ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের ভেজাল বিরোধী অভিযান ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ অক্টোবর ২০১৬

জ্বালানি তেলের ভেজাল বিরোধী অভিযান ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ

রশিদ মামুন ॥ ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দেশের জ্বালানি তেলের ভেজাল বিরোধী অভিযান। চলতি বছরই দুই বার ভেজাল বিরোধী অভিযানের ঘোষণা দিয়ে একবারও মাঠে নামেনি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটি বলছে তাদের অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট যেমন নেই তেমনি ভ্রাম্যমাণ জ্বালানি তেল পরীক্ষার কোন ইউনিটও নেই। ফলে এ ধরনের ঘোষণা মন্ত্রণালয় দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। চলতি বছর ৬ এপ্রিল এবং ২৯ সেপ্টেম্বর দুই দফা জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি তেলে ভেজাল রোধের অভিযানে নামার ঘোষণা দেন। কিন্তু কোনবারই জ্বালানি তেলের ভেজাল প্রতিরোধে অভিযানে নামেনি বিপিসি। প্রথমবার ৬ এপ্রিল জ্বালানি বিভাগে পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল বিক্রির বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পরে এই ঘোষণা আসে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয়বার রাজধানীর পরিবাগে একটি সরকারী পেট্রোল পাম্পে আকস্মিক তেলের মান পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে জ্বালানি তেলে ভেজাল প্রতিরোধে বিপিসির মাঠে নামার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিপিসির ভ্রাম্যমাণ কোন তেল পরীক্ষার ইউনিট নেই। নেই কোন ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে জ্বালানি তেলে ভেজাল প্রতিরোধে তাদের এককভাবে মাঠে নামা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন এবং বিপিসির সহায়তায় তারা তেলের ভেজাল প্রতিরোধে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে। তবে সেই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে লোক পাওয়া গেলে পুলিশ আসে না পুলিশ আসলে বিএসটিআই এর লোক আসে না। বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আমরাও টেলিভিশনে দেখি জ্বালানি তেলে ভেজাল প্রতিরোধে মাঠে নামার ঘোষণা। কিন্তু জ্বালানি বিভাগ থেকে আমাদের কোন আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেয়া হয় না। আমরা আমাদের অগ্রানোগ্রামে একটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টির বিষয়টি নিয়েও উচ্চ পর্যায়ে বলে আসছি। তিনি জানান, দেশের ডিপোগুলো ছাড়া আর তেল পরীক্ষার কোন যন্ত্র তাদের নেই। যদি কোন সময় অভিযান চালাতে হয় সেক্ষেত্রে বিপিসিকে জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই এবং তেল কোম্পানির সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। একবার বিপিসি জেলা প্রশাসনের কমিটিতে নিজেদের লোক দিলেও ওই কমিটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। সারাদেশে বৈধ এক হাজার ২০০ পেট্রোল পাম্পের বিপরীতে আরও ১০৩টি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। এরাও বিপিসির কাছ থেকেই তেল সরবরাহ নিয়ে ব্যবসা করছে। সস্তা কাঁচামাল হিসেবে জ্বালানি তেলে ভেজাল দেয়ার জন্য কনডেনসেট পাওয়া যায়। দেশের গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কনডেনসেট যায় রিফাইনারির কাছে সেখান থেকে অপরিশোধিত অবস্থায় চলে যায় পেট্রোল পাম্পে। গত কয়েক বছরে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনডেনসেটের উৎপাদনও বেড়েছে। এতে জ্বালানি তেলের ভেজালের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। বিপিসি সূত্র জানায়, দেশে এখন বছরে গড়ে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে ১৪ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করা হয়। বাকিটা পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। কিন্তু সারাদেশে ভেজাল তেলের রমরমা বাণিজ্য চলার অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু তেল বিক্রেতা দেশের গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাসের সহজাত হিসেবে প্রাপ্ত কনডেনসেট কিনে তেলে ভেজাল দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার পরেও দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের চড়া দামের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিচ্ছে।
×