ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী

১০ টাকার চাল বিতরণে অনিয়মে যেই জড়িত ব্যবস্থা নেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

১০ টাকার চাল বিতরণে অনিয়মে যেই জড়িত ব্যবস্থা নেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল করেছে সরকার। এতে দায়ের করা ১১টি মামলায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই কর্মসূচীকে কোন অবস্থায় বিতর্কিত হতে দেয়া হবে না। অনিয়মের সঙ্গে চেয়ারম্যান-মেম্বার বা কার্ডধারীরা যারা জড়িত, সরকারী-বিরোধী দল যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হোক, অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সচিবালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই কর্মসূচী চালুর পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, করছি, আরও করব। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজ ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবই সে যে দলেরই হোক না কেন। অনিয়মে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কোন অবস্থায় এই কর্মসূচীকে বিতর্কিত হতে দেয়া হবে না। হতদরিদ্র হতদরিদ্রই, তাকে সাহায্য করার জন্যই এই কর্মসূচী। অনিয়মের সচিত্র সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মন্ত্রী। খাদ্যবান্ধব এই কর্মসূচীতে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য ১১টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এতে আসামির সংখ্যা ২২। এর মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অন্যরা পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার ৬ জনের মধ্যে বীরগঞ্জে একজন, তিতাসে ২, সিলেটে একজন, নীলফামারীর ডিমলায় একজন ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একজন রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নবেম্বর- এই পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারী প্রধান পরিবারকেই প্রাধান্য দেয়া হবে এ কর্মসূচীতে। ১০ টাকা কেজি দরের এই চাল কালোবাজারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এই চাল বিতরণে কেউ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গত ৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী। এই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর ভোক্তা তালিকা প্রণয়ন, ডিলার নিয়োগ ও চাল বিতরণে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাইয়ে গত ৯ অক্টোবর আট বিভাগের জন্য আটটি তদন্ত দল গঠন করে করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজন, ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২৪ জন, বরিশালের গৌরনদীতে দুইজন, কুমিল্লার তিতাসে একজন, পাবনার চাটমোহরে একজন, দিনাজপুরের বিরলে ও খানসামায় একজন করে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও মুকসুদপুরে তিনজন, শরীয়তপুর সদরে একজন, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দুইজন, পটুয়াখালীর বাউফলে একজন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একজন এবং জামালপুরের সদর উপজেলায় একজন ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জে একজন, কুমিল্লার তিতাসে দুইজন, সিলেটে একজন, নীলফামারীর ডিমলায় একজন ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, কর্মসূচীতে অনিয়মের জন্য নলিতাবাড়ী ও নান্দাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং কালোবাজারিতে সহায়তার অভিযোগে সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওজনে কম দেয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নওগাঁর বাদলগাছীর একজন ডিলারকে ৫০ হাজার, রাণীনগর উপজেলায় একজনকে পাঁচ হাজার, নওগাঁও সদর উপজেলার এক ডিলারের দুইজন কর্মচারীকে ১০ হাজার এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একজন ডিলারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে বলেও জানান কামরুল। কুমিল্লার চান্দিনায় দুই ডিলারকে ২৫ হাজার টাকা, যশোরের মনিরামপুরের ডিলার শহিদুল ইসলাম শাহিনকে ১০ হাজার টাকা, শরীয়তপুরের জাজিরার ডিলার মোঃ মোবারক চকদারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বগুড়ার শাহজাহানপুরে একজন ডিলার ও দুইজন ব্যবসায়ীকে সাজা দেয়া হয়েছে। হতদরিদ্র না হয়েও বিভিন্ন স্থানে যারা কার্ড পেয়েছে তাদের কার্ড জমা দেয়ার হিড়িক পড়ে গেছে বলে জানান মন্ত্রী। পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, এ কর্মসূচী চালু হওয়ার পরই বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে। আমরা এ কর্মসূচীটাকে কোন রকম বিতর্কিত করতে চাই না। যারা এ অনিয়ম করছেন, যারা এ কর্মসূচীটাকে বিতর্কিত করছেন তাদের কাছে যাতে একটা ম্যাসেজ যায় সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, (অনিয়মের মাধ্যমে) যারা তালিকা প্রণয়ন করেছেন তারা যে দলেরই হোক, সরকারী দলের হোক, বিএনপির হোক আর নিরপেক্ষ হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, হতদরিদ্র নয় এমন যে সব ব্যক্তিরা ভুয়া কার্ড পেয়েছে বিভিন্ন স্থানে দলে দলে তাদের কার্ড জমা দেয়ার একটা হিড়িক পড়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ের গঠন করা আটটি টিম সারাদেশে অভিযান চালাচ্ছে। কোথাও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আঞ্চলিক খাদ্য পরিচালকদের নেতৃত্বেও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলছে। মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছেও আধা সরকারী পত্র দেয়া হয়েছে।
×