ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনসহ বাকি প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে

সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে ॥ শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা তৃণমূলে সম্মেলন করে এসেছি। সামনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। আমরা সম্মেলন সফলভাবে করব এবং এর মাধ্যমে দলে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা দলকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের সবশেষ অগ্রগতি জানতে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে ১১টি উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। উপকমিটির যৌথসভায় সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আজ বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের চলতি মেয়াদের শেষ বৈঠকে বসে সম্মেলনের বাজেট অনুমোদনসহ বাকি প্রস্তুতির কাজ শেষ করা হবে। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্মেলন সফল করতে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটির প্রধানরা নিজেদের প্রস্তুতির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, এইচটি ইমাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডাঃ দীপু মনি, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সূত্র জানায়, যৌথসভায় দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটির পরিধি বাড়ানো হবে। সিদ্ধান্ত মতে, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরিধি ৭৩ থেকে বেড়ে ৮১ জন হবে। সেই অনুযায়ী জেলা কমিটির পরিধি বেড়ে ৭৫, উপজেলা কমিটি ৭১, ইউনিয়ন কমিটি ৬৯ এবং ওয়ার্ড কমিটি ৫৫ জন হবে। বৈঠকে দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথির ব্যাপারেও কথা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, সম্মেলনে অংশ নেয়া সব বিদেশী অতিথির বক্তব্য শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশী অতিথিদের সাক্ষাতের ব্যবস্থাও থাকবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমাদের সংগঠন পরিচালনা করি। তৃণমূল থেকে সংগঠন করে আমরা এসেছি। তাই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা সংগঠনকে আরও বেগবান ও শক্তিশালী করতে চাই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল। এ দলের মাধ্যমে এদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন; সবই হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটে। আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের সংগঠন এবং জনগণের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে এ সংঠনের জন্ম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) এদেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। এদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ম্যধম আয়ে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র্রে পরিণত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় এদেশের মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না, চিকিৎসার টাকা ছিল না, শিক্ষা পেত না, একটা অন্ধকার সমাজে বসবাস করত; সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করেছে বঙ্গবন্ধু। এখনও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগ না থাকলে যে হয় না সেটা আমরা ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেখেছি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যে উন্নয়ন করেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেগুলো শেষ করে দিল। দেশে আবারও খাদ্য ঘাটতি দেখা দিল। আমাদের প্রবৃদ্ধি কমে গেল, মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেল। তিনি বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বন্ধ করে দিয়ে বিএনপি ছাগল পালন শুরু করল। ছাগল দিয়ে নাকি তারা দারিদ্র্য মোচন করবে। আমরা বলেছিলম যে ছাগল দিয়ে এদেশে দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চাই। সে সুপরিকল্পনা কেবল আওয়ামী লীগের আছে। আওয়ামী লীগ এসব ছাগল-পাগলের কথা বলে না। তিনি বলেন, সবই লাগবে। ছাগল, গরু পালন হবে ঠিক আছে, কিন্তু যারা শুধু ছাগল পালনের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে চায় তারা ছাগল ছাড়া কিছুই না। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই অবস্থায় আসতে আপনাদের (নেতাকর্মীদের) ওপর ঝড়ঝাপ্টা কম যায়নি। আমাদের দুর্নীতিবাজ বলার চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। নানা রকম অপবাদ দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ছিল বলে কেউ দমাতে পারেনি। আমরা আজ দেশের উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রাখতে পেরেছি বলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা। আশা করি, আমরা এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারব। সম্মেলনের প্রস্তুতি কাজ প্রায় সম্পন্ন ॥ সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে দিনরাত কাজ করছেন। সম্মেলনকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কদ্বীপে করা হয়েছে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা। এছাড়া রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের দুই পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ঝুলানো হয়েছে। এবারের সম্মেলনে মূল সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে-‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।’ আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে বিশাল আকারের নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম জানান, সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সম্মেলনে আগত অতিথিদের দাওয়াত দেয়া শেষ হয়েছে। ১৪টি দেশের অতিথি সম্মেলনে যোগ দেবেন বলেও জানান তিনি। তবে কৌশলগত কারণে কোন্ দেশের কোন্ কোন্ নেতা সম্মেলনে আসছেন তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি। সাজসজ্জা উপকমিটির নেতারা জানান, সম্মেলনে পুরো ঢাকা শহর এবং দেশের সব জেলা ও উপজেলা শহর আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে সাজছে ঢাকা এবং সাজবে পুরো দেশ। ঢাকা শহরের আলোকসজ্জার দায়িত্ব পেয়েছেন ‘সেটাফ মাস্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্নস্থানে আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। সম্মেলন উপলক্ষে ১৯ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত মূল আলোকসজ্জা করা হবে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত সব উপকমিটি দলের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন সফল করতে ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি সভা করে যাচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা রয়েছে যে, সম্মেলন যাতে উৎসবমুখর হয় সে জন্য সারাদেশে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। তিনি জানান, সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে ৫টি গেট রাখা হয়েছে। তারমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ ভিআইপিরা প্রবেশ করবেন। বাকি চারটি গেট দিয়ে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা প্রবেশ করবেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা চেয়ার বসানো হবে। এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের ওপর তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব তোরণে বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসের বিভিন্ন আলোকচিত্র সাঁটানো হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গীবাদের পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য সন্নিবেশিত থাকবে লিফলেট, ব্যানার ও পোস্টারে। খাদ্য উপকমিটির আহবায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম জানান, সম্মেলনে বিদেশী অতিথি, রাজনৈতিক কর্মী ও অন্যান্য অতিথিসহ ৫০ হাজার লোকের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের দুটি বুথ থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদাভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। বিদেশী প্রতিনিধি ও অন্যান্য অতিথিসহ সম্মেলনে মোট ১৫টি বুথ থাকবে। প্রতিটি বুথে ২০ ফোর্স, ১০০ স্বেচ্ছাসেবক ও দুজন করে কেন্দ্রীয় নেতা থাকবেন। সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের হাতে দেয়া হবে বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসের ভিডিও সিডি। সেখানে জঙ্গীবাদের পক্ষে দেয়া তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গৌরব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এসব সাজসজ্জায়।
×