ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বৈঠক

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় চলবে ‘প্রকল্প’

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ অক্টোবর ২০১৬

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় চলবে ‘প্রকল্প’

রহিম শেখ ॥ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত পুরোদমে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জুন ব্যাংকটির ১০০টি শাখা উদ্বোধন করেন। তবে প্রকল্পের সমিতিগুলো থেকে ৪৯ শতাংশ তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন যোগানের কথা ছিল। এর মধ্যেই প্রকল্পটি বিলুপ্ত না করে আরও প্রায় ৫ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। ফলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে আইন পরিবর্তন করে কিভাবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় ২০২০ সাল পর্যন্ত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উঠায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। কারণ এ প্রকল্পের সব ব্যাংক হিসাব এখনও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় অফিস স্থাপনসহ যাবতীয় ফার্নিচার ও আসবাবপত্র কেনা হয়েছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের নামে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দিয়েই ব্যাংকটির কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাই এসব বিষয়ের মীমাংসা ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় চাইলেও আপাতত ব্যাংকিং কার্যক্রমে যেতে পারছে না। তাই প্রকল্পটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে চালিয়ে নেয়া হবে, না একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হবেÑ সে সিদ্ধান্ত নেয়া এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রকল্পটি চালু করেছিল স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠনের পর এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে চলে গেছে। জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কিভাবে পরিচালিত হবে এবং ব্যাংকের অধীনে প্রকল্পটি চালিয়ে নিলে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, কিংবা যৌথভাবে পরিচালিত হতে পারে কি-না, সেসব বিষয়ের ওপর একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরেকটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এ দুটি প্রতিবেদনই দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীকে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আশা করছি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেন, জুনে প্রকল্পের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে এর সম্পদ, দায়, কর্মসূচী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি আইনানুগ নয়। এ বিষয় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দুপুর আড়াইটাই একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রার ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার প্রতিনিরধিরা উপস্থিত থাকবেন। জানা গেছে, এখানে আইন পরিবর্তন করে কিভাবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় ২০২০ সাল পর্যন্ত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪০ হাজার ২১৪টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। সমিতিতে প্রায় ২২ লাখ সদস্য তথা পরিবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সদস্যদের নিজস্ব সঞ্চয় ৯৭০ কোটি ২২ লাখ এবং বিপরীতে সরকার প্রদত্ত বোনাস ও আবর্তক তহবিল ১ হাজার ৯৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সার্ভিস চার্জ, ব্যাংক সুদ ও সম্পদের অর্থ আদায়সহ প্রকল্পের আওতায় গঠিত সমিতির মোট তহবিলের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৫২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সমিতির সমুদয় তহবিল আইন অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে। জানা গেছে, আইন অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের যাত্রা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের বিলুপ্তির কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব আসায় ব্যাংকের কাজে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সমিতির তহবিল থেকে দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যে গঠিত ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন যোগানোর কথা থাকলেও এ কারণে তা না পাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিলে তার সম্ভাব্য জটিলতা দেখিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গত ২২ জুন ব্যাংকটির ১০০টি শাখা উদ্বোধন করেন। তবে প্রকল্পের সমিতিগুলো থেকে ৪৯ শতাংশ তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন যোগানের কথা ছিল। এর মধ্যেই প্রকল্পটি বিলুপ্ত না করে আরও প্রায় ৫ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য জটিলতার চিত্র তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদের কাছে সম্প্রতি চিঠি পাঠান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, জুনে প্রকল্পের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে এর সম্পদ, দায়, কর্মসূচী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি আইনানুগ নয়। তিনি বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ৪০ হাজার ২১৪টি সমিতিকে সমবায় সমিতি করার জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে একাধিকবার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত বছরের ১৯ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত প্রকল্পের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভায়ও সমিতিগুলোকে সমবায় সমিতি করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। কিন্তু একটি সমিতিও সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন করা হয়নি। ফলে সমিতির অডিট হয় না, এজিএম হয় না, নির্বাচন হয় না এবং সমিতির নিজস্ব কোন তহবিল গঠিত হয়নি। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে সমিতিগুলো আরও দুর্বল হবে এবং প্রকল্পের ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনেক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চেয়ারম্যান। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, সমিতির নিজস্ব তহবিল সৃষ্টি হয়নি বিধায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমিতির অংশ (৪৯ শতাংশ) ৯৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করা যায়নি। এতে এ প্রক্রিয়া আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে ১ লাখ সমিতির (পুরাতন ৪০ হাজার এবং প্রস্তাবিত ৬০ হাজার) জন্য ৫ লাখ সদস্যকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা সম্ভবপর নয় বলে মিহির কান্তি মজুমদারের দাবি। প্রকল্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য ১ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যার ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা ইতোমধ্যে সমিতিকে দেয়া হয়েছে।
×