ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বরে ভারত যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ অক্টোবর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বরে ভারত যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণেই এই সফর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে এখন ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে প্রস্তুতি চলছে। এদিকে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে একটি জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী আঞ্চলিক সম্মেলন করতে চান নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগদান শেষে সোমবার ঢাকায় ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০১৫ সালের জুনে ঢাকা সফর করেছিলেন। আগামী ডিসেম্বরে ভারত সফর হবে মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। যদিও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ে শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনে দুই দেশ পরস্পরকে সমর্থন করছে। রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি এক বার্তায় শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কাশ্মীরের উরিতে ভারতের সেনাক্যাম্পে হামলার পর শেখ হাসিনা হামলার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাস দমনে ভারতের পাশে থাকার কথা বলেন। তবে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি এখনও সই হয়নি। বাংলাদেশ আশা করছে, দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তিও সই হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতের সফরের জন্য প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরে ৩-৪ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ওই সময়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই দুই দেশের মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় আসতে পারেন। ওই সময়ে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ভারত সফরের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হতে পারে। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ডিসেম্বরে দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সফরের বিষয়ে দুই দেশ এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও তিনি জানান। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে ডিসেম্বরে ভারতে আসছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই এখন ভারতের শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগও বাড়ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৭ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার বিষয়টিও ভারত সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকার প্রধানরা উপস্থিত থেকে এই সম্মেলনে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। মোদি এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে সহউদ্যোক্তা হিসেবে রাখতে চাইছেন। ভারতের গোয়ায় গত ১৬ অক্টোবর ব্রিকস বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনের সাইড লাইনে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উল্লিখিত সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি এই প্রস্তাব দেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী নতুন এই উদ্যোগে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই ইতিবাচক। তবে বাংলাদেশ ও ভারত যদি শেষ পর্যন্ত এই সম্মেলন আয়োজনের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে কোন কোন দেশ এতে যোগ দেবে সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী আঞ্চলিক সম্মেলনে পাকিস্তান থাকছে না বলে এটা নিশ্চিত। পাকিস্তানকে বাদ দিয়েই এই আঞ্চলিক সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানকেই প্রধান বাধা বলে মনে করে এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ। পাকিস্তানের কারণেই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থারও (সার্ক) অগ্রগতি হচ্ছে না। আর আগামী ৯-১০ নবেম্বরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ইতোমধ্যেই বর্জন করেছে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। এসব দেশ নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত সম্মেলনে যোগ দিতে পারে। মোদির প্রস্তাবিত এই সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলন এখনও প্রস্তাব পর্যায়ে থাকলেও কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকেই এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাশাপাশি পর্যবেক্ষক হিসেবে অন্য অঞ্চল ও মহাদেশের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব এই সম্মেলনে থাকতে পারে।
×