ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও কর্মকর্তাদের লেনদেনের জোরে মানহীন, বিতর্কিত কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে;###;মাত্র দুজন শিক্ষার্থী আছে এমন কলেজও সরকারী তালিকায়;###;মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত কলেজ বাদ দিয়ে চিহ্নিত রাজাকারের প্রতিষ্ঠান তালিকায়

জাতীয়করণের তালিকায় নামসর্বস্ব স্কুল-কলেজ ॥ শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ অক্টোবর ২০১৬

জাতীয়করণের তালিকায় নামসর্বস্ব স্কুল-কলেজ ॥ শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য

বিভাষ বাড়ৈ ॥ যেসব উপজেলায় সরকারী কলেজ ও স্কুল নেই সেখানে একটি করে বেসরকারী স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। নীতিমালা মেনে কাজও এগোচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ দুই শতাধিক কলেজ-স্কুল জাতীয়করণে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নামসর্বস্ব ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্তির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক ও তাদের যোগ্যতা, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফলাফলকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট ও কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের জোরে ঐতিহ্যবাহী নামী কলেজকে বাদ দিয়ে অযোগ্য, মানহীন, বিতর্কিত কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছেন এলাকাবাসী। ছড়িয়ে পড়ছে অসন্তোষ। ১৯৯টি কলেজ সরকারী করার তালিকা প্রকাশের পর থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক জেলা ও উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলন করছেন এলাকাবাসী। বহু কলেজের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ। আবার বহু কলেজ সরকারী করার কথা বলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অধ্যক্ষ শিক্ষকদের কাছ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। ইতোমধ্যেই দুই কলেজের অধ্যক্ষের কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ে আসা আপত্তিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয়করণ বা সরকারী তালিকায় আসা কলেজের মধ্যে কোনটির জমি নেই, কোনটি সদ্য স্বীকৃতি পেয়েছে, আবার কোনটি গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ও বঙ্গবন্ধুর খুনীর সহচরের কলেজ। এর বাইরে উপজেলার বড় এবং সেরা কলেজকে জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত না হওয়া কলেজও জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। মাত্র দুজন শিক্ষার্থী আছে- এমন নামসর্বস্ব কলেজও প্রভাবশালীদের দাপটে চলে এসেছে সরকারী তালিকায়! এখানেই শেষ নয়, অর্থ আর প্রভাবশালীদের দাপটে জাতীয়করণের তালিকায় আসতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের প্রতিষ্ঠিত ভাল প্রতিষ্ঠান। অথচ তালিকায় ঢুকে পড়েছে রাজাকার, আলবদর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানও। এর ফলে সরকারের ভাল উদ্যোগে কলঙ্ক লাগছে বলে অভিযোগ তুলে প্রতিদিনই মানববন্ধন, মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচী পালিত হচ্ছে দেশের কোথাও না কোথাও। এদিকে কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণকে স্বাগত জানালেও এতে বেপরোয়া দুর্নীতি, নীতিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। ‘শিক্ষায় দুর্নীতি ও যোগ্যকে বাদ দিয়ে অযোগ্যকে মূল্যায়নের ফল হবে ভয়াবহ’-এমন মন্তব্য করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, জাতীয়করণ অবশ্যই ভাল উদ্যোগ কিন্তু জাতীয়করণ করতে গিয়ে শিক্ষক ও তাদের যোগ্যতা, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাবলিক পরীক্ষায় তাদের ফলাফলকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি অসাধু প্রভাবশালীদের দাপটকে গুরুত্ব দেয়া হয়, তবে তার ফল হবে জাতির জন্য ক্ষতিকর। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয়করণের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। শিক্ষাবিদরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরী। জেলা উপজেলায় প্রশ্নের মুখে জাতীয়করণ, প্রতিবাদ ॥ জাতীয়করণের ভিত্তি কী- স্পষ্ট বলা হয়েছে জাতীয়করণ নীতিমালাতেই। বলা হয়েছে- সরকারী কলেজবিহীন উপজেলা সদরের সবচেয়ে ভাল ফল করা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কলেজকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কলেজের বয়স, আয়তন, সম্পত্তি, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, উপকৃত জনগোষ্ঠী, কলেজটি থেকে অন্য সরকারী কলেজের দূরত্ব, নারী শিক্ষার্থীর অনুপাত ইত্যাদি দিকে লক্ষ্য রেখেই জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান সরকারী হয়েছে নীতিমালাকে পুরোপুুরি লঙ্ঘন করেই। আর এতে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষানুরাগীদের অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৩০ জুন মোট ১৯৯টি কলেজকে সরকারী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা পাঠানো হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী কর্মকর্তা জমিহীন, সদ্য পাঠদানের অনুমতি পাওয়া এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত আসামির কলেজকে সরকারী করার (জাতীয়করণের) অনুমোদন পাইয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকেই মূলত মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা হতে শুরু করে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এখন বিব্রত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার কর্মকর্তারা সংসদ সদস্য বা অন্যদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে যেসব সংসদ সদস্য এলাকাবাসীর অসন্তোষ সামলাতে জাতীয়করণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আসছেন, কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিষয়টি যেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও জানান। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক অতিরিক্ত সচিবের কাছে জাতীয়করণে সঙ্কটের কথা তুলতেই জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে যেটা হয়েছে এর জন্য আমাদের দায়ী করা যাবে না। জাতীয়করণ নীতিমালা মেনে পরিদর্শন শেষে যোগ্য, মানসম্পন্ন ও ঐহিত্যবাহী কলেজ তালিকাভুক্ত করেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে যদি নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে অন্তর্ভুক্ত করে যোগ্যদের বাদ দেয়া হয়, তবে আমাদের কী করার আছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় আন্দোলন হচ্ছে, অভিযোগ আসছে তার একটির নামও আমরা তালিকাভুক্ত করিনি। সংসদ সদস্যরাও অনেকে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এ অবস্থায় অন্তত ৪৫টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে নতুন করে ভাবা হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সংসদ সদস্য ও শিক্ষানুরাগীদের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যশোরে শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার দাবিতে মাঠে নেমেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। ইতোমধ্যেই কলেজের সামনে যশোর-ঢাকা মহাসড়কে কয়েক দফা মানববন্ধন করেছেন তারা। মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়, উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হয়ে সব যোগ্যতা পূরণ করা সত্ত্বেও কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়নি। বরং অজ্ঞাতকারণে এ কলেজটিকে পাশ কাটিয়ে উপজেলার ‘ভাংড়ি’ কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় রাখা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের নামে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নামকরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় কুষ্টিয়ার একটি কলেজ থেকে অংশ নিয়েছিল মাত্র দুজন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, সেই দুই পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করেনি। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পাঠদানই নীতিমালা অনুসারে থাকার কথা নয়। অথচ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার এই কলেজকেই করা হয়েছে সরকারী! জেলা ও উপজেলা শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এই কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য মোট ছয়জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে। তবে এদের মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাকি চারজন পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। ফলাফলে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশ নেয়া দুই শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে। গতবারও এই কলেজ থেকে দুজন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। খোদ কলেজের শিক্ষকরাই বলছেন, কলেজের যে অবস্থা তাতে সকলেই ভেবেছে কলেজ হয়ত চালানো যাবে না। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকও তাই অন্য পেশায় নিয়োজিত। তারা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়ানোয় মনোযোগী হতে পারেননি। এসব কারণে শিক্ষার্থীরাও আসে না। অভিভাবকরাও আগ্রহী নন। একই জেলার কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন অনেক ভাল কলেজ থাকা সত্যেও তার কোনটিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত নামী কলেজকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত এক রাজাকারের প্রতিষ্ঠিত কলেজকে জাতীয়করণের প্রতিবাদে মানববন্ধন প্রতিবাদ চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এলাকার শিক্ষক, শিক্ষানুরাগীরা মানববন্ধন করছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, কুড়িগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য মরহুম আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত রাজারহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে তা বাতিল করে স্থানীয় রাজাকারের প্রতিষ্ঠিত মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হয়। রাজাকার প্রতিষ্ঠিত কলেজকে বাদ দিয়ে রাজারহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। লক্ষ্মীপুরের রায়গঞ্জে একটি নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে! এ খবরে এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। নীতিমালা বহির্ভূতভাবে উক্ত তালিকা প্রকাশের প্রতিবাদে রায়গঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক সমাজ বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। তারা বলছেন, নন-এমপিও, ভৌত অবকাঠামোবিহীন ও যোগাযোগ দুরূহ একটি বিদ্যালয়, যা জাতীয়করণ শতভাগ নীতিমালা বহির্ভূত। