন্তত ১৪ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ৯০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এসপি জয় দেব কুমার ভদ্র ওই ঘটনার নেপথ্য কারণ উদঘাটন ও প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতকরণসহ সার্বিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এএসপি (সদর) সুদীপ্ত রায়কে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন। তিনি জানান, ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সমাধানে সকল পক্ষকে নিয়ে বৈঠক চলছে।
×