ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আশাফা সেলিম

নিয়ন্ত্রণ জরুরী শিশুকাল থেকে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২০ অক্টোবর ২০১৬

নিয়ন্ত্রণ জরুরী শিশুকাল থেকে

প্রেম-ভালোবাসা শাশ^ত সুন্দর চিরন্তন। এটি মানুষের জীবনেরই অংশ। হয়ত সমগ্র প্রাণিকূলেরই আছে এই স্বর্গীয় অনুভূতি। প্রাণীভেদে প্রেম-ভালবাসার ধরন ভিন্ন হতে পারে। আমরা টিভি চ্যানেলে পশু-পাখির প্রেম-ভালবাসা-জীবনাচার দেখি, আর ভাবি মানুষের সঙ্গে ওদের এসব আচার-আচরণের কত মিল! কিন্তু অমিলটা পাই ওদের বিবেকের সঙ্গে মানুষের বিবেকের। ‘বিবেক’ শব্দটির সঙ্গে পশুর হয়ত পরিচয়ই নেই; কিন্তু ওদের সমস্ত কাজকর্মেই তার প্রতিচ্ছবি লক্ষণীয়। এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে হত্যা করে খাবার জন্যে; এটা ওদের জগতের স্বাভাবিক নিয়ম। প্রকৃতিই ওদের জীবনচক্র এমন বানিয়েছে। এমন নির্মম নিয়মের মধ্যে থেকেও, তাদের শিকারের প্রাণীটি শিশু হলে, অনেক সময় তারা সেটা হত্যা করে না। কিন্তু কিছু মানুষের সেই পশুর সমান বিবেকবোধটুকুও থাকে না। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে। যেমন- বাবা-মাকে জবাই করে হত্যা, মোটরসাইকেল না পেয়ে মা-বাবাকে পোড়ানো, শিশুর পেটে বাতাস ঢোকানো এবং সবশেষ খাদিজার ওপর নৃশংস হামলা। অথচ, আমরা মানুষের নিকৃষ্টতম-জঘন্যতম নির্মমতা দেখলে তাকে পশুর সঙ্গে তুলনা করি। এতে পশুসমাজ নিশ্চয়ই লজ্জা পায় এই ভেবে যে, তারা তো তাদের স্বাভাবিক আচরণের বাইরে কোন নির্মমতা প্রদর্শন করে না! প্রেমে সফলতার বিপরীতে প্রত্যাখ্যাত হওয়াটাও স্বাভাবিক। মানুষ বিপরীতলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে; প্রেমের প্রস্তাবও দেবে, কিন্তু সবসময় তা গৃহীত না-ও হতে পারে। সেটা নিতান্তই একজনের ভাল লাগা-না লাগা বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। জোর-জবরদস্তির কিছু নেই। কিছুদিন প্রেম করার পর, সেই প্রেমিক অথবা প্রেমিকাকে তার কাছে তার আচার-আচরণ দেখে আগের মতো ভাল না-ও লাগতে পারে। প্রেমজুটির কোন একজন কিংবা উভয়েই চাইলে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আবার তারা চাইলে, ভাঙ্গা সম্পর্ক পুনঃস্থাপনও করতে পারে। এসবই তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার। কিন্তু জোর-জবরদস্তি, প্রতিহিংসায় গায়ে হাত দেয়া, অমানুষিক নির্যাতন গুরুতর অপরাধ। আর খুন করলে তো কথাই নেই; মৃত্যুদ-যোগ্য অপরাধ। আর অপরাধ করলে তার বিচার হতে হবে। আইনের আওতায় শাস্তি পেতে হবে। সেটি তখন ফৌজদারি অপরাধের আওতায় চলে আসে। মানুষ ফৌজদারি অপরাধ কেন করে? সেটি অপরাধ বিজ্ঞানের বিষয়। কিছুটা সামাজিক-মনোবিজ্ঞানেরও। কিন্তু সাধারণভাবেও যদি দেখি, তাহলেই এসব বর্বরতা-নির্মমতা-প্রতিহিংসার কিছু কারণ আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে অপরাধী হয়ে বেড়ে ওঠা। প্রবাদ আছে- ‘কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়’। অর্থাৎ, শিশুবেলা থেকেই মানুষের স্বভাব-চরিত্র-আচার-আচরণ-বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বোঝা যায়। সেই বৈশিষ্ট্য ভাল হোক আর মন্দই হোক, সেটা আরও পুষ্ট হয় পরিবারে বাবা-মাসহ অন্য সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এবং পরবর্তী সময়ে অন্যান্য সামাজিক পরিবেশের সহায়তায়। যে কোন অপরাধের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হলো কঠোর আইনের মাধ্যমে বিচার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বা কার্যকর সমাধান হলো শিশুকে মানবিক মূল্যবোধ, মমত্ববোধ এবং সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে বড় করা। শিশুদের বৈশিষ্ট্য-চরিত্র গঠনে আমরা আরও সজাগ হলে হয়ত আজকের শিশুটি ভবিষ্যতে নির্মম-উন্মত্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠবে না। পাকপাড়া, রংপুর থেকে
×