ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মঘাতী সেলফি!

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

আত্মঘাতী সেলফি!

বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে সংযত ও সঠিকভাবে সচেতনতার সঙ্গে প্রয়োগ বা ব্যবহার না করলে সেটি যে অভিশাপ হয়ে উঠতে পারেÑ সেকথা আমরা মনে রাখি না। মোবাইল ফোন জীবনযাপনে অত্যন্ত দরকারি বস্তু হয়ে উঠেছে, এটির ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু এটি ব্যবহার করতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে অনেকের জীবননাশের ঘটনাও ঘটেছে। রবিবার সকালে চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে তিন শিশু। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর রেলক্রসিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। দেখা যাচ্ছে রেলপথে মৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে মুঠোফোনে কথা বলা। মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রেলপথ পার হতে গিয়ে মানুষজন ট্রেনে কাটা পড়ছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেলওয়ের একটি থানা এলাকায় চলতি বছরের ৯ মাসে ২৩০টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জন মারা যান মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রেলপথ পার হওয়ার সময়। এসব দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তাদের বেশির ভাগই কম বয়সী ছেলেমেয়ে। কানে মুঠোফোন থাকায় অনেক সময় দ্রুতগতির ট্রেনের শব্দ শোনা যায় না। কেউ ডাক দিলেও শোনে না। তাই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে অনেকে। আবার কেউ কেউ প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছেন। গণমাধ্যমে এসব খবর প্রকাশিত হলেও লোকজনের সতর্কতা বাড়ছে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্রসিং ফেলার পরও দেখা যায়, কেউ হেঁটে, কেউ দৌড়ে, কেউবা মোটরসাইকেলে করে রেলপথ পার হচ্ছেন। ইউরোপের সড়কে সড়কে মোবাইল কিংবা কিন্ডল (ই-বুক পড়ার ছোট ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র) হাতে নর-নারীদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। সেখানে সড়ক প্রশস্ত, পথচারীর সংখ্যাও কম। তাই ঠোকাঠুকিও লাগে না। তবে তারা এতে অভ্যস্ত ও সচেতন বলেই সেখানে কোন দুর্ঘটনার সংবাদও শোনা যায় না। বিশেষ করে রেললাইনে মানুষের প্রবেশাধিকার না থাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা পড়ার আশঙ্কাও নেই। আমাদের নজর এড়ায় না যে, পথ চলতে চলতে বা এমনকি রাস্তা পার হওয়ার সময়ও অনেকে মুঠোফোনে কথা বলেন বা খুদে বার্তা পাঠান। অনেকে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করেন, ফেসবুক দেখেন। অনেকে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালাতে চালাতেই মুঠোফোনে কথা বলেন। এগুলো যেমন নিজের জন্য খুব বিপজ্জনক, তেমনি অন্যদের জন্যও। একটুখানি অসতর্কতাই প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে- সেকথা যেন কেউ গ্রাহ্যই করে না। মনে রাখা চাই, মানুষ পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে একসঙ্গে দুটি কাজ করতে পারে না। তাই ফোনে কথা বলার সময় তার অন্যকিছু খেয়াল থাকে না। আবার তরুণদের অনেকেরই মুঠোফোনে আসক্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে মুঠোফোনের ব্যবহার অপব্যবহারের পর্যায়ে চলে গেছে। শুধু রেললাইনে নয় বাসে ওঠার সময়, বাস থেকে নামার সময়, রাস্তা পারাপারের সময় কিছু মানুষ এমনভাবে মোবাইলে কথা বলায় মগ্ন থাকে যে, মনে হয় লোকটি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাটি সেরে নিচ্ছে! মোবাইল ফোনের কারণে অপমৃত্যু এড়াতে ব্যবহারকারীর সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। যারা সচেতন নয়, তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে রেললাইনজুড়ে ও সংলগ্ন এলাকায় সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন ফলক টাঙ্গানো হলে কিছুটা উপকার হয়ত মিলবে। তবে রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে।
×