ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলের নতুন পথে যাত্রা!

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

ব্রাজিলের নতুন পথে যাত্রা!

গত আগস্ট মাসের শেষ দিনটা ব্রাজিলীয়কে ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। ওইদিন প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফকে সিনেটের এক ইমপিচমেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে নয়, বরং ঐ দিন থেকে দেশটা তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়াকলাপের মূল কারণগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করতে শুরু করেছে বলে। অন্তত পক্ষে এই প্রত্যাশাটি ন্যস্ত হয়েছে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেলের টেমেরের ওপর যিনি গত মে মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এবং রুসেফের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতাচ্যুতির পর ওইদিন থেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। টেমের কোন সাধু সন্ন্যাসী নন। তার দল ব্রাজিলিয়ান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট রুসেফের ওয়ার্কার্স পার্টির (পিটি মতো একইভাবে পেট্রোবাস কেলেঙ্কারিতে কলঙ্কিত। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি থেকে শত শত কোটি ডলার শাসক দলগুলো ও রাজনীতিকদের পকেটে পাচারের স্কিমকে কেন্দ্র করেই ব্রাজিলের রাজনীতি ভয়ঙ্কর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল যার জন্য রুসেফের ইমপিচমেন্টের মধ্য দিয়ে বিদায় ঘটে। সুতরাং টেমের নিজেও ধোয়া তুলসী পাতা নন। কিন্তু তার পরও তাকে দুদিক দিয়ে রুসেফের চেয়ে উন্নত মনে করার কারণ আছে। ব্রাজিলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্ষমতাচ্যুতির অনেক আগেই রুসেফকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো অক্ষম ও নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছিল। সেখানে টেমের তার তুলনায় ঢের বেশি দক্ষ রাজনীতিক যার কংগ্রেসে সমর্থনের অনেক সুদৃঢ় ভিত্তি আছে। তাছাড়া তিনি ব্রাজিলের সমস্যাগুলোকেও রুসেফের চেয়ে ভালভাবে জানেন ও বোঝেন। টেমের ক্ষমতায় আছেন আর মাত্র ২৮ মাস। এই সময়ের মধ্যে তাকে এ অসংখ্য ও সুগভীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় শুধু কেয়ারটেকার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি কতটুকু কি করতে পারবেন বলা মুশকিল। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ৩.৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। বছর শেষে তা ২০১৫ সালের তুলনায় সম্ভবত ৭ শতাংশেরও বেশি সঙ্কুুচিত হবে এবং এটা হলো কয়েক দশকের মধ্যে ব্রাজিলের সবচেয়ে মন্দা অবস্থা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে টেমের প্রবৃদ্ধি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা এবং ভবিষ্যতে সমৃদ্ধির ভিত্তি রচনা করতে পারেন কিনা তার দ্বারাই বিচার করা হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সফলতা। ব্রাজিলের মূল অর্থনৈতিক সমস্যা হলো রাষ্ট্র অকাতরে অথচ অবিবেচনাপ্রসূতভাবে অর্থ ব্যয় করে এবং কঠোর হাতে করারোপ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এতে সুদের হার বেশি থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকে কম। ১৯৮৫ সালে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর এক সরকার অর্থনীতির বিপর্যয়কর গতিপথ নির্ধারণ করে গেছে। রুসেফের সময় সেই গতিপথ ছিল আরও বেশি লাগামহীন। টেমেরের সবচেয়ে জরুরী দায়িত্বটা হচ্ছে সেই গতিপথ সংশোধন করা। আরেকটা বড় দায়িত্ব হলো ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো। তার কথাবার্তা আর্থিক সংস্কারের মতো। তার অগ্রাধিকারগুলো হচ্ছে সরকারী ব্যয় কমিয়ে আনা এবং অবসরের বয়স বাড়ানো। পেনশনের টাকা দিতে দিতে সরকার পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তাই তার লক্ষ্য হলো পেনশন বিলের স্বীকৃতি হ্রাস করা। কিন্তু তিনি মুখে যা বলেছেন বাস্তবে তেমন দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। স্বল্পকাল অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি সরকারী খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বড় আকারে বাড়িয়েছেন এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়া প্রদেশগুলোকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছেন। গত মে মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে আস্থা দেখা দিতে শুরু করেছিল তা ধরে রাখতে হলে তাকে পথ পরিবর্তন করতে হবে। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আছে যা অতীতের প্রেসিডেন্টরা দেশবাসীর সামনে নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঠিক রাখতে গিয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন। নয়া প্রেসিডেন্ট টেমের ও অর্থমন্ত্রী হেনরিক মেইরেলেসসহ তাদের অর্থনৈতিক টিমকে টেকনোক্র্যাটদের মতো দেশ চালাতে হবে এটাই ব্রাজিলের এখনকার সময়ের দাবি। আগামী ২৮ মাস দেশ পরিচালনার পর প্রেসিডেন্ট টেমের ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তেমন অভিপ্রায় থাকলে তাকে নিজ ক্যারিয়ারে বিশুদ্ধ রাখতে হবে। আর তার জন্য পেট্রোবাস কেলেঙ্কারি তদন্তের ক্ষেত্রে তিনি হস্তক্ষেপ করছেন এমন কোন সংশয় সন্দেহ যাতে জনমনে না জাগে সে ব্যাপারে তাকে সতর্ক থাকতে হবে। টেমেরের রাজনৈতিক মূলধন খুব বেশি একটা নেই। এই ঘাটতিটুকুর জন্য তার রাজনৈতিক অর্জন সীমিত হতে পারে। কর ব্যবস্থা ও পুরনো শ্রম আইন ঢেলে সাজাতে গেলে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ টেমের তো আর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেননি। তবে রাজনৈতিক অর্জন সীমিত হতে পারে। কর ব্যবস্থা ও পুরনো শ্রম আইন ঢেলে সাজাতে গেলে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ টেমের তো আর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেননি। তবে রাজনৈতিক শ্রেণীর প্রতি ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের যে ক্রোধও অসন্তোষ জমে উঠেছে তাতে তার সামনে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের একটা সুযোগ এসেছে। আজকের কংগ্রেস সদস্যরা কয়েক ডজন রাজনৈতিক দলের অন্তর্গত তারা গোটা দেশে ভোটারদের রাজনৈতিক দলের অন্তর্গত। তারা গোটা দেশে ভোটারদের ভোট বাগানোর জন্য প্রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে থাকে। এতে করে নির্বাচন হয় ব্যয়বহুল, দলগুলো হয় দুর্বল এবং ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্কহীন রাজনীতিকরা হয়ে থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত। এখন টেমের এই অবস্থার কোন পরিবর্তন আনতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×