ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

চির তারুণ্যের প্রতীক বব ডিলান

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

চির তারুণ্যের প্রতীক বব ডিলান

২০০৪ সালে এক সাক্ষাতকারে ডিলান বলেন, ‘আমার জন্ম আসলে ভুল নামে ভুল মা-বাবার ঘরে। এমনই হয়। কাজেই তুমি তোমাকে যে কোন নামে ডাকতে পার, আমেরিকা মুক্ত মানুষের ভূখণ্ড।’ এমনই অনেকটা ক্ষ্যাপা মানুষ বব ডিলান। ১৯৬৩ সালে ডিলান অন্য পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শুধু লোকগান কিংবা উন্মাতাল রক গানের শিল্পী নন, তিনি হয়ে ওঠেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও। তৃতীয় এ্যালবাম দ্য টাইমস দে আর আ চেঞ্জিং-এ ডিলান পুরোপুরি হাজির হন এক রাজনীতি সচেতন, কিন্তু নৈরাশ্যবাদী গায়ক হিসেবে। এ সময় ডিলানের রচিত সব গানে স্থান করে নেয় সমসাময়িক বিষয়াবলি, ব্যক্তিগত গল্প এবং সমাজের নানা অসংগতি। ‘ওনলি আ পন ইন দেয়ার গেম’ গানের বিষয়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী মেডগার ইভস, ‘দ্য লোনসাম ডেথ অব হেটি ক্যারল’ গানে প্রতিবাদী ডিলান স্মরণ করেন শ্বেতাঙ্গ উইলিয়াম জান্টিঙ্গারের হাতে নিহত হোটেলকর্মী কৃষ্ণাঙ্গী হেটি ক্যারলকে। ‘ব্যালাড অব হোলি ব্রাউন আর নর্থ কান্ট্রি ব্লুজ’-এ ডিলান প্রতিবাদী হন খনিশ্রমিক আর কৃষিজীবীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তাঁর অতি ব্যক্তিগত প্রেমের গানেও এ সময় দ্রোহ, রাজনীতি থেকে মুক্ত ছিল না: ‘বুটস অব স্প্যানিশ লেদার’ এবং ‘ওয়ান টু ম্যানি মর্নিংস।’ ডিলানের গানের কথা ছিল মূলত রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব সংবলিত। যাতে প্রভাবিত হয়েছেন সারা বিশ্বের কবি ও গীতিকাররা। তাঁর বিখ্যাত এই গানটির কয়েকটা লাইনের মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। ‘ঐড়ি সধহু ৎড়ধফং সড়ংঃ ধ সধহ ধিষশ ফড়হি ইবভড়ৎব ুড়ঁ পধষষ যরস ধ সধহ? ঐড়ি সধহু ংবধং সঁংঃ ধ যিরঃব ফড়াব ংধরষ ইবভড়ৎব ংযব ংষববঢ়ং রহ ঃযব ংধহফ?’ বব ডিলান আমাদের হৃদয়েও বিশেষভাবে স্থান করে আছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে তার সহমর্মী অবদানের জন্য। জর্জ হ্যারিসন, জোয়ান বায়েজ আর বব ডিলান-এই নামগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।’ এই কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন ‘বাংলা দেশ’ গান লিখে ও গেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন। অন্যদিকে এই অনুষ্ঠানে বব ডিলানের উপস্থিতি কনসাটের্র গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল বহু গুণে। কনসার্ট ফর বাংলাদেশে বব ডিলান তাঁর বিখ্যাত ‘ব্লোইং ফর দ্য উইন্ড’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন। বিট কবি এ্যালেন গিনসবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘যশোর রোড’কেও গানে রূপান্তরের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বব ডিলান। ৭৫ বছর বয়সী ডিলানের সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে আবির্ভাব ঘটে ১৯৫৯ সালে। মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউসে গাইতেন তিনি। তাঁর ‘ব্লোইন ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ড রেইন’স এ-গোনা ফল’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ গানগুলো দ্রোহ ও স্বাধীনতার ভাব বহন করে। এই গানগুলো যুদ্ধবিরোধী ও নাগরিক আন্দোলনের অনেক সংগঠন মর্ম সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করে। ডিলান প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সঙ্গীত জগতে সক্রিয় আছেন। এখনও তিনি গান লেখেন ও সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নেন। প্রখ্যাত মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সুইডিশ একাডেমিতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবে, বব ডিলান তাঁর যেসব গীতি কবিতার জন্য নোবেল পেয়েছেন, সেগুলো তাঁর বেশ আগের সৃষ্টি। বব ডিলান আমেরিকার ২৫৯তম নাগরিক যিনি এই পুরস্কার লাভ করলেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৩তম লেখক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন রয়্যাল সুইডিশ এ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার। উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে সম্মানিত করেছেন সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘প্রেসিডেন্টসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় বব ডিলানের দীর্ঘদিনের সহচর, জোয়ান বায়েজ গিটার হাতে ২৫ মাচর্, ১৯৭১ সালে গেয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গান। ১৯৮৪ সালে বব ডিলানের বিখ্যাত ইউরোপ সফরেও জোয়ান ছিলেন অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী। এই সফরে তাঁরা গান বিখ্যাত ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’ ও ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গান দুটো। বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় বব ডিলানের সঙ্গীতের শুরু বিচিত্রভাবে।
×