ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও কয়েকটি হত্যাকা-ের সঙ্গে সে জড়িত ॥ স্বীকারোক্তি

কোপানোর পর গুলি করে নাজিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে রশিদুন নবী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

কোপানোর পর গুলি করে নাজিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে রশিদুন নবী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জঙ্গী হামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যার অপারেশনাল কমান্ডার ও সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া একজন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ রশিদুন নবী ভূঁইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান মূলত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তিন মাস আগে নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে আনসার আল ইসলাম। মূল পরিকল্পনা হয় সিলেট থেকে। গ্রেফতারকৃত রশিদুন নবী আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গী সংগঠনের হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছিল। গ্রেফতারকৃত রশিদুন নবী নাজিম হত্যা ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনার প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিন জনকে হত্যাচেষ্টা এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকা-ের সঙ্গেও জড়িত। নিহত নাজিম বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিল। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অপারেশনাল কমান্ডার গ্রেফতার ॥ রবিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এবং গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ব্লগার নাজিম হত্যার অন্যতম আসামি রশিদুন নবীকে গ্রেফতার করে। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, রশিদুন নবী আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। সে ২০১৫ সালে সংগঠনটিতে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই ঢাকা অঞ্চলের অনেক সদস্যকে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে। দাওয়াতী কাজের পাশাপাশি সে টিমের অপারেশন শাখার দায়িত্ব পালন করত। তিন মাস আগে সংগঠনটি নাজিমকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। জঙ্গী সংগঠনটি মোঃ রশিদুন নবীকে ব্লগার নাজিমকে হত্যার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মোতাবেক কাজ শুরু করে রশিদুন নবী। রশিদুন নবীর নেতৃত্বে পাঁচ জঙ্গী ঘটনার কয়েকদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে একটি বাসা ভাড়া করে। জঙ্গীরা সামাদের যাতায়াতের ওপর নজর রাখছিল। কারণ নাজিম যে মেসে থাকত সেখানে গিয়ে হত্যা করা কঠিন ছিল। এ কারণে জঙ্গীরা নাজিমকে যাতায়াতের পথে সুযোগমতো কোন জায়গায় হত্যার পরিকল্পনা করে। বেশ কয়েকদিন জঙ্গীরা নাজিমকে অনুসরণ করে। সুযোগ পেয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রাতে হামলা চালিয়ে নাজিমকে হত্যা করে পাঁচ জঙ্গী। মনিরুল ইসলাম আরও জানান, রশিদুন নবী হত্যাকা-ের বিষয়টি স্বীকার করেছে। দু’জন সামাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। তাদের মধ্যে একজন রশিদুন নবী নিজেই। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া পাঁচজনের কাছেই চাপাতি ছিল। একজনের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সে গুলি করে নাজিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। রশিদুন নবী নাজিম হত্যা ছাড়াও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনায় তিনজনকে হত্যাচেষ্টা ও কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকা-েও জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই স্বীকার করেছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল (৫০), লেখক এবং ব্লগার প্রকৌশলী তারেক রহিম (৪২) ও রন দীপম বসুকে (৪০) হত্যাচেষ্টা করে জঙ্গীরা। একই দিন একই সময়ে রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে (৪০) গলা কেঁটে হত্যা করে জঙ্গীরা। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর নাজিম জঙ্গীদের প্রাথমিক টার্গেটে পরিণত হয়। নাজিম গণজাগরণ মঞ্চের হয়ে ব্যাপক কর্মকাণ্ড শুরু করলে সে চূড়ান্ত হামলার টার্গেটে পড়ে। নাজিমকে হত্যার পরিকল্পনা হয় মূলত সিলেটেই। তাকে সিলেটেই হত্যার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের। কিন্তু নানা কারণে সে পরিকল্পনা থেকে সরে যায় জঙ্গীরা। বিশেষ করে নাজিম সিলেট ছেড়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর, নাজিম যে তাদের টার্গেটে পড়েছে সেটি বুঝতে পারে জঙ্গীরা। এজন্য পরিকল্পনা এবং কৌশল পাল্টায়। এরপর মাসখানেক নাজিমকে তারা শুধু পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। নাজিম ঢাকায় মেস ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে মাস তিনেক আগে তাকে চূড়ান্তভাবে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় জঙ্গীরা নাজিম হত্যার অপারেশনাল কর্মকাণ্ড শুরু করে। অপারেশনাল কর্মকা-ের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে রশিদুন নবী।
×