ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাক শিল্পীদের নিয়ে আর ছবি নয়: কর্ণ

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

পাক শিল্পীদের নিয়ে আর ছবি নয়: কর্ণ

অনলাইন ডেস্ক ॥ তিনি দেশকে ভালবাসেন। ভারতীয় সেনাকে সেলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের’ শিল্পীদের দিয়ে আর কাজ করাবেন না। আজ পরিচালক কর্ণ জোহরের ভিডিও বার্তার নির্যাস ওপরের লাইনগুলো। ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের’ নাম বলা না থাকলেও যেখানে ইঙ্গিতটা ধরতে অসুবিধে হয় না। কর্ণের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খানের অভিনয় করা নিয়ে নানাবিধ চাপ-হুমকি চলছে ছবি মুক্তির দিন দশেক আগেও। এই পরিস্থিতিতে আচমকা নীরবতা ভেঙে পরিচালকের এই ভিডিও বিবৃতিতে কার্যত মুচলেকার সুর দেখছেন অনেকে। যেখানে ছবিটির মুক্তিতে সব বাধা দূরে সরিয়ে রাখার আর্জিও জানিয়েছেন কর্ণ। কী বলেছেন তিনি? ভিডিও বার্তায় কর্ণের বক্তব্য, ‘‘গত দু’সপ্তাহ ধরে আমি কেন চুপ করে ছিলাম, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কিছু মানুষ মনে করছেন, আমি ভারত-বিরোধী। তাঁদের এই মনোভাবে অত্যন্ত আঘাত পেয়েছি। তাই কিছু বলতে পারিনি।’’ কর্ণ জানিয়েছেন, তাঁর কাছেও সব কিছুর আগে দেশ। তবে তিনি মনে করেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যখন ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর শ্যুটিং হয়েছে, তখন পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা ছিল। পড়শি দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চলছিল। সেই চেষ্টাকে তিনি সম্মান করেন। উরিতে পাক জঙ্গিদের হামলা ও তার পরে ভারতের পাল্টা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। কর্ণের বক্তব্য, এখনকার যে আবেগ, তাকেও তিনি সম্মান করেন। এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর অনুভূতিও পৃথক কিছু নয়। এর পরেই তাঁর মন্তব্য— ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে অবশ্যই আমি প্রতিবেশী দেশের শিল্পীদের নিয়ে কাজ করব না।’’ ‘অ্যায় দিল...’ নিয়ে মুশকিলের শুরু রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর এক হুমকি দিয়ে। উরি হামলার পরেই পাক শিল্পীদের ভারত ছাড়ার ফতোয়া দেয় তারা। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ফাওয়াদ সেই সময়ে দেশে ফিরেও যান। তার পরেও এমএনএস বলে, ফাওয়াদের অভিনীত দৃশ্য মুছে না দিলে মহারাষ্ট্রে দেখানো যাবে না ছবিটি। ‘সিনেমা ওনার্স এক্সিবিটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’ (সিওইএআই) সিদ্ধান্ত নেয়, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক, গুজরাতে এই ছবি দেখানো হবে না। সলমন খান, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, অনুরাগ কাশ্যপ, আলিয়া ভট্টরা এই মনোভাবের বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি অন্য মতও দেখা গিয়েছে বলিউডে। গায়ক অভিজিতের মতো কেউ কেউ পাক-শিল্পী বর্জনের দাবিতে সুর চরমে তুলেছেন। কর্ণের টুইটার অ্যাকাউন্টে এখনও জমে চলেছে বিরূপ মন্তব্যের পাহাড়, যেখানে শাহরুখ খানকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। শাহরুখের পরবর্তী ছবি ‘রইস’-এ আছেন পাক অভিনেত্রী মাহিরা খান। ক্ষোভের আঁচ পড়েছে তাতেও। প্রশ্নটা তাই উঠছে। সীমান্তপারের দ্বন্দ্বে পড়শি দেশের অভিনেতার উপরে বিষোদ্গার— এমন নজির ভারতেও কেন তৈরি হবে? কেন আসন্ন ছবির নির্বিঘ্ন মুক্তির জন্য পাক শিল্পীদের নিয়ে আর কাজ না করার ‘প্রতিশ্রুতি’ দিতে হবে পরিচালককে? কেউ কেউ বলেই ফেলছেন, ‘‘এ দেশও কি তবে ফতোয়া-জর্জরিত আরও একটা পাকিস্তান হতে চলল?’’ কখনও পাক অভিনেতা রয়েছেন বলে ছবি দেখানো বন্ধের হুমকি, কখনও পাকিস্তানের পুরনো ছবি (‘জাগো হুয়া সবেরা’) চলচ্চিত্র উৎসব থেকে তুলে নেওয়া, এমন বিভিন্ন পদক্ষেপে সেই অসহিষ্ণুতা-বিতর্কই ফিরে এসেছে আবার। ব্রিটিশ-পাক লেখক মহম্মদ হানিফ সম্প্রতি এক মার্কিন দৈনিকে লিখেছেন, ‘ভারতের বৈচিত্র্য দেখে পাকিস্তানের শান্তিকামী মানুষও ঈর্ষান্বিত হতেন। কিন্তু এখন তাঁরা দেখছেন, সীমান্তের ও-পারের লোকজনও তাঁদের দেশের অনেকের মতো অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন।’ মুম্বইয়ে এমএনএসের হুমকির মুখে নির্মাতাদেরও একটি অংশ আজ পুলিশের দোরগোড়ায় হত্যে দিয়েছেন। কর্ণের ধর্মা প্রোডাকশনস-এর তরফে একটি দল, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসার্স গিল্ডের সভাপতি মুকেশ ভট্ট এবং ছবির ডিস্ট্রিবিউটর ফক্স স্টার স্টুডিওজ-এর প্রতিনিধি বিজয় সিংহ দেখা করেন পুলিশ কমিশনার দত্তাত্রেয় পার্সালগিকর এবং যুগ্ম কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) দেবেন ভারতীর সঙ্গে। দীপাবলির আগে এই ছবির মুক্তিতে কোনও রকম বিঘ্ন ঘটবে না বলে পুলিশের তরফে আশ্বাসও পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সেই আশ্বাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এমএনএসের নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন, রাজ্যের সর্বত্র এই ছবি দেখানোর বিরোধিতা করবেন তাঁরা। অময় খোপকর নামে এক নেতার বক্তব্য, ‘‘ছবি দেখালে মাল্টিপ্লেক্সের দামি কাচও ভাঙেতে পারি আমরা।’’ আর এক নেত্রী শালিনী ঠাকরে বলছেন, ‘‘প্রযোজকরা পুলিশি নিরাপত্তা পেতেই পারেন। কিন্তু ছবির পর্দায় পাক অভিনেতাকে দেখলে দর্শকদের কী হবে, ওঁরা ভাবতেও পারছেন না।’’ ঠাণের বিভিন্ন জায়গায় আজ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েকশো বিজেপি সমর্থক। অনুরাগ কাশ্যপের ছবিতে চটি ছোড়া হয় কল্যাণে। তিসগাঁও নাকায় পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দেন মহিলারা। পরিচালকের বিবৃতি সত্ত্বেও ‘মুশকিল’ তাই রয়েই যাচ্ছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×