ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

সময়ের নক্ষত্র সালমান আমিন খান...

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

সময়ের নক্ষত্র সালমান আমিন খান...

১১ অক্টোবর ১৯৭৭ লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষক, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং ‘খান একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা সালমান আমিন খান। সালমান খানের দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। তাঁর বাবা ডাঃ ফখরুল আমিন খান চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর দাদা আবদুল ওয়াহাব খান ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পীকার (১৯৫৫-৫৮)। সালমানের বাবা অভিবাসী হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। খান একাডেমি একটি উন্মুক্ত অনলাইনভিত্তিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। নিজ বাসার ছোট অফিস থেকে যাত্রা শুরু করা, এই শিক্ষাবিদ প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়, বিশেষত গণিত ও বিজ্ঞানের উপর কয়েক হাজার ভিডিও তৈরি করেছেন। কযধহ অপধফবসু একটি অনলাইনভিত্তিক অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘চৎড়ারফরহম ধ ঐরময ছঁধষরঃু ঊফঁপধঃরড়হ ঃড় অহুড়হব, অহুযিবৎব’ সেøাগানে এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালে এই খান একাডেমির জন্ম। আর ইউটিউবে এর জন্মদিন অর্থাৎ ইউটিউবে এ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২০০৬ সালের ১৬ নবেম্বর। এখানে গধঃযবসধঃরপং, ঐরংঃড়ৎু, ঐবধষঃযপধৎব ধহফ গবফরপরহব, ঋরহধহপব, চযুংরপং, ঈযবসরংঃৎু, ইরড়ষড়মু, অংঃৎড়হড়সু, ঊপড়হড়সরপং, ঈড়ংসড়ষড়মু, ঙৎমধহরপ ঈযবসরংঃৎু, অসবৎরপধহ ঈরারপং, অৎঃ যরংঃড়ৎু, গরপৎড়বপড়হড়সরপং এবং ঈড়সঢ়ঁঃবৎ ংপরবহপব. এই সবই আপনি শিখতে পারবেন বিনামূল্যে (ফ্রিতে) খান একাডেমি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিন হাজারের বেশি ভিডিও লেকচার, টিউটোরিয়াল তৈরি করেছে। ২০১২ সালে মার্কিন পত্রিকা টাইমের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির বার্ষিক তালিকার একটি উল্লেখযোগ্য নাম খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান আমিন খান। এ শিক্ষাবিদ নিজ বাসার ছোট অফিস থেকে যাত্রা শুরু করেন, বিস্তৃত ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো, বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞানের ওপর ৬ হাজার ৫০০-এর বেশি ভিডিও তৈরি করেছেন। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত, ইউটিউবে খান একাডেমির চ্যানেলটি ২ কোটি ৪১৫ লাখ ৪০৬-এর বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে এবং ভিডিওগুলো ৬৯৬ মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়। অসাধারণ সব পরিকল্পনা জনগণের কাছে আনার জন্য গুগল ঘোষণা করে ‘প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড’ নামে ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার। প্রতিষ্ঠানটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৮ সালে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশ থেকে জমা পড়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার আবেদন। দুই বছরের যাচাই-বাছাই শেষে প্রথমে ১৬টি পরিকল্পনা নির্বাচন ও তার তালিকা তৈরি করে গুগল। পরে চূড়ান্তভাবে বেছে নেয়া হয় পাঁচটিকে। নির্বাচিত প্রকল্পগুলোকে আরও বিস্তৃত করার জন্য দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থসহায়তা। শিক্ষা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে সালমানের ‘খান একাডেমি’র বিনামূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটোরিয়াল। একাডেমিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার দিয়েছে গুগল। ২০১২ সালের জুনে ৮ জুন অনুষ্ঠিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ১৪৬তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সালমান। ৩৫ বছর বয়সী সালমান খানই এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা। ২০১২ সালের মে মাসে রাইস ইউনিভার্সিটিতেও সমাবর্তন বক্তা ছিলেন সালমান। ২০১০ সালে সালমান মাইক্রোসফট টেক এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। সালমানের পথচলা শুরু“হয় ২০০৪ সালের দিকে বিয়ের পর বোস্টনে স্থায়ী হন সালমান। এ সময় পরিবার নিয়ে এ শহরে আসেন সালমানের মামা। তখনই জানা যায়, তাঁর মামাতো বোন নাদিয়া অঙ্কে খুব কাঁচা। অঙ্ক কষে সময় নষ্ট করার চেয়ে অন্য কাজে সময় ব্যয় করতেই ভাল লাগে তার। নাদিয়ার সঙ্গে কথা বলে সালমান বুঝতে পারে, পাঠদানের বিষয়টি আনন্দদায়ক নয় বলেই পডতে ভাললাগে না বোনের। তখন বোনকে পড়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে অঙ্কের প্রতি আগ্রহী করে তোলে নাদিয়াকে। বোনটিও তাই অবশেষে সবকিছু ভুলে আঁটঘাট বেঁধে শুরু“করে পড়াশোনা। দূরে থাকার কারণে টেলিফোন ও ইয়াহু ডুডল সার্ভিস্টির মাধ্যমে চলে পাঠদান। সফলতা আসে অল্পসময়েই। বিদ্যালয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাল ফলাফল করে নাদিয়া। নাদিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুই ভাই আরমান ও আলীকেও পড়ানো শুরু“করে সালমান। পুরো ব্যাপারটা হয়ে যায় নেশার মতো। শিক্ষক হিসেবে এ নতুন কাজটা ভাল লাগে তাঁর। তবে সময় নিয়ে যত সব মুশকিল তিনি। চাকরি শেষে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন আবার নাদিয়া ও তার ভাইয়েরা ব্যস্ত থাকে খেলাধুলা কিংবা পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে। তাদের সঙ্গে সময় মেলানোটাই কঠিন। ভেবে ভেবে কিছুদিন পর এর সমাধান বের করে ফেলেন সালমান। গণিতের সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে ভিডিও তৈরি করে তা দিয়ে দেন ইউটিউবে। এর ফলে নাদিয়া ও তার দুই ভাই বাড়িতে বসে সহজেই পেয়ে যায় গণিতের কঠিন সব সমস্যার সমাধান। পাঠদানের এ নতুন পদ্ধতিই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে সালমানের দায়িত্বও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ভিডিওগুলো আরও উন্নত করার জন্য তিনি শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। গণিতের পাশাপাশি জীববিদ্যা, অর্থনীতি, রসায়ন, ইতিহাস, আরও নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন। খান একাডেমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট : িি.িকযধহঅপধফবসু.ড়ৎম খান একাডেমির ইউটিউব এ্যাকাউন্ট : িি.িণড়ঁঞঁনব.পড়স/কযধহঅপধফবসু ও িি.িণড়ঁঞঁনব.পড়স/কযধহঅপধফবসুইধহমষধ ফেসবুকে খান একাডেমি : িি.িঋধপবনড়ড়শ.পড়স/শযধহঅপধফবসু
×