ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে স্বদেশি শিল্প করতে আগ্রহী অনেক দেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে স্বদেশি শিল্প করতে আগ্রহী অনেক দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খ্যাতির বিড়ম্বনা কম নয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে স্বদেশি শিল্প করতে আগ্রহী অসংখ্য দেশ। তারা চায় বাংলাদেশ তাদের দেশে গিয়ে কারখানা করুক। যা লাগে তাই দেয়া যাবে। কেনিয়া, তানজানিয়া, ইথিওপিয়া, হাইতি আঁকড়ে ধরতে চাইছে বাংলাদেশকে। এটা বুঝতে চাইছে না, বাংলাদেশের হাতে আলাদীনের প্রদীপ নেই। যা ঘষলে রাতারাতি মাটি ফুঁড়ে উঠবে পোশাক কারখানা। চমৎকার পোশাক বেরিয়ে আসবে ম্যাজিকের মতো। দীর্ঘ অধ্যবসায়ে পোশাক শিল্পে মাথা তুলেছে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে গরিমায় আকাশ ছুঁয়েছে। সেটা দেখেই কোন দেশ যদি ভাবে আমরাও পারব, তা হলে ভুল। পারবে না কেন, নিশ্চয়ই পারবে। সবার আগে দরকার পরিকাঠামো। দক্ষ শ্রমিক, পর্যাপ্ত কাঁচামাল, প্রয়োজনীয় মূলধন, জল, বিদ্যুত। যাদের সেটা নেই তাদের শিল্পের স্বপ্ন দেখা বৃথা। বাংলাদেশ কথাটা বোঝাতে গিয়েও পারছে না। হাইতির রাষ্ট্রপতি মিচেল মার্টেলি, প্রধানমন্ত্রী ইভান্স পল নাছোড়বান্দা। কোন যুক্তিতেই কান পাততে নারাজ। ১ জানুয়ারি তাদের স্বাধীনতা দিবস। নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে গৌরবময় দিনটির যথার্থ উদযাপন। তারা চান পোশাক শিল্পের উদ্বোধন হোক সে দিনই। মাথায় উঠুক নতুন পালক। দেশ খুঁজে পাক শিল্পোন্নয়নের নতুন দিশা। হাইতির প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে পোশাক শিল্পের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেছেন। কথা বলেছেন পোশাক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। অনেকটা আশ্বস্ত হয়েই দেশে ফিরেছেন। অতলান্টিক মহাসমুদ্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হিসপ্যানিওলার অংশ হাইতি। ছোট দেশ। জনসংখ্যা ঢাকার চেয়ে কম। এক কোটির একটু বেশি। অধিকাংশই নিগ্রো। বাকিরা এসেছে ফ্রান্স থেকে। আর আছে দাসদের বংশধর মুলাটোজরা। ফরাসি উপনিবেশ ছিল দীর্ঘদিন। ১৮০৪-এ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও, ফ্রান্স মুক্তি দেয় একুশ বছর পর ১৯২৫ সালে। হাইতিতে মত্ত হাতির মতো দাপিয়েছে স্বৈর শাসকরা। সামরিক শাসনেও জরাজীর্ণ হয়েছে। ২০১০ সালে ভূমিকম্পে মৃত্যু সাড়ে তিন লাখ। ২০১১ সালে সাধারণ নির্বাচনে মিচেল মার্টেলি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গণতান্ত্রিক সফর শুরু। অর্থনীতির শিকড়টা মজবুত করার চেষ্টা তখন থেকেই। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সব প্রয়াস ব্যর্থ। অবশেষে নজর বাংলাদেশে। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কর্মধারায় মুগ্ধ মার্টেলি। বাংলাদেশের হাত ধরে উঠে দাঁড়াতে চাইছেন তিনি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে হাইতিতে পাঠান হয়েছে তামাক, প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। যার দাম কম করে ১৫ লাখ ডলার। এ বার বাংলাদেশের হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে পোশাক শিল্পে বিনিয়োগে রাজি। ৯৯ বছরের লিজে জমি দিচ্ছে হাইতি। কাঁচামাল যাবে বাংলাদেশ থেকেই। সেখানে রফতানি বাণিজ্যের সুবিধা বেশি। যে কোন দেশে চটকধরে পণ্য পৌঁছনো যায়। আমেরিকা কোন শুল্ক নেয় না। বাংলাদেশের অন্য পোশাক ব্যবসায়ীরাও হাইতিতে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। যেখানে লাভ দু’পক্ষেরই সেখানে বিনিয়োগে ক্ষতি কী। -সূত্র: আনন্দবাজার
×