ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

আফগান উদ্বাস্তুদের বের করে দিচ্ছে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

আফগান উদ্বাস্তুদের বের করে দিচ্ছে পাকিস্তান

বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম হলো পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীরা। সেই শরণার্থীদের এখন বের করে দিচ্ছে পাকিস্তান। পেশোয়ারের উপকণ্ঠে জাতিসংঘ পরিচালিত স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অসংখ্য ট্রাকের ভিড়। এসব ট্রাকে মালপত্র নিয়ে আফগান শরণার্থীরা চলেছে স্বদেশের পথে। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার পর লাখ লাখ আফগান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন পাকিস্তান তাদের হাত থেকে রেহাই পেতে চায়। আফগান উদ্বাস্তুদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের চোখের মণি স্ক্যান করা হচ্ছে এবং নিবন্ধন কার্ডগুলো কেটে দেয়া হচ্ছে। এই নিবন্ধন কার্ডগুলো এক সময় উদ্বাস্তুদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতো। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর সেগুলোর আর কোন বৈধতা থাকবে না। ফলে দেড় কোটি নিবন্ধিত শরণার্থীর মধ্যে কেউ পাকিস্তানে রয়ে গেলে আইনগত জটিলতায় পড়বে। পাকিস্তানে এখনও প্রায় ১০ লাখ আফগান রয়ে গেছে যারা নিবন্ধিত নয়। পাকিস্তান সরকার বলেছে যে আগামী ১৫ নবেম্বর থেকে তাদের এদেশে থাকতে গেলে ভিসা লাগবে যা এদের কারোরই নেই। এ জাতীয় ডেড লাইন আগেও একাধিকবার দেয়া হয়েছে। পরে তা উপেক্ষিতও হয় অথবা তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অনেক আগেই নিয়ম করা হয়েছিল যে উদ্বাস্তুরা নির্ধারিত শিবিরের বাইরে বসবাস করত। ব্যবসা বাণিজ্য করতে, সম্পত্তির মালিক হতে পারবে। সেগুলো এতদিন উপেক্ষিত হলেও এখন কড়াকড়িভাবে বলবত করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে শরণার্থীদের এ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোকে তাদের সিমকার্ড নিষ্ক্রিয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আফগান ভাড়াটেদের বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিতে বাড়ির মালিকদের বলে দেয়া হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে দোকানে ও বাড়িতে হানা দিয়ে মোটা অঙ্কের দান মারার সুযোগ পেয়ে গেছে পুলিশ। উদ্বাস্তুদের অনেকে শীত নামারত আগেই দেশে ফিরে যেতে মনস্থ করেছে। নিবন্ধন কার্ডধারীদের যারা পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাচ্ছে গত তিন মাসে তাদের সংখ্যা জুনে মাসের ১২৫০ থেকে আগস্টে ৬৭ হাজারে দাঁড়ায়। আগামীতে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ শরণার্থী হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক দেশান্তরী সংস্থার (আইওএম) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এ বছরের শেষ নাগাদ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী পাকিস্তান থেকে স্বদেশ ফিরে যাবে। স্বদেশ প্রত্যাগত আফগান শরণার্থীর সংখ্যা সহসা বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ হলো প্রত্যাগমনকারী প্রত্যেক আফগানকে জাতিসংঘ শরণার্থী হাই কমিশনারের তরফ থেকে মঞ্জুরির পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৪শ’ ডলার দেয়া হচ্ছে। তবে এতে করে হাই কমিশনারের বাজেটের ওপরও বাড়তি চাপ এসে পড়েছে। এ বছরটা চালিয়ে দেয়ার পণ্য হাই কমিশনার ও আইওএম যৌথভাবে জাতিসংঘের কাছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার চেয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে দেশটা আফগান উদ্বাস্তুদের প্রতি কয়েক দশকের আতিথেয়তার সুযোগ নিয়ে তালেবানদের মতো জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সাহায্য সমর্থন দিয়ে আফগানদের ক্ষতি করছে। সাধারণ পাকিস্তানীরাও অনেকে মনে করে যে এই উদ্বাস্তুরা অপরাধ, বেকারত্ব ও জঙ্গী কর্মকা-ের উৎস। ২০১৪ সালে পেশোয়ারে এক স্কুলে হামলা চালিয়ে জঙ্গীরা ১৩০ জনেরও বেশি শিশুকে হত্যা করার পর সরকার সকল উদ্বাস্তুকে স্বদেশ ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়, যদিও এ হামলায় কোন আফগানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি। এতে দু’দেশের সম্পর্কেরও অবনতি ঘটেছে। কাবুলের অভিযোগ তালেবানদের পুনরুত্থানের জন্য পাকিস্তানীই দায়ী। আফগানিস্তানে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত যাওয়ার এই সময়টা অনুকূল নয়। ইউএনএইচসিআর বাড়তি টাকাকড়ি দিলেও স্বদেশের নতুন পরিবেশের সঙ্গে তাদের ধাতস্থ হয়ে ওঠা চাট্টিখানি কথা নয়। স্বদেশ আফগানিস্তানে প্রত্যাগত আফগানদের ঢল নামায় শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া ও খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে অবশ্য স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষের কারণ ঘটেছে। তবে সরকার উদ্বাস্তু প্রত্যাবর্তনকে উৎসাহিত করছে এবং ‘আমার জমির ঘাস সবুজ’ এই সেøাগানের দ্বারা জনগণের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টির অভিযান চালাচ্ছে। সরকার প্রত্যাগত আফগানদের জমি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এদিকে আফগান সরকার তালেবানদের হাত থেকে বাঁচতে দেশের অভ্যন্তরে যে সোয়া দুই লাখ আফগান নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল তাদের পুনর্বাসন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর তীব্র শীতের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সাহায্য সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে যে সামনে একটা মানবিক সঙ্কট ঘটতে যাচ্ছে। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×