ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেঁচে থাকুক প্রেম;###;সাগর কোড়াইয়া

সমাজ ভাবন ॥ এবারের বিষয় ॥ উন্মত্ত প্রতিহিংসা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২০ অক্টোবর ২০১৬

সমাজ ভাবন ॥ এবারের বিষয় ॥ উন্মত্ত প্রতিহিংসা

প্রেম শাশ্বত। আদিতে প্রেম ছিল; এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রেম আছে বলেই প্রতিটি সৃষ্টি সৌন্দর্যে ভরপুর। সাহিত্যে রোমিও-জুলিয়েট, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখা, বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর, লাইলি-মজনু, কাশেম-সখিনা, চ-িদাস-রজকিনী ও রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মহিমা প্রেমের মাধুর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। তাদের কাছে প্রেম ছিল স্বর্গীয় তাই তাদের প্রেম সাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছে। প্রেমের সংজ্ঞা এখনও পর্যন্ত কেউ সঠিকভাবে দিতে পেরেছে কিনা জানা নেই। কারণ প্রেমব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। একজন যদি প্রেমকে হাতে হাত ধরে চলার প্রেরণাকেই বুঝে থাকে, আবার তার বিপরীতে আরেকজন প্রেমকে দেখতে পারে কামনার অগ্নিস্তম্ভ হিসেবে। প্রেমকে কেউ যদি সময় কাটানোর মাধ্যম ভাবে; অপরদিকে আরেকজন প্রেমকে জীবনশক্তি হিসেবে অবলম্বন করে নেয়। ভালবাসা অন্যায় নয়। নারী-পুরুষের বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেম-ভালবাসার অনুভূতি জাগ্রত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি সেই অনুভূতি না জাগে তাহলে তা অস্বাভাবিক। তাই বলে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা প্রেমের প্রস্তাবে অপরপক্ষ সাড়া না দিলে প্রতিহিংসার বহির্প্রকাশ ঘটাতে হবে, এটা কেমন ধরনের মানসিকতা? জোর করে প্রেম-ভালবাসা হয় এটা কোন সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করবে না। বর্তমানে নারীর সমঅধিকার নিয়ে বহুজন সোচ্চার। নারী অধিকার বাস্তবায়নে বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন আন্দোলন করছে। ভেবেছিলাম নারীদের ওপর অমানসিক অত্যাচার এবং প্রাণনাশের চেষ্টার দিন বুঝি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নারী-পুরুষের যে শাশ্বত প্রেম তার মাঝে কলঙ্কের কালিমা লেপে দিচ্ছে। ‘ভালবাসা ভালবাসাকে ভালবাসতে শেখায়’ এই বাক্যটি কিছু লোকদের কারণে যেন মিথ্যায় রূপ নিচ্ছে। বিকৃত স্বভাবের অনেকে নিজেদের সর্বকর্মা ভেবে অপরপক্ষের প্রেমের সাড়া না পেয়ে উন্মত্ততার প্রকাশ ঘটাচ্ছে। প্রেমের বলি হয়ে নারী মৃত্যুবরণ করছে নয়ত সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ছে। কয়েক বছর আগেও এসিড ছুড়ে মারার প্রচলন ছিল। বর্তমানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার রীতি শুরু হয়েছে। যে বা যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে লিপ্ত তাদের প্রেম যে খাঁটি নয় তা এক নিমিষেই বোঝা যায়। যদি তারা সত্যিকারভাবে নারীকে ভালবাসত তাহলে নিজের ভালবাসার মানুষটির জীবন নাশ করার কাজে লিপ্ত হতো না। বিকৃত এই মানুষগুলোর কারণে সমাজিক পরিবেশ হয়ে পড়ছে আতঙ্কময়। প্রতিটি মা-বাবাই সন্তানের নিরাপদ চলাফেরা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। সিলেটের খাদিজার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা মিডিয়াতে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে আরও কত খাদিজা যে একই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সে খবর হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। এই হিংস্র-উন্মত্ত লোকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়। প্রেমের যে পবিত্রতা তা নারী-পুরুষের মাঝে বাধাহীনভাবে বেঁচে থাকুক। সেখানে প্রতিহিংসার বিপরীতে জন্ম নিক ভালবাসার বদলে ভালবাসা। বনানী, ঢাকা থেকে
×