ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কূটনীতিকরা নিরাপত্তা নিয়ে ভীত নন ॥ ইইউ রাষ্ট্রদূত

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

কূটনীতিকরা নিরাপত্তা নিয়ে ভীত নন ॥ ইইউ রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের আলোচনা হবে। আগামী ডিসেম্ব^রে ব্রাসেলসে ইইউ কমিশনের উপ-কমিটির সভায় এ আলোচনা হবে। এছাড়া শুধুমাত্র কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তা নিয়ে না ভেবে সারাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। নিরাপত্তা নিয়ে বর্তমানে তারা ভীত না হলেও সতর্ক রয়েছেন বলে জানান তিনি। সোমবার রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ‘ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ডিক্যাব সভাপতি আঙুর নাহার মন্টির সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের বক্তব্যে যে দু’টি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নও সে দু’টি চ্যালেঞ্জকে মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করেই বাংলাদেশের সঙ্গে ধারাবাহিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ওই দু’টি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কাজের সম্পর্ক নিবিড় এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র ক্রমশ সম্প্রারিত হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সফর অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে যেমন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব ভিত্তিকে কাজ করে তেমনি চীনের সঙ্গেও কাজ করে। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ক্ষেত্র আর ইইউর কাজের ক্ষেত্র এক নয়। ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে শিক্ষা, মানবাধিকার, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো বিষয় নিয়ে। আর চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে মূলত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিদ্যুত-জ্বালানিসহ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় রয়েছে এমন খাতগুলো নিয়ে। ফলে দুই ক্ষেত্রে সম্পর্কের ধরন এবং কাজের ক্ষেত্রও আলাদা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তারা সতর্ক রয়েছেন। তিনি বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর কূটনৈতিক জোনে সরকার যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে তা সন্তোষজনক। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল এসেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করেছেন, এসব ঘটনা অবশ্যই নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নকেই তুলে ধরে। কিন্তু শুধুমাত্র কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তাই শেষ কথা নয়। পুরো দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে। মানুষের নির্ভয়ে বাধাহীন চলাচল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও নিরাপত্তা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবেই বিবেচনা করে ইইউ। বিশেষ করে সরকার সর্বশেষ বিদেশী সহায়তা সংক্রান্ত যে বিল পাস করেছে তা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ইইউ এর আগে যেসব সুপারিশ দিয়েছিল, তা বিলটি চূড়ান্ত ভাবে গ্রহণের সময় বাদ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইইউ উদ্বিগ্ন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আরও প্রায় দু’বছরের বেশি সময় বাকি। আবার এটাকে খুব বেশি দূরও বলা যাবে না। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে ইইউ-বাংলাদেশ কমিশনের আলোচনা হবে। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে আগামী ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে কমিশনের উপ-কমিটির সভায় আলোচনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মায়াদুন আরও বলেন, গণভোটের মাধ্যমে ইংল্যান্ড ইইউ থেকে বের হয়ে গেলেও এখনও ইংল্যান্ড ইইউয়ের সঙ্গেই আছে। আগামী কিছুদিন পর ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তবে ইইউয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বিষয়টি প্রভাব ফেলবে না। সার্ক, বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতার জোটগুলোকে ইইউ সব সময় ইতিবাচক মনে করে এবং উৎসাহ দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
×