ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন নারী জঙ্গীর জবানবন্দীতে নেপথ্য কাহিনী

গুলশান হামলার পর একের পর এক ডেরা পাল্টায় জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ অক্টোবর ২০১৬

গুলশান হামলার পর একের পর এক ডেরা পাল্টায় জঙ্গীরা

শংকর কুমার দে ॥ নব্য জেএমবির জঙ্গীরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর থেকে একের পর এক বাসা বদল করে যেভাবে গা ঢাকা দিয়েছে তার নেপথ্য কাহিনী বের হয়ে এসেছে আজিমপুর জঙ্গী ডেরা থেকে গ্রেফতার হওয়া তিন নারী জঙ্গী প্রিয়তি, শায়লা ও খাদিজার জবানবন্দীতে। পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে একের পর এক জঙ্গী ডেরার পতন ঘটে। জঙ্গীরা নিহত ও গ্রেফতার হতে থাকলে তারা কিভাবে কোথায় আত্মগোপন করে ছিল তা তিন নারী জঙ্গীর আদালতে ও পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে ফুটে উঠেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সূত্র জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গত সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর আজিমপুরের জঙ্গী ডেরাটির পতন ঘটার সময়ে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় তিন নারী জঙ্গী। এই তিন নারী জঙ্গী হচ্ছে, আজিমপুরে নিহত আবদুল করিম ওরফে তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, পলাতক শীর্ষ জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি ও পলাতক আরেক শীর্ষ জঙ্গী নেতা জামান ওরফে বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন। আজিমপুর জঙ্গী ডেরা থেকে তাদের আহত অবস্থায় আটকের পর পুলিশ প্রহরায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার পর গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে জবানবন্দী দেয়া ছাড়াও গত সোমবার আদালতেও জবানবন্দী দিয়েছে তিন নারী জঙ্গী। তিন নারী জঙ্গীর মধ্যে দুই নারী জঙ্গী খাদিজা ও প্রিয়তি অনুশোচনা প্রকাশ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলেও শায়লা এখনও জঙ্গী জীবনে থাকাতেই অনড়। তদন্ত সূত্র জানান, জঙ্গীরা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে এক সঙ্গে একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে গোপন জঙ্গী ডেরা গড়ে তোলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন নারী জঙ্গীও। এর মধ্যে কয়েক নারী জঙ্গী এখনও পলাতক। নারী জঙ্গীদের দেয়া জবানবন্দীতে জানা যায়, এক বাসায় পুলিশের অভিযান হলেই অন্য বাসার জঙ্গীরা যেভাবে বাসা বদল করে এতদিন গা ঢাকা দিয়েছে তারা। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে যেদিন জঙ্গী হামলা হয় সেদিন হামলাকারীসহ জঙ্গী সমন্বয়করা ছিল ভাড়া করা বাসা বসুন্ধরায়। যেই রাতে গুলশানে হামলা হয় সেই রাতেই বসুন্ধরা থেকে গা ঢাকা দেয়া নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী। পরের দিন খুব ভোরে এই বাসা থেকে চলে যায় আবদুল করিম ওরফে তানভীর কাদেরীর গোটা পরিবারটি। তারা এখান থেকে চলে যায় মিরপুর রূপনগরের ছয় তলার এক বাসায়। মিরপুরের রূপনগরের এই বাসাটিতে থাকত নিহত মেজর মুরাদ ওরফে মেজর জাহিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে থাকত তার স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও তার দুই কন্যা। এই রূপনগরের বাসায় মেজর জাহিদের পরিবারের সঙ্গে থাকত পলাতক শীর্ষ জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজান তার স্ত্রী প্রিয়তি, নিহত তানভীর কাদেরী ও তার স্ত্রী পুত্র, পলাতক শীর্ষ জঙ্গী বাশারুজ্জামান ও তার স্ত্রী শায়লা। রূপনগরের বাসায় যখন জঙ্গীরা পরিবার নিয়ে থাকত তখন নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গী ডের গড়ে তোলে নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী।
×