ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় ‘রাজার চিঠি’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২০ অক্টোবর ২০১৬

শিল্পকলায় ‘রাজার চিঠি’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সম্প্রতি জাগরণী থিয়েটারের ১৫তম প্রযোজনা ‘রাজার চিঠি’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। ‘রাজার চিঠি’ নাটকটি রচনা করেছেন মাহফুজা হিলালী। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- স্মরণ সাহা, মাহামুদা ইয়াসমিন সুমি, সুইটি চৌধুরী, শাহনাজ শারমিন খান শিমু, ইয়াসিন শামীম, বাহারুল ইসলাম বাহার, রফিকুল ইসলাম রনি, মাহামুদুল হাসান মুকুল, রোকুনুজ্জামান আপেল, সোয়েব হাসনাত মিতুল, সজীব ঘোষ, রিপা হালদার। নাটকের আলোক পরিকল্পনা ঠান্ডু রায়হান, নৃত্যনির্মিত অনিকেত পাল, পোশাক পরিকল্পনা এনাম তারা সাকী, আবহসঙ্গীত রামীজ রাজু ও সোয়েব হাসনাত মিতুল। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, ১৯৩৯ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাসিন্দা শ্রী হরিদাস বসাক। এক সময় যুবক হরিদাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এ নিয়ে তার পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু দেখা যায়, একদিন রবীন্দ্রনাথ সে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এ সময় হরিদাস বসাককে সবাই সমীহ করতে শুরু করেন। অন্যদিকে হরিদাস বসাকও সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজে নিজেকে সঁপে দেন। সময়ের প্রবাহে আসে ১৯৪৭ সাল। এ সময় অনেকেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু যে ঠিকানায় রবীন্দ্রনাথ তাকে চিঠি লিখেছেন, সে ঠিকানা হরিদাস বসাক বদল করতে চান না। নাটকে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের চিত্র এবং হরিদাস বসাকের মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকা দেখা যায়। এরপর আসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় হরিদাস বসাকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পুড়িয়ে ফেলা বাড়িঘর দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে হরিদাস বসাক সে দিন তার আত্মজনের খোঁজ নেন না, শুধু শিশুর মতো হাহাকার করেন চিঠিটির জন্য। এ অবস্থায় পাকিস্তানী আর্মি এসে দাঁড়ায় হরিদাস বসাকের সামনে। তার মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনে আর্মিরা তাকে বেয়োনেট দিয়ে মারতে থাকে। কাহিনী এখানেই শেষ হয়েছে, কিন্ত এর বিস্তৃতি বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবন অতিবাহিত করছি। ধর্মীয় উন্মাদনা, সামাজিক অসহিষ্ণুতা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব আর অর্থ লালসা সমাজটাকে অদৃশ্য ঘুণে ধরা পোকার মতো কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে। এমনি সময়ে দাঁড়িয়ে ‘রাজার চিঠি’ নাটকটি নির্দেশনার জন্য বেছে নিতে যথার্থ মনে হয়েছে। একমাত্র রবীন্দ্রচর্চাই পারে বর্তমান সমাজকে পথ দেখাতে। আজ বড় বেশী প্রয়োজন একটি রাজার চিঠি এবং তার আদর্শকে আঁকড়ে রাখা দেশপ্রেমিক হরিদাস বসাকের মতো মানুষের। রবীন্দ্র সাহিত্যের সমুদ্রে অবগাহন করে হরিদাস বসাক যে আদর্শের কথা বলতে চেয়েছেন, সেই চিত্রটি নাট্যক্রিয়ায় ফুটিয়ে তোলাই এ নাটকের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ হরিদাস তার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে যখন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখে দাঁড়িয়েছেন তখন আশ্রয় খুঁজেছেন রবীন্দ্র সাহিত্যের নাটকে, কবিতার ছন্দে এবং সমাধানও পেয়েছেন। সবচেয়ে মনযোগী হতে হয়েছে ওই অংশগুলো উপস্থাপনে। আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে মনে রাখতে হয়েছে, যে দর্শকের রবীন্দ্র সাহিত্যের সাথে সংযোগ কম, সেই দর্শককে সীমিত সময়ের মধ্যে ওই অংশের বিষয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেয়া, যেন তার বোধগম্য হয়। নাটকের ব্যাপ্তিকাল ১৯৭১ পর্যন্ত এবং ঘটনাটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহ্জাদপুর উপজেলার। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি স্থান-কালের সীমা ছাড়িয়ে সার্বজনীনতা দেয়ার। এ যেন সব সময়ের পথে চলার নাটক। ‘রাজার চিঠি’ নাটকটি সমৃদ্ধ হয়েছে নাট্যজন ঠান্ডু রায়হান, অনিকেত পাল, এনাম তারা সাকী এবং রমিজ রাজুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। ভাল প্রযোজনার জন্য তাদের সৃষ্টির ব্যথা আমি অনুভব করেছি। এ নাটকটিতে অভিনয়ের জন্য জাগরণী থিয়েটারের অভিনেতাদের কোন প্রস্তুতি ছিল না, তারপরও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে নাটকের উপযোগী করে নিজেদের তৈরি করার। তাদের প্রতি রইল ভালবাসা। ‘রাজার চিঠি’ প্রসঙ্গে নাট্যকার মাহফুজা হেলালী বলেন, ২০১১ সালে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শান্তি নিকেতনে গিয়েছিলাম রবীন্দ্র-সাহিত্যের নাট্যরূপ কর্মশালায়। সেখানে এই নাটকটি লিখি। নাট্যরূপের কর্মশালা হলেও এটি মূলত মৌলিক নাটক। বাস্তবের হরিদাস বসাকের সাথে এর যতটা মিল রয়েছে, ঠিক ততটাই অমিল। কারণ এটি একটি নাটকের পা-ুলিপি।
×