ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-মঈন দুই অলরাউন্ডারের লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

সাকিব-মঈন দুই অলরাউন্ডারের লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই দলের দুই স্পিন অলরাউন্ডার তারা। একজন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আরেকজন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার মঈন আলী। এ দুই অলরাউন্ডারের মধ্যেও বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে জমজমাট লড়াই দেখা যাবে। কে জিতবে সেই লড়াইয়ে? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট জিতবে। সেই আশা কেউ করছে বলে মনে হয় না। তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চাহিদাতো একেক ক্রিকেটার থেকে যে কেউ করতে পারে। সেই চাহিদা পূরণও করতে পারেন ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা যেমন সাকিবের কাছ থেকে বিশেষ কোন নৈপুণ্য দেখার আশাতেই আছেন। ঠিক তেমনি ইংলিশ সমর্থকরাও মঈনের দিকে তাকিয়ে আছেন। সাকিব এখন বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার তালিকায় দুই নম্বরে আছেন। প্রথম স্থানে থাকা ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বিনের রেটিং পয়েন্ট যেখানে ৪৫১, সেখানে সাকিবের রেটিং পয়েন্ট ৩৮৪। তার পরের অবস্থানটিতেই আছেন মঈন আলী। তার রেটিং পয়েন্ট ২৯২। তার মানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সাকিব ‘বিশেষ’ কোন নৈপুণ্য দেখালেও অশ্বিনকে পেছনে ফেলতে পারবেন না। একই অবস্থা মঈনের বেলাতেও। তিনি চাইলেও সাকিবকে পেছনে ফেলতে পারবেন না। অশ্বিনতো বহুদূরের ব্যাপার! তবে দুইজনই পারেন, সিরিজে নিজ দলকে ভাল অবস্থানে নিতে। সাকিব যেখানে ২০০৭ সাল থেকে ৪২ টেস্ট খেলেছেন। মঈনের সেখানে সাকিবের চেয়েও ৭ বছর পর টেস্ট অভিষেক হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকেই ৩০ টেস্ট খেলে ফেলেছেন। সাকিব ৭৮ ইনিংসে ৩৯.৭৬ গড়ে ৩ শতকসহ ২৮২৩ রান করেছেন। আর মঈন ৪৯ ইনিংস ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েই ৩ শতকসহ ৩৪.৬১ গড়ে ১৪৫৪ রান করেছেন। উইকেট সংখ্যাতেও সাকিব বহু এগিয়ে। ১৪৭ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। সেখানে মঈনের উইকেট শিকার সংখ্যা ৭৭। সাকিব ১৪বার ৫ উইকেট বা তার বেশি উইকেট শিকার করেন। সেখানে মঈনের ভা-ারে মাত্র ১টি ৫ উইকেট শিকার রয়েছে। ক্যারিয়ারে বোলিং-ব্যাটিং দুইদিকেই মঈনের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাকিব। বেশি ম্যাচ খেলে ব্যাটিংয়ে গড় বেশি। আবার উইকেট শিকারের সংখ্যায়তো অনেক বেশি! অবশ্য দুইজনের মধ্যে নৈপুণ্যের পার্থক্য একটি জায়গাতেই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। সাকিব ১৪ মাস আগে টেস্ট খেলেছেন। আর মঈন এ বছর আগস্টেই, দুই মাস আগে সর্বশেষ টেস্টটি খেলেছেন। টেস্ট খেলার মেজাজ তাই সাকিবের চেয়ে ভালই জানা আছে মঈনের। সর্বশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবার শতকও করেছেন মঈন! পাকিস্তানের বিপক্ষে ওভালে শতক করার আগের ম্যাচেই টানা দুই ইনিংসে অর্ধশতক করেছেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে টানা তিন ইনিংসে ৫০ রানের বেশি করেছেন। আবার ২ উইকেট করেও নিয়েছেন। এ দুই ম্যাচের আগের ম্যাচটিতে আবার দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেটও (২ ও ৩ উইকেট) শিকার করেছেন। এবার প্রথমবারের মতো উপমহাদেশের মাটিতে খেলবেন মঈন। এমনকি বাংলাদেশের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলবেন। উপমহাদেশের উইকেটে স্পিন বল করাটা যে দুর্দান্ত ব্যাপার, তা ভাল করেই জানা আছে মঈনের। আর তাইতো বলেছেনও, ‘বাংলাদেশের কন্ডিশন আমার খেলার ধরনের সঙ্গে বেশি মানানসই বলে আমিও মনে করি, এখানে বড় ভূমিকা নিতে হবে। আশা করছি, আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারব। আমার দলের সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকাই রাখতে পারব। স্পিন ওখানে (বাংলাদেশে) বড় নিয়ামক।’ মঈন আশায় আছেন, বিশেষ কোন নৈপুণ্য করে দেখাবেন। কিন্তু উপমহাদেশের মাটিতে না খেললেও স্পিননির্ভর উইকেটের সঙ্গে মেলে এমন স্থানেই তিনটি ম্যাচ খেলেছেন মঈন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেই তিনটি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আহামরি কোন নৈপুণ্য ছিল না মঈনের। বোলিংটা ঠিকঠাক ছিল। ৩ ম্যাচে মোট ৯ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ৩৫ রানের বেশি কোন ইনিংসেই করতে পারেননি। তাই উপমহাদেশে মঈন ‘ফাটিয়ে’ দেবেন, এমনও মনে হচ্ছে না। সাকিবের কাছেতো উপমহাদেশের উইকেট ‘ডাল-ভাত’। নির্ধারিত ওভারের খেলার চেয়ে টেস্টে সাকিব আরও বিধ্বংসী! উপমহাদেশের মাটিতে ৩১টি টেস্ট খেলেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে তিনটি শতকের দুটিই উপমহাদেশের মাটিতে। গড়ও দারুণ ৪১.৩৭। ২১১০ রানও করেছেন। বল হাতে ১০৪ উইকেট নিয়েছেন। তবে উপমহাদেশের মাটি বলতে ২০০৭ সালে কলম্বো টেস্টটি ছাড়া সবকটি ম্যাচ দেশের মাটিতেই খেলেছেন। তাতে বোঝাও যাচ্ছে, দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর সাকিব! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচ খেলেছেন। সবকটি ২০১০ সালে। দুটি দেশের মাটিতে। দুটি ইংল্যান্ডের মাটিতে। ব্যাটিংয়ে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৬ রান করা ছাড়া আর কোন ইনিংসেই অর্ধশতক করতে পারেননি। বোলিংয়ে প্রতিবারই ঝলক দেখিয়েছেন। দুটি ম্যাচে ৫ উইকেট করে নিয়েছেন। আর একটি ম্যাচে চার উইকেট, আরেকটি ম্যাচে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট যে হয়েছে, তাতে মোট ৯ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। তার মানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় আছেন সাকিব। এখন দেখা যাক, সাকিব-মঈন লড়াইয়ে কে জয়ী হন।
×