ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিন্স হেনরী স্নাল

ভালবাসার মানুষ হয়ে উঠি

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২০ অক্টোবর ২০১৬

ভালবাসার মানুষ হয়ে উঠি

ভালবাসা হলো কারও ভাল চাওয়া, মন্দের পরিবর্তে উপকার, দুঃখের স্থলে আনন্দ দান, ক্লান্তির মধ্যে শীতল পরশে সতেজতা আনয়ন ও বিপদের সময় পাশে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করা। ভালবাসার ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘লাভ’ এসেছে প্রাচীন ইংরেজী শব্দ খঁভঁ থেকে যার অর্থ যথাক্রমে ‘প্রেমানুভূতি’, ‘আনন্দানুভূতি’, ‘যৌন আকর্ষণ’, ‘বন্ধুভাবাপন্নতা’ ইত্যাদি। ভালবাসা শব্দটি আপাতদৃষ্টিতে আকারে ক্ষুদ্র হলেও এর শক্তি ব্যাপক। যুগ যুগ ধরে কবি, সাহিত্যিক ও গল্পকথকগণ তাঁদের লেখনী ও বচনে ভালবাসার দুর্নিবার শক্তি ও পবিত্র প্রেমের কথা বলে গেছেন। ভালবাসার অমোঘ টানেই সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রেমকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সৃষ্টি করেছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেম নিদর্শন তাজমহল, কত গ্রীক বীর তাঁদের প্রেয়সীর জন্য হাতের মুঠোয় নিয়েছে প্রাণ, পাড়ি জমিয়েছে সাত সাগর তের নদী, ‘বেঁধেছে দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড়, বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছে এক শ’ আটটা নীল পদ্ম’, দেবদাস পার্বতীর বিরহ যাতনায় বিত্ত বৈভবের মাঝেও জীবনযাপন করেছিল ভিখিরির মতো, চন্ডিদাস ভালবাসার মানুষ রজকিনীকে একপলক দেখার উদ্দেশে কড়া রোদে ছিপ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত পুকুরঘাটে, আবার এই ভালবাসার কারণেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ট্রয়নগরী। ভালবাসা নিত্যনতুন, কখনও বদলায় না এর মাহাত্ম, তাৎপর্য, গুরুত্ব, রূপ, গন্ধ, রং-ঢং-আকার। শুধু বদলাতে পারে এর প্রস্তাবের ধরন; তাই তো বর্তমানে অনেকাংশে ভালবাসার পবিত্রতার স্থলে স্থান করে নিয়েছে এর বিকৃত রূপ। যার প্রতিফলন আমরা সমকালীন ঘটনসমূহে দেখতে পাচ্ছি। প্রেম এক পক্ষের বিষয় নয়, দ্বিপক্ষীয়। যে কেউ প্রেম প্রস্তাব করতে পারে বৈকি, আবার প্রেম প্রস্তাবে সাড়া দেয়া না দেয়ার অধিকারও সবার আছে। আর তাছাড়া ভালবাসা জোর করে হয় না, এর জন্য শুদ্ধ হৃদয়-মন প্রয়োজন। তাই প্রেম প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে হিংস্র ও উন্মত্ত হয়ে উঠব সেটা তো প্রকৃত প্রেম কখনই হতে পারে না। ভালবাসা মানুষকে শুদ্ধ করে, করে পবিত্র। ভালবাসা মানুষকে সহিষ্ণু হতে শেখায়। দৈহিক কামনা-বাসনা হতে প্রসূত ভালবাসার মধ্যে সম্মানবোধ থাকে না, বরং মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করে বস্তুকৌণিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকন করে। পবিত্র কোরআনে ভালবাসাকে একটি পবিত্র চুক্তি অঙ্গীকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র বাইবেলে ভালবাসার গুণাগুণ সম্বন্ধে এভাবে উল্লেখ আছে, ‘ভালবাসা নিত্য-সহিষ্ণু, ভালবাসা স্নেহ-কোমল। ভালবাসা উদ্ধতও হয় না, রুক্ষও হয় না।’ যে সত্যিকারে ভালবাসে সে প্রেম প্রস্তাবে সাড়া না পেয়েও সহিষ্ণু থাকবে, কখনই উন্মত্ত আচরণ করবে না বা তার ক্ষতি করার চিন্তাও করবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রেম প্রস্তাবের নামে কিছু অন্ধ, নরপশু, যেভাবে অশালীন আচরণ করেছে, কেড়ে নিয়েছে রিশা, নিতু, সীমার মতো কচি সম্ভাবনাময় তাজা প্রাণ, তাতে প্রমাণিত হয় পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে দেখার চোখ আমাদের নেই, তাদের এখনও মধ্যযুগের ন্যায় আমরা ভোগ্যবস্তুর মতো দেখি। বর্বর বখাটে তথাকথিত ছাত্রনেতা বদরুল প্রেম প্রস্তাবের নামে ও এতে সাড়া না পেয়ে উন্মত্ত হয়ে খাদিজাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে যেভাবে আঘাত করেছে সেটা ভালবাসার বিকৃত রূপ বৈ অন্য কিছু নয়। অন্যদিকে, ঘটনার সময় কিছু যুবক দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছে, কেউ বা ভিডিও করেছে। অথচ আমরা যদি একে অন্যকে ভালবাসি, অন্যের ভাল ‘বাসনা’ করি তাহলে মোবাইলে ছবি বা ভিডিও করার পরিবর্তে তৎক্ষণাত সামনে গিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ কেন করি না? কেন বদরুল ও ওবায়দুলদের মতো নরপশুদের, যারা ভালবাসার পবিত্রতাকে নষ্ট করেছে, সমস্ত নারী জাতিকে অপমান করেছে, তাকে রুখে দিতে পারি না? তাই আসুন নিজে আগে ভালবাসার মানুষ হয়ে উঠি, নিজেকে ভালবাসি, অন্যকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে শিখি, ভালবাসার প্রকৃত রূপ চিনতে শিখি তারপর অন্যকে ভালবাসতে শালিনভাবে প্রেম প্রস্তাব করি। ভালুকাপাড়া, ময়মনসিংহ থেকে
×