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১১১ জন। তারা জাতীয়করণের তালিকা থেকে অনুপযুক্ত বিদ্যালয়টির নাম বাদ দিয়ে উপজেলার উপযুক্ত বিদ্যালয়কে বাছাই করে তা জাতীয়করণের জোর দাবি জানান। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী আদর্শ কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে জাতীয়করণের আবেদনের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, কলেজটি উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অথচ আরও কম দূরত্ব দেখিয়ে শিক্ষা অধিদফতরে জাতীয়করণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সরকারী ঘোষণার পর থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনটি কলেজের কর্তৃপক্ষ কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তালিকায় আসা নিয়ে কলেজে কলেজে চলছে টাকার খেলা। একটি চক্র জাতীয়করণ তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ওয়াদা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। শিক্ষকদের থেকে তোলা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকার সচেতন মহলের মতে, নারীশিক্ষার প্রতি সুদৃষ্টিসহ উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কলেজের মধ্যে যেকোন একটি কলেজ জাতীয়করণ হলে পিছিয়ে পড়া এ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ঘটবে। উপজেলাবাসী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় একটি কলেজকে সরকারীকরণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে উপজেলার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সরিষাবাড়ী ডিগ্রী কলেজ। সরকারীকরণের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জামালপুরের এক সংসদ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় ডিগ্রী পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান সরকারী করা হচ্ছে। অথচ কলেজটির নিজস্ব জমি নেই এবং যে জমিতে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটিও অর্পিত সম্পত্তি। অভিযোগে ওই এমপি আরও লিখেছেনÑ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম। কলেজের অধ্যক্ষসহ অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী বর্তমান সরকারবিরোধী কর্মকা-ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত। এজন্য এলাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘বড়লেখা ডিগ্রী কলেজ সরকারী না হয়ে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ‘নারীশিক্ষা একাডেমি’ সরকারীকরণ হয়েছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বড় প্রতিষ্ঠান গোপালপুর কলেজকে বাদ দিয়ে জাতীয়করণ করা হয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি কারাবাসী সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ওই হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারী পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত কলেজ ‘মেহেরুননেছা মহিলা কলেজ।’ টাঙ্গাইলের বাসাইলে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত জোবেদা রাবেয়া মহিলা কলেজও তালিকায় রাখা হয়েছে। এই কলেজও এমপিওভুক্ত হয়নি। অথচ পুরনো এমদাদ হামিদা ডিগ্রী কলেজকে বাদ দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে হরতালও পালিত হয়েছে। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত খুনীদের সহচর জনাব আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘জনাব আলী কলেজকে’ সরকারী করা হয়েছে। অথচ বানিয়াচংয়ের বড় প্রতিষ্ঠান ‘শচীন্দ্র কলেজকে’ সরকারী করার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুরের ইমরান আহমেদ মহিলা কলেজ সরকারী হয়েছে। এই কলেজটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর। অথচ অখ্যাত এ কলেজটি সরকারী হয়েছে। এছাড়াও সরকারী হওয়া যেসব কলেজ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আপত্তি জমা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি মহিলা (ডিগ্রী) কলেজ, একই জেলার সীতাকু-ু মহিলা কলেজ, কক্সাজারের উখিয়া উপজেলার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজ, খাগড়াছড়ি জেলার গুঁইমারা কলেজ, বান্দরবানের রুমা সাঙ্গু কলেজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই রুমা সাঙ্গু কলেজ গত ২৩ জুন পাঠদানের অনুমতিই পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানও সরকারী হচ্ছে। নীলফামারীর ডিমলায় উপজেলা পরিষদ মাঠে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। কলেজটিতে বর্তমানে দুই হাজার ছাত্র ও এক হাজার ৫শ’ ছাত্রীসহ সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ১৯৯৩ সালে থেকে কলেজটি ডিগ্রী ও ২০১১ সাল থেকে বাংলা, ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিএসসি কোর্স চালু রয়েছে। ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজটি বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা চরম হতাশা প্রকাশ করেন। জাতীয়করণের তালিকায় থাকা মাগুরার একটি কলেজ এমপিওভুক্তই হয়নি। পাঠদানই শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। ফাঁকা মাঠের মধ্যে কলেজটি স্থাপিত। চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে এখন পর্যন্ত ১০০ জন ভর্তি হয়েছে, আর দ্বাদশ শ্রেণীতে ১০৬ জন শিক্ষার্থী। চলতি বছর ৮৯ জন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। অথচ এই উপজেলার ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আমিনুর রহমান কলেজে ১ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু কলেজটি জাতীয়করণের তালিকায় নেই। এ নিয়ে এলাকায় বাড়ছে অসন্তোষ। সিরাজগঞ্জের তাড়াশেও এমপিওভুক্ত নয় এমন একটি কলেজকে জাতীয়করণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। অথচ ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত তাড়াশ ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় নেই। সেখানে শিক্ষার্থী প্রায় দুই হাজার। পাঁচ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। কলেজটির শিক্ষকরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এত পুরনো কলেজ, অবকাঠামোও পর্যাপ্ত, তারপরও এই কলেজকে বাদ দেয়া হলো। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা সদর বাদ দিয়ে উপজেলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের জয়ানন্দ ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেখানে আন্দোলন চলছে। অথচ এই কলেজের ১০ কিলোমিটার পূর্বে বীরগঞ্জ পৌর এলাকায় বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ এবং ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের নাম জাতীয়করণের তালিকায় আছে। আর ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে একই রাস্তার পাশে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ সরকারী কলেজ রয়েছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার এ কে সরকার ডিগ্রী কলেজের জাতীয়করণের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ৫০ লাখ টাকার তহবিল গঠন করেছেন ঘুষ দেয়ার জন্য। এসব অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫ লাখ করে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরাই। যদিও অধ্যক্ষ জনকণ্ঠকে বলেছেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত ডিগ্রী কলেজ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হলেও রহস্যজনকভাবে জাতীয়করণে বঞ্চিত হয়েছে। এতে জনমনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকারের শর্তানুযায়ী উপজেলার সৈকত ডিগ্রী কলেজ সকল শর্ত পূরণ করেছে। অথচ জাতীয়করণের শর্তকে উপেক্ষা করে একশ্রেণীর সুবিধাভোগী কর্মকর্তা অসৎ পথ অবলম্বন করে উপজেলায় পিছিয়ে পড়া একটি কলেজকে জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পাবনার সুজানগর উপজেলার ডাঃ জহুরুল কামাল ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় সম্প্রতি পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। এ সময় জাতীয়করণের নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ টাকা সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জাতীয়করণের নামে টাকা সংগ্রহের অভিযোগটি অসত্য, ভিত্তিহীন। এদিকে সোমবারও সরকারীকরণের তালিকায় নাম না থাকায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষ ভাংচুর ও আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। মানববন্ধন করে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকার বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারীকরণের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ৪৯ বছরের পুরনো এই কলেজকে বাদ দিয়ে মাত্র ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নন্দীগ্রাম মহিলা ডিগ্রী কলেজকে সরকারীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এই ব্যর্থতার জন্য অধ্যক্ষ দায়ী। জানা গেছে, সরকারীকরণের তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। সোমবার সকালে কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। সরকারী না হওয়ার কারণ জানতে তারা অধ্যক্ষের কক্ষে যায়। সেখানে অধ্যক্ষকে না পেয়ে তার কক্ষের দরজা-জানালা ও আসবাব ভাংচুর করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কিছু আসবাব মাঠে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ১ হাজার ৭০০। ফলও ভাল। সরকারীকরণের জন্য এলাকার সাংসদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির সুপারিশও ছিল। সরকারীকরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার তালিকায় উপজেলার শীর্ষে ছিল এই কলেজ। সবদিক থেকে যোগ্য হওয়ার পরও এই কলেজকে বাদ দিয়ে ২০০১ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া উপজেলার অন্য একটি কলেজকে সরকারীকরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যোগ্য হওয়ার পরও কলেজটি সরকারীকরণের তালিকায় স্থান না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার যে অভিযোগ এনেছেন, সেটা কিছুটা সঠিক। