ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা

জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের যারা মদদ দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের যারা মদদ দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, সবদিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এ ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। দেশের জনগণ জানে একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের উন্নয়ন করতে পারে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে যেসব ওয়াদা দিয়েছিল, সেগুলো পূর্ণ করেছি, আমরা যে ওয়াদা করি তা রক্ষা করি। আর এবারের সম্মেলনে দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে। বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বর্তমান মেয়াদের শেষ বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া হলেই বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) ও তাঁর দলের নেতাদের এত মায়াকান্না কেন? দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া বর্তমান সরকারের দায়িত্ব। আমরা যে কোন মূল্যে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের যারা মদদ বা প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্তস্নাত পতাকা তুলে দিয়েছে- বাংলার মাটিতে একদিন তাদেরও বিচার করা হবে। আর বিশ্বব্যাপী যেভাবে জঙ্গী দমন করা হচ্ছে, এদেশেও সেভাবে হচ্ছে। এটা নিয়ে কে কী বলল, সেটা বড় কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম কেন্দ্রীয় জাতীয় কাউন্সিলের সবশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পায় দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধন নিয়ে। বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় কমিটির আকার ৭৩ থেকে বেড়ে ৮১ জনে হবে। এক্ষেত্রে সভাপতিম-লীর সংখ্যা ৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক একজন করে এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা মোট দুইজন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান মেয়াদের শেষ বৈঠক হওয়ায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রায় সকল সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওয়াদা পূরণের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। ইতোপূর্বের কাউন্সিলে দেয়া ঘোষণাপত্রও বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। এবারও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে এবারের সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, কোন রকম জঙ্গীবাদ এই বাংলার মাটিতে সহ্য করা হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখনই জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া হয়, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধে যখন কোন জঙ্গীর মৃত্যু হয়- ঠিক তখনই বিএনপি নেত্রী ও তাঁর দলের নেতারা প্রশ্ন তোলেন! কান্নাকাটি শুরু করেন কেন? জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের প্রতি তাদের এত মায়াকান্না কেন? বাস্তবে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক মানুষ বাঁচাতে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ওপর আঘাত করা হয়, সেক্ষেত্রে তাদের (বিএনপি) আপত্তি কোথায়? জনগণের নিরাপত্তা দেয়া তো সরকারের প্রধান কর্তব্য। যে কোন মূল্যে জনগণের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। বরং যারা এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় বা মদদ দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা সবার মনে রাখা উচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায়ও কার্যকর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুই এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও মুক্তি দিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আর তাঁর স্ত্রী (খালেদা জিয়া) ঘৃণীত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষালম্বন করে তাদের মন্ত্রী বানিয়ে আমাদের লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। যারা এ কাজটি করেছেন তাদেরও একটি বাংলার মাটিতে বিচার হবে। কেননা অপরাধ করা এবং অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া সমান অপরাধ। এটা সবাইকে মনের রাখতে হবে। সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে উপ-মহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এ সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে। কারণ দেশের মানুষ ভাষা-থেকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি যা কিছু পেয়েছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পেয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে। আজ দেশের যে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি হচ্ছে তা আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক নীতিমালা কারণেই সম্ভব হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, গ্রাম-বাংলার মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যে দলটি নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করতে বাজেট প্রণয়ন করে। আমরা যে ওয়াদা দেই তা রক্ষা করি বলেই জনগণ তার সুফল পায় এবং পাচ্ছে। আগামীতে দেশকে আরও উন্নত-সমৃদ্ধ করতে এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে নতুন অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় থাকতে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ সময় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল, কোন পরিকল্পনা তারা গ্রহণ করতে পারেনি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কোনই পরিকল্পনা তাদের ছিল না, ছিল শুধু কীভাবে লুটপাট-দুর্নীতি করে নিজেরা ধনশালী হওয়া যায়। সেজন্য তারা ক্ষমতায় থাকতে এ্যাডহক ভিত্তিতে প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি করেছে, এতে দেশে ও মানুষের কোন উন্নতি বা কল্যাণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে দেশের কোন উন্নয়ন করেনি। ক্ষমতায় থাকতে এবং বাইরে থেকেও হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়াসহ হেন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। জঙ্গী, বাংলাভাই তো তারাই সৃষ্টি করে গেছে। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুফল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।
×