ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় কিমের ঘোষণা ;###;বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা ৫০ ভাগ বাড়ছে ;###;পদ্মা সেতুর অর্থ অন্য প্রকল্পে দেয়া হচ্ছে

বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দিলেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দিলেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য বিমোচনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এক ‘অভাবনীয়’ সাফল্য পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের জন্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত ঋণ সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শিশু পুষ্টি, নারীর কর্মসংস্থান, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ সহায়তার এই অর্থ ব্যয় করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জিম ইয়ং কিম বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এখন তা ৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে আছে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এদিকে, বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তার এই ঢাকা সফর দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের আনুষ্ঠানিক ‘স্বীকৃতি’। তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে জানান, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ওই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য জয়ে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি আসবে। আর বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে ইতোপূর্বে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে তিক্ত স্মৃতি রয়েছে তা মুছে দেবে কিমের এই সফর। শুধু তাই নয়, তার এই সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার দুয়ার আরও প্রসারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। সোমবার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। ওই বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। বিশ্বব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিম ঢাকায় আসেন রবিবার বিকেলে। আর সোমবার সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে তার কর্মসূচী শুরু হয়। প্রায় চল্লিশ মিনিটের বৈঠকে কিমের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার এবং ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে মুহিতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এদিকে, বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দেশে ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের মূলধনও প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে অন্যান্য দেশের ন্যায় আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তাও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে। এর বাইরে শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বিশ্বব্যাংক তিন বছরের প্যাকেজে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বাংলাদেশকে স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে থাকে। এর আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। গত ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইডিএ’র আওতায় চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯৪৪ মিলিয়ন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। পুরো প্যাকেজের প্রতিশ্রুতির মধ্যে মোট কী পরিমাণ পাওয়া গেল, তা হিসাব করা যাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বর্তমানে আইডিএ প্যাকেজের মেয়াদপূর্তির পর। জিম ইয়ং কিম জানান, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গেই আছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও ইতোমধ্যে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সত্যিই বাংলাদেশ সারা বিশ্বে এক অকল্পনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। আর সেটি সেলিব্রেট করতে আমি বাংলাদেশে এসেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের জন্যই এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা হবে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার অন্যতম ফোকাস। তিনি আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নারী কর্মসংস্থানের বিষয়টিতে বাংলাদেশকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছে এটা বিশ্বব্যাংক কিভাবে নিয়েছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকে প্রেসিডেন্ট বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের যে অর্থায়ন করার কথা ছিল সেই টাকা এখন অন্য প্রকল্পে দেয়া হচ্ছে। ওই সময় যখন এটা নিয়ে আলোচনা চলছিল তখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে দেয় সরকার। তবে পদ্মা সেতুতে না থাকলেও বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংক বরাবরই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যোগাযোগসহ সব খাতেই বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে যে তহবিল বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা ছিল, তারা অন্যান্য প্রকল্পে সেটি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে জটিলতা ছিল, তা কেটে গেছে। এখন বিশ্ব ব্যাংক দেশের বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় সরকারের এ খাতে অনেক টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে দেশের অন্যান্য প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে কিছুটা চাপ তৈরি হলেও বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মায় বিশ্বব্যাংকের টাকা না এলেও অন্যান্য প্রকল্পে এই সংস্থাটির টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ঋণ সহায়তা প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিেেয়ছে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আশা করছি তারা সে প্রত্যাশা পূরণ করবে।
×