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, যোগ্যতা থাকার পরও এই কলেজ কেন সরকারীকরণ থেকে বঞ্চিত হলো, তা কলেজে এসে অধ্যক্ষকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে সরকারী না হওয়া পর্যন্ত আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকবে। ক্যাডারে অন্তর্ভূক্তি, শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে জটিলতা, বাড়ছে ক্ষোভ ॥ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি করে বেসরকারী কলেজে অযোগ্য লোককেও শিক্ষক করা হয়েছে। অপর দিকে সরকারী কলেজের শিক্ষকরা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পান। এখন হঠাৎ করে এত বিপুলসংখ্যক কলেজ জাতীয়করণ করায় ওই সব কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এতে লেখাপড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার বলেন, শিক্ষার সম্প্রসারণে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং এই চাপ বহন করার মতো প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা শিক্ষা প্রশাসনের নেই। এর ফলে কলেজ শিক্ষায় নানারকম ঝুট-ঝামেলা সৃষ্টি হবে, এর প্রভাব পড়বে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষকের ওপর। দৃষ্টান্ত হিসেবে ওই শিক্ষকনেতা বলেন, প্রায় ১০০ সরকারী কলেজে গত ৩০ বছরে এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ওই সব কলেজে লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন সেদিকে নজর দিতে পারছে না। তা ছাড়া সামগ্রিকভাবে কলেজে শিক্ষার মান ও পরিবেশ ভাল নয়। এসব দিকেও নজর দেয়ার কথা ভাবতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, আগে সাধারণত বেছে বেছে দেশের ভাল কলেজগুলো সরকারী করা হতো। কিন্তু এবার একযোগে বিপুলসংখ্যক কলেজ সরকারী করায় অনেক অযোগ্য কলেজও তালিকায় ঢুকে গেছে। এমনকি একই উপজেলায় নামীদামী কলেজ থাকার পরও অযোগ্য কলেজ সরকারী হওয়ার তালিকায় আছে। মাত্র দুজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে, এমন কলেজের নামও রয়েছে। ফলে মানহীন কলেজগুলো সরকারী হলে সেসব কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জানা গেছে, সম্প্রতি বেসরকারী কলেজ সরকারী করার শর্ত হিসেবে বদলির বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বেসরকারী থেকে সরকারী হওয়া কলেজের শিক্ষকরা অন্য কলেজে বদলি হতে পারবেন না। এ উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এর আগে কিছু দিন আগে সরকারী বা জাতীয়করণ হওয়া স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী বদলি বন্ধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা অবস্থায় সরকারী বা জাতীয়করণ হবে সেখানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ওই প্রতিষ্ঠানের বাইরে দললির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা টিসার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলছিলেন, এমন বহু কলেজ আছে যেখানে একেক জন শিক্ষক দু’টি বা তারও বেশি তৃতীয় শ্রেণী পেয়েও টাকা পয়সা দিয়ে তদ্বির করে শিক্ষক হয়েছেন। এখন তৃতীয় শ্রেণী না হলেও আগে হয়েছে এমন। তবে এখনও বহু শিক্ষক শিক্ষাগত যোগ্যতা ভাল না হলেও তদ্বিরের বলে বেসরকারী কলেজের শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু সরকারী হয়ে গেলেই সেখানকার শিক্ষকরা ক্যাডার সার্ভিসের সদস্য হয়ে যান। এরপর তারা দ্রুত শহরের এমনকি রাজধানীতে তাদের পছন্দের কলেজে চলে আসেন। ফলে তার সেই কলেজে শূন্যতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অত্যন্ত সময়োপযোগী। যা শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন এ উদ্যোগ দ্রুতই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের মফস্বল এলাকার শিক্ষায়। ক্ষুব্ধ, হতাশ শিক্ষাবিদরা ॥ কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণকে স্বাগত জানালেও এতে বেপরোয়া দুর্নীতি, নীতিমালা লংঘনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শিক্ষায় দুর্নীতি ও যোগ্যকে বাদ দিয়ে অযোগ্যকে মূল্যায়নের ফল হবে ভয়াবহ’ এমন মন্তব্য করে বলছিলেন, জাতীয়করণ অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলছিলেন, নীতিমালা মেনে যোগ্য প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি না পেলে তা দেশের জন্য হবে ক্ষতিকর। এলাকায় অসন্তোষ হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয়। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয়করণের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। একটা সরকারী কলেজ তার যদি ভাল শিক্ষক না থাকে, ভাল অবকাঠামো না থাকে, যদি শিক্ষার্থী না থাকে সেখান থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।
×